ক্ষমা চাইলেন সেই সোহেল
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০:১৫ PM , আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০:৪৩ PM
‘সোহেল-রওশনের অসাধারণ প্রেমের গল্প’ বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে রীতিমতো ভাইরাল। এই দম্পতিকে নিয়ে সম্প্রতি প্রায় দেশে সবকটি সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ ও প্রচার করে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েরও নজরে এসেছে। বিষয়টি চারদিকে ছড়িয়ে যাওয়ার পর উঠে আসে এর বিপরীত পিঠের গল্প।
তাদের প্রেমের গল্প নেট দুনিয়া ভাইরাল হওয়ার পর গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা হয় সোহেলের। মুঠোফোনে তিনি বলেন, আগের সংসারের বউ-বাচ্চারা চাইতেন না তিনি তাঁদের পরিচয় দেন। তাই তথ্য গোপন করেছেন। আর শিক্ষাগত যোগ্যতার কথা মিথ্যা বলাটা তাঁর ভুল হয়েছে। এ জন্য তিনি ক্ষমাপ্রার্থী।
শারীরিক প্রতিবন্ধী রওশন আক্তার প্রায় ১৫ বছর ধরে স্বামী সোহেল মিয়ার পিঠে চড়েই বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করছেন।
রওশনের সাথে সোহেল মিয়ার এটি দ্বিতীয় বিয়ে, আগেও একটি সংসার ছিল তার। সেই সংসারে রয়েছে তিন সন্তান, প্রথম স্ত্রীর নাম শুরাতন বেগম। শুরাতন বেগম থাকেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের সন্তোষপুর গ্রামে। চায়ের দোকান চালিয়ে সংসারের খরচ মেটান ছেলেরা। মেয়ের বিয়ে হয়েছে। তার প্রকৃত নাম হলো বকুল।
আরও পড়ুন: আগের সংসার গোপন করে রওশনকে বিয়ে, ভুয়া রাবিতে পড়ার তথ্যও!
এমনকি নিজের শিক্ষাকতা যোগ্যতা নিয়েও তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী বলে নিজেকে দাবি করলেও আসলে তিনি অষ্টম শ্রেণী পাস। অনুসন্ধানে জানা যায়, সোহেলের আগেও একটি সংসার ছিল। চাঁপাইনবাবগঞ্জে থাকেন তার প্রথম স্ত্রী ও তিন সন্তান। ১৬ বছর আগে দাম্পত্য কলহের জের ও ঋণের চাপে বাড়িতে কিছু না বলেই তিনি বের হয়ে যান তিনি। আর ফেরেননি।
তারপর ময়মনসিংহের ত্রিশালের শারীরিক প্রতিবন্ধী রওশনকে ভালোবেসে বিয়ে করেন। তখন থেকেই চলাফেরায় অক্ষম স্ত্রীকে প্রায় ১৫ বছর ধরে কোলে-পিঠে তুলে বহন করে আসছেন। তার প্রথম স্ত্রী জানান, স্বামী নিখোঁজ বলেই এতদিন জানতেন। তাদের বিয়ে বিচ্ছেদও হয়নি। সম্প্রতি রওশনের সঙ্গে সংসারের খবর সংবাদমাধ্যমে দেখে তিনি এই বিয়ের কথা জানতে পারেন। প্রথম স্ত্রী আরও জানান, সোহেল নয়, ওর নাম মোখলেশুর রহমান বকুল।
সোহেল নিজেও গণমাধ্যমের কাছে বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, রওশনের প্রতি ভালোবাসা থেকেই অতীত গোপন করেছেন।
আরও পড়ুন: দশ টাকার নোটে পাওয়া নাম্বারে পরিচয়, সুখে আছেন সোহেল-রওশন
সোহেল মিয়ার আসল নাম মোখলেছুর রহমান (বকুল)। বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে। আগের সংসারে স্ত্রী ছাড়াও তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। সোহেল মিয়ার আগের সংসারের বড় ছেলে মো. শিহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৪ বা ২০০৫ সালের দিকে কাজের কথা বলে ঢাকায় গিয়ে মোখলেছুর রহমান নিখোঁজ হন। তাঁদের পক্ষে তাঁকে খুঁজে বের করার সামর্থ্য ছিল না। সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত খবর এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আলোচনায় আসা ছবি ও ভিডিও দেখে সোহেল মিয়াকে চিনতে পারেন।
সোহেল-রওশন দম্পতির ভালোবাসা নিয়ে সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা খবর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েরও নজরে এসেছে। সেখান থেকে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত বুধবার ময়মনসিংহের ত্রিশালের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান এই দম্পতির চাহিদা বা প্রয়োজনগুলো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে জানাবেন বলে সোহেল-রওশন দম্পতির বাড়ি ঘুরে এসেছেন।