কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে বেকারত্ব কমিয়ে আনা সম্ভব
যুগোপযোগী ও কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে বেকারত্ব কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে মতামত জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। বুধবার (২২ ডিসেম্বর) শিক্ষা নিয়ে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীতে শিক্ষা খাতের অর্জন, চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে বক্তারা নানা পরামর্শ তুলে ধরেছেন।
সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশন (সিএসও), গণসাক্ষরতা অভিযান, ঢাকা আহসানিয়া মিশন ও এডুকেশন ওয়াচ যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। এতে কি-নোট পেপার উপস্থাপন করেছেন গণ স্বাক্ষরতা অভিযানের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান।
আরও পড়ুন: ‘স্কুল ভর্তিতে বয়স কোনো বাধা হবে না’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। এতে প্রধান অতিথির দেওয়া বক্তব্যে তিনি চতুর্থ শিল্পবিপ্লবকে মাথায় রেখে যুগোপযোগী ও কারিগরি শিক্ষার দিকে মনযোগ দিতে বলেছেন। এর মাধ্যমে বেকারত্ব কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এছাড়া, শিক্ষা নিয়ে কিছুদিন পর পর সিদ্ধান্ত বদলের সমালোচনা করে এতে ঘন ঘন পরীক্ষা-নিরীক্ষার চিন্তা বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০-এর প্রণয়ন কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। এসময় তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশে ২০১০ সালে জাতীয় শিক্ষানীতি হওয়ার পরও এখন পর্যন্ত সেই আইনটি হয়নি।
আরও পড়ুন: মান উন্নয়নের জন্য শিক্ষাখাত ঢেলে সাজাতে হবে
প্রাক্-প্রাথমিক ও প্রারম্ভিক শিক্ষাকে জাতীয়ভাবে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদ।
চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তাপ্রধান শাঈখ সিরাজ চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবিলায় কারিগরি শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী করোনাকালে প্রাক্-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে বলেছেন।
আরও পড়ুন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চাপও শিক্ষার্থী আত্মহত্যার কারণ
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেছেন, করোনার সংক্রমণের কারণে স্বাস্থ্য খাতে যে মহামারি চলছে, সেটি সবাই জানে। কিন্তু শিক্ষায় মহামারি নীরবে হচ্ছে। সবাইকে একত্র হয়ে শিক্ষার এই মহামারি মোকাবিলা করতে হবে।
ওয়েবিনার আলোচলায় গণসাক্ষরতা অভিযানের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান শিক্ষা খাতের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে বলেছেন, বর্তমানে দেশের সাক্ষরতার হার ৭৫ শতাংশের বেশি, যা স্বাধীনতার পর ছিল মাত্র ১৬ শতাংশ। সাক্ষরতার হারে এগিয়ে গেলেও এখনো ২৫ লাখ শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ের বাইরে রয়ে গেছে। ঝরে পড়ার হারও কমেছে। ২০১০ সালে যেখানে প্রাথমিকে প্রায় ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ত, এখন সেই হার ১৮ শতাংশ। তবে করোনাকালের প্রভাবে এই হার কেমন হয়, সেটি এখনো নিরূপণ হয়নি।
আরও পড়ুন: আগামী বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়ছে: শিক্ষামন্ত্রী
সরকারের করা জাতীয় শিক্ষার্থী মূল্যায়নের (এনএসএ) তথ্য তুলে ধরে মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেছেন, বাংলা ও গণিতে কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা অর্জনের পরিস্থিতি আগের চেয়েও খারাপ হয়েছে। ২০১৩ সালে তৃতীয় শ্রেণিতে বাংলায় দক্ষতা অর্জনের হার ছিল ৭৫ শতাংশ, সেখানে ২০১৫ সালে তা কমে হয় ৬৫ শতাংশ। ২০১৩ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে গণিতে কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা অর্জনের হার ছিল ৩৪ শতাংশ, তা ২০১৫ সালে এসে দাঁড়ায় ১০ শতাংশে।
ওয়েবিনার অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য দিয়েছেন ঢাকা আহসানিয়া মিশনের নির্বাহী পরিচালক এম এহছানুর রহমান, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও সাংসদ আরমা দত্ত।