ঢাবিতে দর্শন বিভাগের শতবর্ষ উদযাপন

ঢাবি দর্শন বিভাগের শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে মিলনমেলা

কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির বলেছেন, আমরা বিজ্ঞানের মত কিছু উদ্ভাবন করতে পারি না কিন্তু সে গুলো মেরামত করতে পারি। একজন অনেক বড় বিজ্ঞানী হয়েও যদি তার নৈতিকতা ঠিক না থাকে, নৈতিক অবক্ষয় ঘটে তাহলে তার থেকে কেউ ভাল কিছু পাবে না।

আজ শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে মিলনমেলার অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শতবর্ষ পূরণ উপলক্ষে নবীন প্রবীণদের মিলনমেলা ছিল আজ। ২০২১ সালে পহেলা জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ১০০ বছর পূর্ণ হলেও করোনা মহামারিতে শতবর্ষ উদযাপন করতে পারেনি বিভাগটি। আজ ২৫ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে অনুষ্ঠানটির মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করা হয়।

আরও পড়ুন: ৩৩ বছরে পা রাখল খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

দর্শন বিভাগের শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির বলেন, আমি এখানে দাঁড়িয়েছি ডিন হিসাবে নয় বরং দর্শনের ছাত্র হিসাবে। তিনি আরও বলেন, কলা অনুষদের ৮ টি বিভাগের মধ্যে দর্শন ছিল একটি। এই মিলন মেলা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ইতিহাস। অনেক ডিপার্টমেন্ট শতবর্ষের পুরাতন হলেও এমন অনুষ্ঠান করতে পারেনি। দর্শন বিভাগের প্রাক্তন এবং নবীন শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্পর্ক বেশি হওয়ায় তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ইতিহাস গড়তে পারছেন।

বর্তমান প্রজন্মের নৈতিক অবক্ষয় নিয়ে তিনি বলেন, তাদের উচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন এবং বর্তমান শিক্ষকদের জীবন অনুস্মরণ করা। তিনি আরও বলেন, আমরা বিজ্ঞানের মত কিছু উদ্ভাবন করতে পারি না কিন্তু সে গুলো মেরামত করতে পারি। একজন অনেক বড় বিজ্ঞানী হয়েও যদি তার নৈতিকতা ঠিক না থাকে, নৈতিক অবক্ষয় ঘটে তাহলে তার থেকে কেউ ভাল কিছু পাবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে তিনি বলেন, উপমহাদেশের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম যেখানে হল ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হয়। এখানে শিক্ষার্থীরা হলে থাকবে, বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষার্থীরা এসে থাকবে, বিভিন্ন সংস্কৃতির সংমিশ্রণ ঘটবে।

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড.এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, একটা জাতি রাষ্ট্রের ফিলোসফিকাল থট গড়ে ওঠতে দর্শন বিভাগ বিশেষ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশের মানুষের মনস্তাত্ত্বিক বিকাশে কাজ করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলসফি বিভাগ। বিশ্বের প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ফিলসফি পড়ানো হয়। প্রতিটা জাতীর উত্থানের ক্ষেত্রে যারা বেশি ভূমিকা রেখেছিল তারা হল পলিটিক্যান ফিলোসফার।

তিনি আরও বলেন, এখন আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে আছি। আমাদের সমাজ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর উপর নির্ভরশীল। প্রযুক্তির সাথে মানুষের মনস্তত্বের সংযম ঘটানোর অনেক সুযোগ এসেছে এবং অনেক পরিবর্তন এসেছে। ফিলসফির জায়গাটা আর্টিফিশিয়াল দখল করে নিছে। পঞ্চম যে শিল্প বিপ্লব আসছে তা বলছে যন্ত্র এবং মানুষের মনস্তত্ত্বের মধ্যে যে সম্পর্ক সেটা সম্পূর্ণ নয়। মানুষের মনস্তত্ত্ব ও যন্ত্রের ফিলসফির সন্নিবেশ না ঘটান গেলে আগামী পৃথিবী অচল হয়ে যাবে।

এ মিলন ঘটাতে গেলে উন্নত বিশ্বে তরুণদের সংখ্যা কমবে এবং এ জায়গাটা দখল করবে যন্ত্র ।  আমাদের বাংলাদেশের মত জন বহুল দেশ যেখানে তরুণদের আধিক্য রয়েছে সেখানে যন্ত্র ব্যবহার করলে তারা বেকার হয়ে পড়বে।

আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক দীর্ঘ দিন আগে লেখা বই পড়াবেন না। তিনি যে গবেষণা কাজ করছেন তা ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াবেন এবং তার গবেষণা নিয়ে ধারণা দিবেন। এ পাঠের সাথে সম্পর্কিত বইয়ের নাম ছাত্র-ছাত্রীদের বলে দিবেন। আধুনিক এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণা অনুসরণ করে অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজ সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় গুলো সফলতা পেয়েছে। করোনার সময় প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেশ সফলতা পেয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, আমরাও শতবর্ষে দাড়িয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা ট্রান্সফরমেশন এর কথা ভাবছি। এ ট্রান্সফরমেশনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে জ্ঞানের জগতে নিয়ে যাওয়া হবে।