হেলিকপ্টারে করে মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি পাঠালেন ট্রাফিক কনস্টেবল

হেলিকপ্টারে নববধূ নুসরাত জাহান

মেয়ের শখ জামাইসহ আকাশে উড়তে উড়তে যাবেন শ্বশুরবাড়ি। আড়াই লাখ টাকা খরচ করে হেলিকপ্টার ভাড়া করে একমাত্র মেয়ের আবদার পূরণ করলেন চট্টগ্রামে চাকরিচ্যুত ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল মো. মহিবুল্লাহ। মেয়ের বিয়েতে এমন জমকালো আয়োজন নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। প্রশ্ন উঠেছে, চাকরিচ্যুত একজন ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল এত টাকার মালিক হলেন কীভাবে?

পরিবারের সূত্রে জানা যায়, মহিবুল্লাহর মেয়ের নাম নুসরাত জাহান। তিনি চট্টগ্রাম নগরীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। আর তাঁর বিয়ে হয় নগরীর এনায়েত বাজার এলাকার ব্যবসায়ী সেলিম মিয়ার ছেলে ইরফান তাজুয়া অভির সঙ্গে। বর ইরফান নিজেও ব্যবসায়ী।

আরও পড়ুন: ইবির শেখ হাসিনা হলের সিসিটিভিতে ১৯৭০ সালের ফুটেজ

গতকাল শনিবার মহিবুল্লাহর মেয়ের বিয়ে অনুষ্ঠান হয় কাজীর দেউড়ির একটি কমিউনিটি সেন্টারে। সেখানে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বেলা ৪টা নাগাদ আবার আউটার স্টেডিয়ামে থাকা হেলিকপ্টারে চড়েন নববধূ নুসরাত ও বর ইরফান। নতুন দম্পতি হেলিকপ্টারে চেপে আকাশে ঘুরে বেড়ান। এরপর আবার আউটার স্টেডিয়ামে হেলিকপ্টারটি অবতরণ করে। পরে নুসরাত জাহানকে প্রাইভেটকারে করে কাজীর দেউড়ি শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মহিবুল্লাহর নিজ বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায়। বর্তমানে নগরের খুলশী থানাধীন লালখান বাজার এলাকায় একটি ফ্ল্যাট কিনে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। গত বছর ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল মহিবুল্লাহর বিরুদ্ধে নবী হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে মামলার ভয় দেখিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ ওঠে। পরে পাহাড়তলী থানায় ভুক্তভোগীর করা মামলায় গ্রেপ্তার হন তিনি। এ ঘটনায় প্রথম সাময়িক বরখাস্ত, পরে তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় চাকরিচ্যুত হন। ওই সময় মহিবুল্লাহ সিএমপি ট্রাফিক বিভাগে পশ্চিম জোনে কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

একাধিক সূত্র জানায়, চাকরিকালীন বিভিন্ন অপরাধে কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন মহিবুল্লাহর। বিপুল অর্থ সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। তাঁকে অনেকেই হেলিকপ্টার ভাড়া করে কিশোরগঞ্জ বাড়িতে যেতে দেখেছেন। তিনি ঢাকায় আসা-যাওয়া করেন প্লেনে। এ ছাড়া বর্তমানে আরএফ হোল্ডিংস লিমিটেড নামে একটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের পরিচালকসহ আরও কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। গতকাল তাঁর সঙ্গে কথা হলে তিনি নিজেই এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক বলে দাবি করেন।

আরও পড়ুন: ফের বেপরোয়া ছাত্রলীগ, অপরাধীদের শাস্তি কেবল বহিস্কার

তবে আজ রোববার সন্ধ্যায় ফোনকল করে তিনি বলেন, ‘পুলিশে চাকরিকালীন আমার জিপিএফ ফান্ড থেকে জমাকৃত টাকা উত্তোলন করে ১১ লাখ টাকা মেয়ের বিয়েতে খরচ করেছি। আমার নামে যদি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ থেকে থাকে তাহলে সেটা তদন্ত করার জন্য আলাদা সংস্থা রয়েছে।’

মহিবুল্লার ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপকমিশনার (সদর) মো. আব্দুল ওয়ারিশ সাংবাদিকদের বলেন, ‘পাহাড়তলী থানায় হওয়া মামলায় বিভাগীয় তদন্তে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।’