ফাহমিদা নেই, রইল লাল বেনারসি
হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন, ‘এই পৃথিবীতে প্রিয় মানুষগুলোকে ছাড়া বেঁচে থাকাটা কষ্টকর কিন্তু অসম্ভব কিছু নয়। কারো জন্য কারো জীবন থেমে থাকে না, জীবন তার মতই প্রবাহিত হবে।’
তবে প্রিয়তমার আলতো এক টুকরো হাসি হৃদ মন্দিরে প্রশান্তির সাহস জোগায়। সজীবতায় ভরিয়ে মুছে দেয় হাজারও কষ্ট-গ্লানির ছাপ। হেরে যাওয়া তারুণ্য নতুনভাবে বাঁচতে স্বপ্ন বুনে।
অঙ্গে লাল বেনারসি শাড়ি, গলায় সোনার হার। হাসিমাখা লাবণ্যময়ী বিয়ের কন্যা। বরের গাঁয়ে পায়জামা-পাঞ্জাবি। আক্দ অনুষ্ঠান, দু’জন মিলে কেক কাটা, মালাবদল খেজুর মিষ্টি খাওয়ানোর মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন। তবে এ বিয়েতে রয়েছে ভিন্নতা। এ বিয়ে বেঁচে থাকার নতুন স্বপ্ন দেখায়। নতুন প্রাণের সঞ্চার জাগায়।
আরও পড়ুন : আইপিএলে তাসকিনকে দলে চেয়েছেন গৌতম গম্ভীর
দীর্ঘদিন ধরে মরণঘাতী রোগ ক্যান্সারে আক্রান্ত ফাহমিদা কামাল। দেশ ও দেশের বাহিরে চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে ডাক্তাররা বলেছে ‘আর চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়।’ ইঙ্গিত দিয়েছেন, আর বেঁচে না থাকার। তারপরও ভালোবাসার প্রতিদান সরূপ কক্সবাজারের চকরিয়ায় ছেলে মাহামুদুল হাসান ফাহমিদাকে বিয়ে করেন।
এ বছরের ৯ মার্চ চট্টগ্রাম নগরের মেডিকেল সেন্টারে মৃত্যুপথ যাত্রী ফাহমিদাকে বিয়ে করেন প্রেমিক মাহমুদুল হাসান। একটা সময় একসঙ্গে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখতেন তারা। অনুভব করতেন সুখ-দুঃখে বাকিটা জীবন একসঙ্গে কাটানোর প্রহর। আজ সে স্বপ্ন পূরণের ক্ষণ। যদিও ২০২০ সালের শেষ দিকে তাদের বিয়ের বিষয়টি পাকাপাকি হয়েছিল।
আরও পড়ুন : মারা গেলেন সেই ফাহমিদা
তবে একসঙ্গে ঘর বাঁধার আগে অসুস্থ হয়ে পড়েন ফাহমিদা। আশ্রয় হাসপাতাল। তবে প্রেমিকা ফাহমিদার স্বপ্নপূরণে উভয় পরিবারের সম্মতিতে হাসপাতালেই মাহমুদুল প্রেমিকার হাতে রেখেছিলেন হাত। করেছেন বিয়ে।
মৃত্যুপথ যাত্রী প্রেমিকা ফাহমিদাকে ১ টাকা কাবিনে বিয়ে করেন তিনি। বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর শুধুমাত্র একদিন ফাহমিদাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়। এরপর ১৫ মার্চ পুনরায় চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। পরে রবিবার ফাহমিদার শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়।
কিন্তু বিয়ের ১১ দিন পর স্বামী মাহমুদুল হাসান, পরিবার পরিজনদের কাঁদিয়ে সোমবার সকালে না ফেরার দেশে পারি জমান ফাহমিদা।
আরও পড়ুন : ঢাবি শিক্ষার্থী আদরের মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের মামলা
মৃত্যু অবধারিত তা আগেই ডাক্তারদের থেকে জেনে ছিলেন ফাহমিদা। তবুও বিয়ের পর নতুনভাবে বাঁচতে চেয়েছিলেন ফাহমিদা।
নাতনি ফাহমিদা মৃত্যুতে সাইফুদ্দিন সাকী জানান, ‘বিয়ের পর ফাহমিদা অনেকটা সুস্থ হয়েছিল। নতুনভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখে ছিল। কিন্তু ফাহমিদা এখন আর নেই।’
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বিয়ের দিন ফাহমিদা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। সেই চিরচেনা হাসিমাখা মুখ। দৌড়ে মাহমুদুলকে জাপতে ধরার আকুতি। যে ফাহমিদা বিছানা ছেড়ে উঠতেই পারতেন না, সেই ফাহমিদা বিয়ের বেনারসি পরেছেন। সেজেছেন লাল টুকটুকে বধূ বেশে।
ঠোঁটে আলতো গড়নের সাঁজ, হাতে চুড়ি, নাকে নোলক, গলায় অলংকারে বউ সেজেছে। চোখে নতুনত্ব, ঘর বাঁধার চাহনি। বরকে মালাও পড়িয়েছিলেন তিনি নিজেই।
সেই ফাহমিদা আজ আর নেই। বিদায় বলেছে এই মায়াবী বসুন্ধরাকে, তবে রয়েছে গেছে ফাহমিদা স্মৃতিমাখা লাল বেনারসি, আর বেঁচে থাকার আকুতি প্রত্যয়।
আরও পড়ুন : দোকানে জনসম্মুখে মারধর, লজ্জায় মাদ্রাসাছাত্রীর আত্মহত্যা
প্রসঙ্গত, মাহমুদুল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শেষ করেছেন। ফাহমিদা কামাল ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশে (ইইউবি) থেকে বিবিএ-এমবিএ শেষ করেছেন। পড়াশোনার এক পর্যায়ে তারা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এক সময় একসঙ্গে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখতেন। অনুভব করতেন সুখ-দুঃখে বাকিটা জীবন একসঙ্গে কাটানোর প্রহর।
কিন্তু হঠাৎ ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ফাহমিদার শরীরে রেক্টাম ক্যান্সার দানা বেঁধেছে। ফাহমিদাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা এভারকেয়ার এবং পরবর্তীতে ভারতের টাটা মেমোরিয়াল হসপিটালে নেওয়া হয়। সেখানে দীর্ঘ এক বছর চিকিৎসা দেওয়া হয়।
শেষে চিকিৎসকরা জানান, ফাহমিদা কামালের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই। এরপর তাকে দেশে নিয়ে আসা হয়। পরে ১ মার্চ ফাহমিদাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করানো হয়। এ হাসপাতালে ডা. সাজ্জাদ বিন ইউসুফের তত্ত্বাবধানে ছিলেন ফাহমিদা।