বিয়ের দিন ছিল মঙ্গলবার, মারাও গেলেন মঙ্গলবার
কামরাঙ্গীরচরের রনি মার্কেটের মেম্বার গলির ভেতরে একটু এগোতেই আধা কাঠা জমির ওপর নিউমার্কেটের সংঘর্ষে নিহত নাহিদদের বাড়ি। দেড় হাত প্রশস্ত সিঁড়ি বেয়ে দোতলার ঘর। এ ঘরে থাকেন তার বাবা নাদিম হোসেন, মা নার্গিস এবং ছোট দুই ভাই। তৃতীয় তলায় টিনশেডের ঘরে থাকতেন নাহিদ ও তাঁর স্ত্রী ডালিয়া। ধীরে ধীরে বাড়ি-সংসার সাজানোর কথা ছিল তাদের।
পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ২৮ সেপ্টেম্বর নাহিদ ও ডালিয়ার বিয়ে হয়। ডালিয়াদের বাসা লালবাগে। ডালিয়া বলেন, ‘বিয়ের দিন ছিল মঙ্গলবার, আর সে (নাহিদ) মারাও গেলেন মঙ্গলবার। সাহ্রিতে মাংস রান্না হয়েছিল। মাংস দিয়ে ভাত খেয়েছিল নাহিদ। রোজামুখেই সে মারা গেল।’
ডালিয়া আরও বলেন, ‘নিজের জন্য কিছু কিনতে চাইত না নাহিদ। খালি আমার লাইগা কেনাকাটা করত। কোনটা লাগবে, কোনটা প্রয়োজন। এখন কে দেখবে আমাকে, কে ভরসা দেবে?’ ডালিয়ার দুই হাতভরা ছিল রাঙা মেহেদির নকশা। হাতের তালুতে মেহেদি রঙে লেখা, ‘আই লাভ ইউ নাহিদ।’ ডালিয়া বললেন, ‘নাহিদ চলে গেল, রেখে গেল ভালোবাসা।’
আরো পড়ুন: নিউমার্কেটে সংঘর্ঘের ঘটনায় নাহিদের পর চলে গেলেন মোরসালিনও
নাহিদকে হারিয়ে বাড়িতে চলছে আহাজারি। আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীরা সান্ত্বনা জানাচ্ছেন। ছেলে এভাবে হারিয়ে শোকে কাতর মা নার্গিস বলেন, ‘আমরা বিচার চাই না। নাহিদকে তো আর ফেরত পাব না, বিচার চেয়ে কী হবে। বিচার চাইলেই তো বিচার পাব না। ঘর-সংসার কীভাবে চলব।’
গত মঙ্গলবার দিনের বেলায়ও ছয়জনের পরিবার ছিল নার্গিস বেগমের। বুধবার সেই পরিবার হয়ে যায় পাঁচজনের। সংসার থেকে নাই হয়ে গেছেন নাহিদ। তার রোজগার দিয়েই চলত সংসারটি। তাদের এখন বড় প্রশ্ন, কীভাবে চলবে সংসার?
বেতনের পুরো টাকাই সংসারে দিতেন নাহিদ। নাহিদের মা বলেন, ‘একটি কোম্পানিতে কাজ করে নাহিদের বাবা অল্প কিছু টাকা পায়। এটা দিয়ে শোধ করতে হয় ঋণ। আর সংসার চালাত নাহিদ।’
গতকাল বুধবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে নাহিদের মরদেহ কামরাঙ্গীরচরে নেওয়া হয়। সেখানে জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়েছে।