করোনায় ঝরে পড়ার পথে ৫০ হাজার স্কুল শিক্ষার্থী
বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর প্রভাবে চট্টগ্রামে ঝরে পড়ার পথে হাঁটছে সম্ভাবনাময় ৫০ হাজারের মতো স্কুল শিক্ষার্থী। অবশ্য সাড়ে ১১ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী এরই মধ্যে চূড়ান্ত অর্থে ঝরে পড়েছে। অন্যরা স্কুল খুললেও শ্রেণিকক্ষে অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। বিষয়টি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাজনিত দীর্ঘ বিরতিতে বাল্যবিয়ে, আর্থিক অসচ্ছলতা এবং শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যাওয়া- মূলত এই তিন কারণে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে।
পড়ুন: শুধু কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডেই ঝরে পড়েছে ৬০ হাজার শিক্ষার্থী
এদিকে, শিক্ষার্থীদের ড্রপ আউট থেকে রক্ষা করতে এবং ক্লাসে তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নড়েচড়ে বসেছে চট্টগ্রামের শিক্ষা বিভাগ। বিদ্যালয়গুলোয় মনিটরিংসহ নানা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, প্রাথমিক স্তরে ঝরে পড়া রোধ করা না গেলে শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় সংকট দেখা দেবে। চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, করোনার ধাক্কায় শিক্ষার্থীদের এভাবে ঝরে পড়ার বিষয়টি উদ্বেগের। শিক্ষার্থীদের ড্রপ আউট ঠেকাতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
পড়ুন: এক উপজেলায় ঝরে পড়েছে ২ হাজার শিক্ষার্থী
চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলার ১৫ উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে পাঁচ লাখ ৪০ হাজার ৫০০-এর বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। এদের মধ্যে অর্ধলাখের মতো শিক্ষার্থী করোনার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও ক্লাসে অনিয়মিত হয়ে পড়েছে, না হয় অনুপস্থিত থাকছে।
চূড়ান্তভাবে ঝরে পড়া সাড়ে ১১ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর সঙ্গে কোনোভাবেই যোগাযোগ করতে পারেনি শিক্ষা বিভাগ। এদের বেশিরভাগই চট্টগ্রাম মহানগরের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থী।
পড়ুন: করোনায় শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার এখনো নিশ্চিত জানা যায়নি: শিক্ষামন্ত্রী
এদের মধ্যে সর্বোচ্চ এক হাজার ৫৩৬ শিক্ষার্থী নগরের চান্দগাঁও থানা এলাকার স্কুলের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এক হাজার ৩৫৬ শিক্ষার্থী রয়েছে নগরের পাহাড়তলী থানা এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। তৃতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে থাকা এক হাজার ৭৫ জন ডবলমুরিং থানা এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। উপজেলাগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ কর্ণফুলী উপজেলায় এক হাজার ৬৯ শিক্ষার্থী চূড়ান্তভাবে ঝরে পড়ার তালিকায় রয়েছে।
এছাড়া ঝরে পড়ার পথে হাঁটছে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ৮২১ জন, পটিয়ার ৬৮৪, হাটহাজারীর ৫৭৬ ও সীতাকুণ্ডের ৪৫১ শিক্ষার্থী। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলার উপজেলাগুলোতে সরকারি-বেসরকারিভাবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলিয়ে তিন হাজার ৭৪৮টি স্কুল আছে। এর মধ্যে মহানগরের ২১৫টিসহ জেলায় মোট প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে দুই হাজার ২৬৯টি।
পড়ুন: ঝুঁকিতে পড়েছে ৬০ লাখ শিক্ষার্থীর জীবন, ঝরে পড়ার আশঙ্কা
মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, প্রতি সপ্তাহে আমি নিজে কয়েকটি স্কুলে সরেজমিন পরিদর্শনে যাচ্ছি। অভিভাবকসহ সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে তাদের মতামত নিচ্ছি। সচরাচর বছরের শেষ সময়ে ঝরে পড়াদের নিয়ে কাজ করা হয়। কিন্তু এবার করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আগেভাগেই করতে হচ্ছে।