গোসল করতে গিয়ে যৌন হয়রানির শিকার ১৩ শতাংশ তরুণী
দেশে উন্মুক্ত গোসলখানায় ৭৯ দশমিক ২ শতাংশ তরুণী মৌখিক সহিংসতা এবং ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ যৌন নিপীড়নের শিকার হন। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের একটি জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এ কারণে সবার জন্য নিরাপদ গোসলখানার দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।
শনিবার (১১ জুন) ঢাকার একটি কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করা হয়।
‘নিরাপদ গোসলখানা সবার জন্য সবখানে’ স্লোগান নিয়ে রাজধানীর ধলপুর, মালেক মেম্বার, আইজি গেট এবং ম্যাচ কলোনি বস্তিতে এ বছরের মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত জরিপ পরিচালনা করা হয়। এতে অংশ নেয় ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী ৪১৭ জন কিশোরী ও তরুণী।
জরিপের অন্তর্ভুক্ত চারটি স্থানের তথ্য বলছে, ৭২ শতাংশ কিশোরী-তরুণী উন্মুক্ত গোসলখানায় তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় থাকে। ওই এলাকার কেউবা আশপাশের উঁচু ভবন থেকে, কেউ উন্মুক্ত গোসলখানায় গোসলের দৃশ্য ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে কি না, তা নিয়ে ভয়ে থাকে অনেক মেয়ে। এ ছাড়া উন্মুক্ত গোসলখানায় পুরুষ ও বয়স্ক নারীদের বকাঝকা, যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার ঘটনাও ঘটে।
আরও পড়ুন: চাকরি পেয়ে স্ত্রীকে সারপ্রাইজ দেওয়া হলো না ডুয়েট ছাত্রের
কী ধরনের গোসলখানা ব্যবহার করা হয়?- জরিপের এমন প্রশ্নের উত্তরে ৯৮ শতাংশ উত্তরদাতাই বলেছেন, নিত্যদিনের গোসলের কাজে তারা উন্মুক্ত গোসলখানা ব্যবহার করে থাকেন। এর মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশ গোসলখানায় রয়েছে নারীদের জন্য পৃথক জায়গা। প্রতিটি গোসলখানার বিপরীতে ব্যবহারকারীর সংখ্যা গড়ে ৩৫ থেকে ৪৫ জন। সর্বোচ্চ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৭০ এবং সর্বনিম্ন ২০।
জরিপে অংশগ্রহণকারীরা জানান, তারা রাতে টয়লেটে যেতে ভয় পান এবং ৬৮ দশমিক ৬ শতাংশ কিশোরী ও যুব নারীরা বলেন, তারা টয়লেট ব্যবহার করতে গিয়ে কোনো না কোনো সময় সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এই সমীক্ষাটি করতে গিয়ে আমরা দেখতে পাই, এই চার কলোনির টয়লেট বা গোসলখানায় কোথাও স্যানিটারি সামগ্রী নিষ্পত্তি করার ব্যবস্থা নেই ঠিকমতো। এই অবস্থায় মাসিক স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা বেশ কঠিন।
সহিংসতার কথা বলতে গিয়ে মেয়েরা উল্লেখ করেন, তারা বেশ দূর থেকে পানি আনতে যান এবং এই কাজটি করতে গিয়ে ৫৮ দশমিক ৭ শতাংশ বলেছেন, তাদের অনেক বেশি সময় লাগে ও সন্ধ্যা হয়ে যায়। ৩৮ দশমিক ২ শতাংশ কিশোরী ও যুব নারীরা বলেছেন, তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন।
এই সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৭৯ দশমিক ২ শতাংশ বলেন, তারা মৌখিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন ও ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মানিক কুমার সাহা জানান, বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ হাজারের মতো নিম্নআয়ের এলাকা রয়েছে। জমির অপ্রতুলতার পাশাপাশি সুয়ারেজ লাইনের চ্যালেঞ্জও এখানে বিদ্যমান। আর এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে কিশোরী ও যুব নারীদের উপর।