গত সপ্তাহে ঝর্ণা দেখতে যাওয়ার ছিল, মৃত্যুই কি টেনে নিল আজ!
সেপ্টেম্বরেই এসএসসি পরীক্ষা, তার আগে সিদ্ধান্ত সবাই মিলে খৈয়াছড়া ঝর্ণায় ঘুরতে যাবে। কিন্তু কথায় আছে- ‘ভাগ্যের লিখন না যায় খন্ডন‘। তাইতো এক সপ্তাহ আগের নির্ধারিত স্থানে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে যাওয়া হয় নি তাদের। আর এক সপ্তাহ পর আজ মৃত্যুই কি তাদের টেনে নিল সেই ঝর্ণায়।
১৯ বছর বয়সী মোহাম্মদ তাসমির হাসান। তিন বছর আগে বাবাকে হারিয়ে অভাব-অনটনের সংসারে ঠিকমত লেখাপড়া করতে পারেনি সে। যে কারণে গতবছর এসএসসির গণ্ডি পেরুনো সম্ভব হয় নি তার। তাই এসএসসির গণ্ডি পেরুতে এবার ভর্তি হয় স্থানীয় ‘আর এন জে’ কোচিং সেন্টারে। মিরসরাইয়ের ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ১১ জন। সেই প্রাণ হারানো ১১ জনের একজনই এই তাসমির। মৃত্যু কেড়ে নেয় তাসমিরের এসএসসির গণ্ডি পেরুনোর সেই স্বপ্ন।
শুধু তাসমীর নয়। ট্রেনের চাকায় পিষে যায় তৌকিদ ইবনে শাওন (২০), তানভীর হাসান হৃদয় (১৮), মো. ইমন (১৯), তছমির পাবেল (১৬) ও মো. সৈকতেরও (১৮) এসএসসি পাশের স্বপ্ন।
শুক্রবার (২৯ জুলাই) দুপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া কোচিং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সকলেই হাটহাজারী উপজেলার চিকনদণ্ডী ইউনিয়নের বাসিন্দা। শুক্রবার বিকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুরো চিকনদণ্ডী ইউনিয়ন জুড়ে বইছে শোকের মাতম। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের বাড়িতে ভিড় করছে আত্মীয়-স্বজন ও সহপাঠীরা। তবে তাদের বাবা-মায়েরা নেই বাড়িতে। সন্তানের দুর্ঘটনার খবর পেয়ে পাগলপ্রায় বাবা-মায়েরা ছুটে গেছেন থানায় ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে। অপেক্ষার প্রহর গুণছেন শেষবারের মত লাশটি বুকে জড়িয়ে নেয়ার।
আরও পড়ুন: রঙিন থেকে সাদাকালো: সেই ছবি এখন এই ছবি
স্থানীয়রা জানান, আজ ভোরে স্থানীয় যুবক ও চালক গোলাম মোস্তফা নিরুর মাইক্রোবাসে করে মিরসরাইয়ের খৈইয়াছড়া ঝর্ণা দেখতে যায় আর এন জি কোচিং সেন্টারের ৪ শিক্ষক ও ১২ শিক্ষার্থী। মারা যাওয়া সকলের বাড়ি যুগীরহাটের এক কিলোমিটারের মধ্যেই। পরীক্ষার আগে আশেপাশে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার চিন্তা থেকেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা। এ ভ্রমণ নিয়ে তাদের অনেক জল্পনা-কল্পনাও ছিল। কোচিং সেন্টার ও স্থানীয় কয়েকটি দোকানে বসে হয়েছিল নানা সিদ্ধান্ত। গতকাল সন্ধ্যায়ও আমানবাজারে বেশ হাস্যোজ্জ্বল দেখা গিয়েছিল তানভীর, ইমন ও পাবেলকে।
পাবেলের বন্ধু মো. ইমরান বলেন, পাবেল আমাকে তাদের সঙ্গে যাওয়ার জন্য বলেছিল। কিন্তু আমি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার চিন্তা করে আর যাইনি। সে আমাকে বলেছিল ট্যুর শেষে বাড়ি ফিরে পরীক্ষার সাজেশন নিয়ে দিবে। গতকাল বিকালে তার সাথে শেষ দেখা হয়েছিল। কিন্তু আমার বন্ধুর সাথে এটাই যে শেষ দেখা হবে তা কখনো কল্পনা করিনি।
এ দুর্ঘটনায় আহত ছয় জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত ছয় জন হলেন— মাইক্রোবাসের হেলপার তৌকিদ ইবনে শাওন (২০), একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. মাহিম (১৮), তানভীর হাসান হৃদয় (১৮), মো. ইমন (১৯), এসএসসি পরীক্ষার্থী তছমির পাবেল (১৬) ও মো. সৈকত (১৮)।
অন্যদিকে নিহত ১১ জনের মধ্যে ৯ জনের পরিচয় মিলেছে। তারা হলেন— কোচিং সেন্টারের চার শিক্ষক জিসান, সজীব, রাকিব ও রেদোয়ান ও কেএস নজুমিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী হিশাম, আয়াত, মারুফ, তাসফির ও হাসান।