০৭ জুলাই ২০২২, ১১:০৪

অধ্যক্ষের নির্দেশে মাদ্রাসা শিক্ষকের মাথা ন্যাড়া

মাথা ন্যাড়া করছে   © সংগৃহীত

নড়াইলে কলেজের অধ্যক্ষকে জুতার মালা পরিয়ে অপমান, ঢাকার সাভারে এক কলেজশিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ক্ষোভের মধ্যে এবার পটুয়াখালীতে এক মাদ্রাসাশিক্ষককে অপমান করার ঘটনা ঘটেছে। সেখানে এই অভিযোগ উঠেছে সেই শিক্ষকের ‍দুই সাবেক সহকর্মীর বিরুদ্ধেই।

পটুয়াখালীর বাউফল পৌর শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের হাজি সড়ক এলাকায় বাউফল মদিনাতুল উলুম নুরানি হাফিজি ক্যাডেট মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে। মাথা ন্যাড়ার সেই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পটুয়াখালীর বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আল মামুন।

ভুক্তভোগী শিক্ষক সম্প্রতি এই মাদ্রাসাটি ছেড়ে অন্য একটি মাদ্রাসায় যোগ দিয়েছেন। তার অভিযোগ, তার সাবেক কর্মস্থল মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা আনিচুর রহমানের নির্দেশে এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনার শিকার হাফেজ মনিরুল ইসলাম ভোলা সদর উপজেলার আলীনগর গ্রামের বাসিন্দা।

মনিরুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরেই মদিনাতুল উলুম নুরানি হাফিজি ক্যাডেট মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে চাকরি করতেন। একজন ভালো শিক্ষক হিসেবে ছাত্র ও অভিভাবকদের মধ্যে তার সুনাম ছিল। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ওই শিক্ষকের কাছে পড়াতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন।

অভিযোগ ওঠে, এই বিষয়টি ওই মাদ্রাসার পরিচালক আনিচুর রহমানের ভালো লাগেনি। এ নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে গত ঈদের আগে চাকরি ছেড়ে চাঁদপুর সদর উপজেলার লাউতলী জামিয়া মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন মনিরুল ইসলাম।

এক শিক্ষক জানান, আনিচুর রহমান অভিভাবক পরিচয়ে অন্য একটি মোবাইল নম্বর দিয়ে মনিরুল ইসলামকে কয়েকজন ছাত্র দেয়ার নাম করে গত ৩ জুলাই বাউফলে ডেকে আনেন। কালিশুরী এলাকার একটি মাদ্রাসার কক্ষে মনিরুলকে আটকে রেখে মারধর করা হয়।

আরও পড়ুন: ঢাকায় ছড়াচ্ছে ওমিক্রনের নতুন উপধরণ

এরপর আনিচুরের নির্দেশে মাওলানা জসিম উদ্দিন নামে আরেক শিক্ষক মনিরুল ইসলামের মাথা ন্যাড়া করে দেন এবং তার কাছ থেকে একটি মোবাইল ও সাড়ে ৪ হাজার টাকা রেখে রাত ৮টার দিকে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করলেও মাথা ন্যাড়া করার কথা স্বীকার করে ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন মাওলানা আনিচুর রহমান। তিনি জানান, ‘আসলে কাজটি ঠিক হয়নি। আমাদের উচিত ছিল ছেলেধরা বা ছেলে অপহরণের অভিযোগ এনে পুলিশের কাছে পাঠানো। কিন্তু ওই সময় স্থানীয় লোকজন এসে কে কীভাবে মাথা ন্যাড়া করল, আমি নিজেও হতবাক।’

তিনি বলেন, ‘যারা মাথা কামিয়েছে তারা বলছে যে মাথা কামিয়ে দিলে অনেকে মনে করবে সুন্নাতি কাম। আর এতে যদি মনিরুল লজ্জা পেয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যায়।’

পটুয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহেদ আহমেদ চৌধুরী জানান, ‘খুবই বাজে কাজ। আমি লোক পাঠিয়েছি। মনিরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ভিডিও ফুটেজ দেখেছি। তার পরও মনিরুল সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারলে আরও বিস্তারিত জানাতে পারব।’