ভুলে যাই মৃত্যু, চলো ভালোবাসি, চলো বেঁচে থাকি!
ভালবাসা নিষ্ঠুর! ভালবাসা বেদনাময়। তবুও মানুষ ভালবাসার মানুষটিকে ঘিরে নতুন করে বাঁচার ইচ্ছে জাগে। রাঙাতে চায় আলোকিত বসুন্ধরা। তাইতো ভালোবাসা দুটি হৃদয়ের সমন্বয়, একটি ছাড়া অন্যটি অচল।
জাতীয় দলের ক্রিকেটার মোশাররফ রুবেল, বেশ কিছুদিন যাবত ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন। হয়েছেন শয্যাসঙ্গী। প্রতিনিয়তই চলছে তার বেঁচে থাকার লড়াই। সম্প্রতি জাতীয় দলের এই ক্রিকেটার ও স্ত্রীর একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পরেছে।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছেন রুবেল। আর তার থেকে কিছুটা দূরে সোফায় বসে আছেন স্ত্রী চৈতি ফারহানা রুপা। তবে রুপা নিস্তব্ধ সময় পাড় করেছেন না। তিনি স্বামীকে কিছু একটা পড়ে শুনাচ্ছেন। তিনি ভালবাসার মানুষ মোশাররফ রুবেলকে বই পড়ে শুনাচ্ছেন। আর মুগ্ধ হয়ে সেই বই পড়া শুনছেন স্বামী রুবেল। মোশাররফের শরীরে লাগানো রয়েছে বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম। আর সামনে একটি ট্রেতে কিছু ফলমূল!
ছবিটি শেয়ার করার মাধ্যমে অনেকেই তাদের ভালবাসার মুগ্ধতার কথা ব্যক্ত করছেন। কেউ কেউ এই মুহূর্তটুকুকে ‘ভালবাসার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত’ হিসেবেও অভিহিত করছেন। অনেকেই বলছেন এই ছবি ‘আছে মৃত্যু তবুও ভালবাসতে মানা নেই; মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে ভালবাসার গল্প’ হিসেবেও আখ্যায়িত করছেন।
ছবিটি নিজের ভেরিফাইট ফেসবুক আইডিতে শেয়ার করে শারমিন সুলতানা সুমি নামে একজন জানিয়েছেন, সুদিনে সবাই পাশে থাকে। দুর্দিনে দূরে যাওয়ার পথ খোঁজে। কমিটমেন্ট, ভালোবাসা আসলে অন্য জিনিস। সত্যিকারের ভালোবাসা কনসিসটেন্ট হয়। যত ঝড়ই আসুক মেঘ-রোদের মত সিজনাল হয় না, পাল্টায় না। এই ছবির মত ভালোবাসা দেয়ার ক্ষমতা বা পাওয়ার সৌভাগ্য সবার থাকে না। চৈতি ফারহানা রুপা, তুমি অন্য রকম মানুষ। তোমার ধৈর্য্য শেখার মত। দোয়া করি সব ঠিক হয়ে যাক দ্রুত। অনেক আদর, শ্রদ্ধা জাইনো আপু।
ফেসবুকে মোহাম্মদ বিল্লাল নামে একজন লিখেছেন, ‘স্বামী শয্যাশায়ী, পাশে স্ত্রী বই পড়ে শোনাচ্ছে স্বামীর ভালো লাগার জন্য, সুন্দর দৃশ্য, শেষ সময়ে পরম নির্ভরতার মানুষ হিসাবে কাছে থাকে প্রিয়তমা স্ত্রী। মানুষের শেষ যাত্রায় পাশে থেকে মানুষিক এবং অন্যান্য সাহায্য করে একমাত্র স্ত্রী।’
আরও পড়ুন : বিবর্তন মানবা না তাহলে d/dt মানবা কিভাবে?
ভালবাসার ইমোজি দিয়ে মোহাম্মদ সোলাইমান ইসলাম লিখেছেন, ‘প্রকৃত ভালোবাসা। অসুস্থ স্বামীকে বই পড়ে শুনাচ্ছেন স্ত্রী। দীর্ঘদিন ছায়ার মত পাশে আছেন তিনি, কখনো ক্লান্তি আসেনি। শুধু সৃষ্টিকর্তার নিকট একটাই প্রার্থনা, স্বামীর সুস্থতা। জিতে যাক ভালোবাসা, হেরে যাক অসুস্থতা।’
এনএইচ রকি লিখেছেন, তিনি তাকে ছেড়ে যেতেই পারতেন, চাইলেই পারতেন। কিন্তু তিনি পাশে থেকেই গেলেন। ভালবাসা এমনই হয়, নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও সকল সেভিংস সেই সাথে শেষ প্রপার্টি টুকুও বিক্রি করে স্বামীর পাশেই থেকে যাওয়া বোনটির জন্য দোয়া।
রুবেল হাসান হিমু জানিয়েছেন, চলো ভুলে যাই জীবন ফুরোচ্ছে সে কথা, ভুলে যাই মৃত্যু বলে ভয়ঙ্কর কিছু একটা ঘাড়ের ওপর বসে আছে। চলো ভালোবাসি, চলো বেঁচে থাকি, প্রচণ্ড বেঁচে থাকি। হৃদয় বাঁচিয়ে রাখি হৃদয়ের তাপে।
আবু বক্কর সোহাগ লিখেছেন, যাদের কোন রিলেটিভ এই দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়নি তারা বুঝতে পারবেন না এর সাফার কি! মনে হবে পথ ভুলে দুঃস্বপ্নের শহরে আটকে গেছি, কোনভাবেই বেরোনোর পথ খুঁজে পাচ্ছি না।