গণপরিবহনে নারীরা সবচেয়ে বেশি যৌন হয়রানির শিকার
অনলাইন মাধ্যম অর্থাৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের চেয়ে গণপরিবহনে নারীরা বেশি যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে একটি বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষায় উঠে এসেছে। সমীক্ষাটি পরিচালনা করেছে বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশন।
শনিবার (৫ মার্চ) সকাল ১১টার দিকে জুমের ভার্চ্যুয়াল সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘তরুণীদের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং মানসিক স্বাস্থ্যে এর প্রভাব’ শীর্ষক সমীক্ষাটির তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
এই ভার্চ্যুয়াল সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহীন মোল্লা, সিটি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের সহকারী পুলিশ কমিশনার সুরঞ্জনা সাহা, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন সংস্থার মিডিয়া কম্যুনিকেশনের সিনিয়র কো-অর্ডিনেটর শাহানা হুদা রঞ্জনা, আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ এবং অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ।
আরও পড়ুন: মাধ্যমিকে চলতি মাসের মাঝামাঝি পুরোদমে ক্লাস: শিক্ষামন্ত্রী
আঁচলের জানিয়েছে, সারা দেশের ১ হাজার ১৪ জন তরুণী সমীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। গেল ফেব্রুয়ারি মাসে এই সমীক্ষা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে আচঁল।
আঁচলের সমীক্ষা অনুযায়ী, গণপরিবহনে ৬৪.৯২ শতাংশ নারী যৌন হয়রানির শিকার হন। এই সংখ্যাটি অনলাইন বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীদের যৌন হয়রানির মাত্রা থেকেও বেশি। এবারের সমীক্ষা বলছে, ৪৩.৮৯ শতাংশ নারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হয়রানির শিকার হন।
শিক্ষা, চাকরিসহ নানা প্রয়োজনে নারীরা গণপরিবহনে যাতায়াত করে থাকেন। সমীক্ষা বলছে, গণপরিবহন হিসেবে সর্বাধিক ব্যবহৃত হয় বাস। তবে বাস ও বাসস্টেশন -এই দুই জায়গায় নারীরা বেশি যৌন হয়রানির শিকার হন বলে জানিয়েছেন সমীক্ষায় অংশ নেওয়া তরুণীরা। এই দুই জায়গায় যৌন হয়রানির ভুক্তভোগী মোট ৮৪.১০ শতাংশ নারী।
তবে রেল বা রেলস্টেশনে যৌন হয়রানি কম হয় বলে জানিয়েছেন সমীক্ষায় অংশ নেওয়া নারীরা। রেল ও রেলস্টেশনে এই হার ৪.৫৮ শতাংশ। আর রাইড শেয়ারিং সেবায় ১.৫৩ শতাংশ নারী হয়রানির শিকার হন বলে জানিয়েছে আচঁল।
গণপরিবহনে নারীদের নিরাপত্তার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাদেকা হালিম জানান, অবশ্যই নারীদের জন্য নিরাপদ গণপরিবহনব্যবস্থা দরকার। পাশাপাশি তাঁদের নিরাপত্তাও চাই। এই দায়িত্ব সরকারের।
সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা জানান, গণপরিবহনে যৌন হয়রানির মধ্যে আপত্তিকর স্পর্শের শিকার হন ৬৪.৯২ শতাংশ। ২০.০৪ শতাংশ কুদৃষ্টি এবং অনুসরণের শিকার হয়েছেন বলে জানান।
আরও পড়ুন: বিশ্বকাপে প্রথম জয়ের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে বাঘিনীরা
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নারীরা সবচেয়ে বেশি নিপীড়নের শিকার হন একাকী চলার সময়; সংখ্যায় তা ৭৫.৬০ শতাংশ। তবে মা, বোন, বান্ধবী বা অন্য নারী সঙ্গী থাকা অবস্থাও হয়রানির শিকার হন ২১.৫৭ শতাংশ নারী। শুধু বাবা, স্বামী, ভাই বা অন্য পুরুষ সঙ্গী সঙ্গে থাকলে ২.৮৩ শতাংশ হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে সমীক্ষায় উঠে আসে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহীন মোল্লা বলেন, “মেয়েদের আন্তঃব্যক্তিগত যোগাযোগ এর ক্ষেত্রে অ্যাসারেটিভ হতে হবে। জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে, নিজের মনোভাব সরাসরি বলতে হবে। মনে রাখতে হবে, আনন্দ ভাগ করলে দ্বিগুণ হয় আর দুঃখ ভাগ করলে অর্ধেক হয়।
আঁচল ফাউন্ডেশনের সভাপতি তানসেন রোজ বলেন “আমরা যদি নারীদেরকে মানসিকভাবে ভালো রাখতে চাই এবং তাঁদেরকে আত্মহত্যার হাত থেকে রক্ষা করতে চাই তবে সমীক্ষায় যে ফলাফলগুলো উঠে এসেছে সেগুলো বিশ্লেষণ করে সঠিক সমাধান নিয়ে আসতে হবে। দেশের সব নাগরিককে নারীদের প্রতি সঠিক মনোভাব ধারণ করার জন্য বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে হবে। এই শিক্ষার শুরু হতে হবে শৈশব থেকে। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যেন নারীরা তাঁদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়।”
এ বিশেষ সমীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফল নিয়ে আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রজেক্ট লিড মোঃ রিফাত হাসান তরফদার বলেন “নারীর অধিকার নিয়ে আমরা আজ কথা বলতে শুরু করেছি কিন্তু এই নারীদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা কতটুকু নিশ্চিত করতে পারছি আমরা? রাস্তায়, গণপরিবহনে, এমনকি উন্মুক্ত স্থানেও যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটছে অহরহ। পরিবারের মাঝেও নিরাপদ নয় নারী। নারীদের বিচরণের প্রতিটি মাধ্যম হতে হবে স্বচ্ছ ও নিরাপদ। তবেই আমরা নারী জাগরণ, নারী মুক্তি নিয়ে কথা বলতে পারবো।”