যে কারণে ‘চিরকুমার’ ছিলেন জয়নাল হাজারী
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক এমপি জয়নাল হাজারী সোমবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। জীবনের শেষের দিকে তিনি অনেকটা নিভৃতচারী হয়ে উঠলেও আলোচনা ও বিতর্ক তাকে পিছু ছাড়েনি।
রাজনীতি থেকে শুরু করে সাধারণ পর্যায়ে বহু মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিলেও ব্যক্তিগত জীবনে কোনো সঙ্গিনীর বাহুডোঁরে বাঁধা পড়া হয়নি তিনি। বিভিন্ন সময়ে রাজনীতিকদের ৫০ পেরোনো বয়সে বিয়ে ও ঘর-সংসার করতে দেখা গেলেও এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আমৃত্যুই ছিলেন ‘চিরকুমার’।
আরও পড়ুন: আজ থেকে বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু
জয়নাল হাজারীর রাজনৈতিক জীবন নিয়ে যেমন মানুষের আগ্রহ, তেমনি তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও সব সময় ছিল নানা আলোচনা। সাধারণ মানুষের আগ্রহ মেটাতে নিজের আত্মজীবনীতে অনেক ঘটনার উল্লেখ করার পাশাপাশি বিভিন্ন টিভি অনুষ্ঠানেও এসব বিষয়ে খোলামেলা আলাপ করতেন তিনি। ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর গণমাধ্যমের একটি টক শো’তে বিজুকে নিয়ে কথা বলতে শোনা যায় তাকে।
জয়নাল হাজারীর ভাষায়, ‘বিজু আর আমি ফেনী কলেজের শিক্ষার্থী ছিলাম। তার সঙ্গে আমার প্রেম ছিল। যুদ্ধের সময় আমি চলে গেলেও বিজুর পরিবার সোনাগাজিতে আত্মগোপন করে।’
আরও পড়ুন: অনাপত্তি পত্রে আপত্তি, বিপাকে শিক্ষকরা
‘সেখানে এক রাজাকার জোর করে তাকে বিয়ে করে ফেলে। বিজুর সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল তাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করব না। কিন্তু বোঝা গেল সে খুব একটা চাপে পড়ে বিয়ে করে নাই। স্বাভাবিকভাবে বিয়ে করেছে।’
যুদ্ধের দিনগুলোতে জয়নাল হাজারী খবর পাচ্ছিলেন বিজুর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আসার উপায় ছিল না, ‘এখানে আসার পর ইচ্ছা করলে তার কাছ থেকে বিজুকে ছিনিয়ে আনতে পারতাম। মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি সমস্ত দলবল ছিল আমার। কিন্তু আমি সেটা করি নাই।’
বিজু প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে বিয়ে করায় রেগে যান জয়নাল হাজারী। প্রেমিকার বিচার চেয়ে রাস্তায় রাস্তায় পোস্টার লাগান।
আরও পড়ুন: সেই ছাত্রী হলি ফ্যামিলির শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করবেন
‘আমি তার বিচার চেয়েছি এই জন্য, আমরা ওয়াদা করেছিলাম যে একে অপরকে ছাড়া বিয়ে করব না। কিন্তু সে বিয়ে করে ফেলেছে। তার পরবর্তী কোনো প্রতিকারও নাই। সে কেন চুক্তি ভঙ্গ করেছে, কেন ওয়াদা ভঙ্গ করেছে এ জন্য আমি বিচার চেয়েছি। আমি মনে করি এটা অপরাধ।’
জয়নাল হাজারীর দাবি বিজুর সঙ্গে পরে কোনোদিন কখনো তার কথা হয়নি, ‘সে একটা স্কুলে শিক্ষকতা করত। এখন অবসরে। রিটায়ার করার আগে স্কুলের একটা সমস্যা নিয়ে আমাকে ফোন করেছিল। আমি বিব্রতবোধ করেছি। ফোনে কথা বলি নাই।’
একটি গণমাধ্যমে জয়নাল হাজারী বলেছিলেন, এরপর তার জীবনে আর কোনো নারী আসেনি, ‘নারী নিয়ে, বিয়েশাদী নিয়ে আমি আর সিরিয়াসলি কোনো চিন্তাই করি নাই।’
প্রেমে ব্যর্থ হওয়া এই রাজনীতিবিদ শেষ বয়সেও বিজুকে অনুভব করতেন। কথা না রাখা প্রেমিকার জন্য তার আর ক্ষোভ ছিল না।
বিজুর স্বামী মারা গেছেন আগেই। এক ছেলে কানাডা থাকেন। তাকে অনেকেই জয়নাল হাজারীর ছেলে বলে ডাকে! জয়নাল হাজারীও বিষয়টা জানতেন, ‘অনেকেই তাকে আমার ছেলে বলে। কিন্তু এমন প্রশ্নই ওঠে না। আমার সঙ্গে প্রেম ছিল বলেই মানুষ এমন বলে।’
আরও পড়ুন: আড্ডার মধ্যে বাগবিতণ্ডা, বন্ধুর আঘাতে রক্তাক্ত ঢাবি ছাত্র
১৯৪৫ সালে জন্ম নেওয়া জয়নাল হাজারী আজীবন আওয়ামী লীগেই যুক্ত ছিলেন। ১৯৮৪ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত দুই দশক ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি।
ফেনী-২ (ফেনী সদর) আসন থেকে ১৯৮৬, ১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সালে তিন বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।