এমপি-ছাত্রলীগ নেতার আশ্রয়ে বেপরোয়া ধর্ষক আশিক
সম্প্রতি এক নারীকে গণধর্ষণের ঘটনায় সারাদেশে সাড়া ফেলেছে। স্বামীকে জিম্মি করে স্ত্রীকে গণধর্ষণ করে একটি গ্রুপ। এই গ্রুপের প্রধান ছিল আশিকুল ইসলাম আশিক। ধর্ষণের অভিযোগে নারীর স্বামী আশিকসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এর আগে আশিকের বিরুদ্ধে এর আগেও ইয়াবা, ছিনতাইসহ নানা অপরাধের অভিযোগে ১৬টি মামলা রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের এক সংসদ সদস্য এবং কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ সভাপতির ছত্রছায়ায় আশিক দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কক্সবাজারে সংঘবদ্ধ অপরাধচক্রের মূল নিয়ন্ত্রক তিনি। তার নেতৃত্বে রয়েছে অন্তত তিন ডজন অপরাধীর একটি চক্র।
আরও পড়ুন: কোচিংয়ে দু’ছাত্রীর শ্লীলতাহানি, কলেজশিক্ষক গ্রেফতার
আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, আশিক মূলত ছিনতাইকারীচক্রের নেতা।
খোঁজ নয়ে জানা গেছে, আশিক গ্যাংএর আশ্রয়দাতা হিসেবে আছেন কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি এস এম সাদ্দাম হোসেন। এবং কক্সবাজার-সদর রামু আসনের এমপি সাইমুম সরওয়ার কমলের সঙ্গেও এই চক্রের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা ছাত্রলীগের এক নেতা জানান, ‘নিজের আধিপত্য বিস্তারের জন্য ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম একটি অপরাধীচক্রকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। মূলত মোবারক আলী নামে এক সন্ত্রাসীর মাধ্যমে এ চক্রটি পরিচালনা করেন সাদ্দাম।’
আরও পড়ুন: মেডিকেলের ২৭ শতাংশ ছাত্রী মাইগ্রেনে ভুগছেন
তিনি আরও বলেন, ২২ ডিসেম্বর রাতে এক নারী আশিকসহ তার চক্রের কয়েক সদস্যের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ করেন। এর আগের দিন রাতেও জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দামের সঙ্গে দীর্ঘ আড্ডা দিতে দেখা গেছে আশিকদের। বাহারছড়া ল্যাবরেটরি স্কুলের পাশে ওই আড্ডায় আশিক, জয়া, রেশাদ, মোবারকসহ অপরাধীচক্রের অনেকেই ছিলেন। পরে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম সেন্ট মার্টিন চলে যান।
ছাত্রলীগের বিভিন্ন কমিটিতে টাকার বিনিময়ে জামায়াত-ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের পদ দিয়েছেন সাদ্দাম। টেকনাফ ও চকরিয়ার মাতামুহুরী কমিটিতে এ ধরনের অনেকেই আছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
সাদ্দামের নেতৃত্বে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের পর শোভাযাত্রায় আশিক, জয়া ও মোবারক সাদ্দামের নেতৃত্বে গত বছরের নভেম্বরে জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে আশিকের কোনো পদ না থাকলেও নিজের ভিত্তি মজবুত করতে আশিকের চক্রটির প্রধান আশ্রয়দাতা হয়ে ওঠেন সাদ্দাম।
আরও পড়ুন: মায়ের পরামর্শে প্রাণ বাঁচল সাতার না জানা জবি শিক্ষার্থীর
আশিকের চক্রটি পর্যটন এলাকা কলাতলীতে ইয়াবা ব্যবসা, ছিনতাই, অপহরণসহ সব ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত বলেও অভিযোগ করেছেন হোটেল-মোটেল জোনের ব্যবসায়ীরা।
তারা জানান, সাদ্দামের পরিচয় ব্যবহার করে আশিক প্রতিদিন বিভিন্ন হোটেল থেকে চার-পাঁচ হাজার টাকা করে চাঁদা তুলতেন। টাকা না দিলে হোটেলের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেয়ার বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আশিক কোনো যৌনকর্মীকে ‘পছন্দ’ হলেই তাকে নিয়ে যেতেন। বাধা দিলে অনেক সময় মারধরের ঘটনাও ঘটেছে।
আশিকের চক্রের সঙ্গে কক্সবাজার-সদর রামু আসনের এমপি সাইমুম সরওয়ার কমলের সখ্যের অভিযোগও পাওয়া উঠেছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদমর্যাদার এক নেতা জানান, এ মাসের শুরুতেই সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের সঙ্গে আশিক ও জয়াকে দেখা গেছে। ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দামের বাড়ি এমপি কমলের এলাকায়। এ কারণেই কমলের শেল্টারে আছেন সাদ্দাম। অপরাধীরাও তাদের পেছনে ছুটেছে।
শহরের যে কোনো অনুষ্ঠানে এমপি কমলের সঙ্গে জয় ও আশিককে নিয়মিত দেখা যেত। সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর গত কয়েক দিনে আশিক ও জয়ার সঙ্গে এমপি কমল ও ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দামের একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
আশিকের চক্রকে প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি এস এম সাদ্দাম। তার দাবি, এই চক্রের সদস্যদের তিনি ‘ঠিকমতো চেনেনই না’।
একসঙ্গে তোলা ছবির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সাদ্দাম জানান, কোনো একটা অনুষ্ঠানে আমার সঙ্গে ছবি তুলেছিল, ওই ছবি এখন ভাইরাল করা হচ্ছে। একটা অনুষ্ঠানে কত মানুষই তো ছবি তুলতে পারে। আমাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপরাধীদের সঙ্গে জড়ানো হচ্ছে। বরং তাদের শাস্তির আওতায় আনতে আমি নিজে এই ঘটনার পর থেকে প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি।’
২১ ডিসেম্বর আশিক, জয়, মোবারকের সঙ্গে আড্ডা দেয়ার বিষয়টিও অস্বীকার করে সাদ্দাম জানান, ‘আমি চট্টগ্রামে ছিলাম, সেখান থেকে ফিরেছি ২১ তারিখ মধ্যরাতে, পরদিন আবার সেন্ট মার্টিন চলে গেছি। যারাই এ কথা বলেছে মিথ্যা বলেছে।’
আরও পড়ুন: বাসায় বসে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন পৌর মেয়র!
ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগও অস্বীকার করে এই নেতা বলেন, ‘এসব ভিত্তিহীন, মনগড়া কথা। কেউ যদি প্রমাণ দিতে পারে তাহলে আমি পদত্যাগ করব।’
আশিকের চক্রকে প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগ নিয়ে বক্তব্য জানতে এমপি সাইমুম সরওয়ার কমলের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।