চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

চিত্রশিল্পী এসএম সুলতান

আজ সোমবার (১০ অক্টোবর) বিশ্ববরেণ্য প্রখর চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯৪ সালের আজকের  দিনে চিরকুমার, অসাম্প্রদায়িক এ শিল্পী দীর্ঘদিন শ্বাসকষ্টে ভোগার পর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে এসএম সুলতান ফাউন্ডেশন, জেলা প্রশাসন, জেলা শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন।

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সোমবার (১০ অক্টোবর) সকালে চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে কোরআনখানি, দোয়া মাহফিল, শিল্পীর মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শিশুদের আর্টক্যাম্প, চিত্রকর্ম প্রদর্শনী, শিশুদের নিয়ে চিত্রানদীতে নৌকা ভ্রমণ, তথ্যচিত্র উপস্থাপন, শিশুদের নাট্য বিষয়ক কর্মশালা এবং বাউলগানের আসর। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানালেন সুলতান ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান মিকু।

দিনব্যাপী এসব অনুষ্ঠান শিশুস্বর্গ মিলনায়তন, নড়াইল শিল্পকলা একাডেমি অডিটরিয়াম এবং শিল্পী সুলতানের হাতে গড়া লাল বাউল সম্প্রদায় চত্বরে অনুষ্ঠিত হবে। এসব কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।

১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইল শহরের মাছিমদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান। রাজমিস্ত্রি পিতা মেছের আলীর নান্দনিক সৃষ্টির ঘঁষামাজার মধ্য দিয়ে ছোট বেলার লাল মিঞার (সুলতান) চিত্রাংকনে সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ হয়।

শিল্পী সুলতান যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ সফর করেন এবং এসব দেশে প্রখ্যাত চিত্রকরদের সাথে তার ছবি প্রদর্শিত হয়। ১৯৫৫-৫৬ সালের দিকে শিল্পী সুলতান মাটির টানে দেশে ফিরে আসেন এবং নিজস্ব উদ্যোগে জন্মস্থান নড়াইলের মাছিমদিয়ায় ফাইন আর্ট স্কুল ও ‘শিশুস্বর্গ’ নামে শিশু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।  

শিশু-কিশোরপ্রেমী সুলতান ১৯৮০ সালে নিজ বাড়িতে শুরু করেন শিশুস্বর্গের নির্মাণকাজ। তিনি নিজ উদ্যোগে ১৯৯২ সালে ৯ লাখ মতান্তরে ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রস্থের ‘ভ্রাম্যমাণ শিশুস্বর্গ’ নামে দ্বিতল নৌকা নির্মাণ করেছিলেন। এ নৌকায় তিনি শিশুদের নিয়ে চিত্রানদীতে ভ্রমণ করতেন এবং নৌকায় বসেই তাদের চিত্রাংকন শেখাতেন। সুলতানের শিল্পকর্মের বিষয়বস্তু ছিল বাংলার কৃষক, জেলে, তাঁতি কামার, কুমার, মাঠ, নদী, হাওর, বাঁওড়, জঙ্গল, সবুজ প্রান্তর ইত্যাদি।

আরও পড়ুন: গবিতে নেই কোন সাংস্কৃতিক মঞ্চ, এক কক্ষেই হয় সব অনুষ্ঠান।

শিল্পী সুলতানের ছবি ভারতের সিমলা, পাকিস্তানের লাহোর, করাচি, নিউইয়র্ক, বোস্টন, মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও জার্মান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ঢাকায় খ্যাতনামা বিভিন্ন চিত্রশিল্পীদের সঙ্গে যৌথভাবে প্রদর্শিত হয়।

চিত্রাংকনের পাশাপাশি বাঁশি বাজাতে পারতেন সুলতান। তার হাতে প্রায়ই বাঁশি দেখা যেত। পুষতেন সাপ, ভল্লুক, বানর, খরগোশ, মদনটাক, ময়না, গিনিপিক, মুনিয়া, ষাড়সহ বিভিন্ন পশু-পাখি। তিনি বাড়িতে একটি মিনি জ্যু প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। হিংস্র প্রাণিকেও তিনি বশে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন।

শিল্পী এস এম সুলতান ১৯৮২ সালে একুশে পদক, ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদক পান। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের রেসিডেন্ট আর্টিস্ট এবং ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সম্মাননা হিসেবেও স্বীকৃতি পান তিনি। সুলতানের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য তার নিজ বাড়িতে নির্মিত হয়েছে এস এম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা।