শিক্ষককে জমিসহ ঘর উপহার দিলেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রইস উদ্দিন টিপু শিক্ষকতা থেকে অবসর গ্রহণের পর অভাব-অনটনের সংসার চালাতে গিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েন। নিজের পরিবারকে বাঁচাতে হোটেলে কাজ নেন তিনি। বিষয়টি নজরে আসার পর তাকে জমিসহ ঘর উপহার দিয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। বাড়িটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘প্রতিশ্রুতি ভিলা’।
শুক্রবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে চারটায় আনুষ্ঠানিকভাবে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রইস উদ্দিন টিপুকে জমিসহ ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। এর আগে ওই শিক্ষকের হোটেলে কাজ করার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনা হয়। বিষয়টি তার প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে নাড়া দেয়।
আরও পড়ুন: ঢাবিতে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার দাবিতে বড় আন্দোলনের আভাস
জানা গেছে, রইস উদ্দিন টিপু ১৯৯৭ সালে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রুকিন্দীপুর ইউনিয়নের কানুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। দীর্ঘদিন পর তিনি সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে উন্নীত হন। ২২ বছর শিক্ষকতা জীবন পার করার পর ২০১৮ সালে তিনি অবসরে যান।
কিন্তু অবসর জীবনে পা দিয়েই সংসারে শুরু হয় অভাব-অনটন। স্ত্রী ও দুই মেয়েসহ চারজনের সংসার চালাতে বেকায়দায় পড়েন তিনি। শেষে স্থানীয় একটি হোটেলে দিনমজুরের কাজ শুরু করেন। এমন দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনা হয়।
তখন বিষয়টি তার প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে নাড়া দেয়। তারা প্রিয় শিক্ষককে হোটেলে কাজ করতে দেখতে চান না। তাই বসবাসের জন্য তাকে কিনে দেন একখণ্ড জমি এবং সেখানে নির্মাণ করা হয় বাড়ি। এমনকি বাড়ি নির্মাণের আগে তিনি যে বাসায় ভাড়া থাকেন, ওই বাসার ভাড়াও দিচ্ছিলেন শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন: ছাত্রী হলের সামনে অনৈতিক কর্মকাণ্ড, দেখে ফেলায় যুবককে মারধর
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রইস উদ্দিন টিপু বলেন, শিক্ষকতা থেকে অবসরের পর আমি সংসার চালাতে গিয়ে অভাব-অনটনে পড়ি। এরপর ঢাকায় যাই। সেখানে একটি কাজ নিই। করোনাভাইরাসের কারণে আবার বাড়িতে চলে আসি। বাড়িতে এসে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আবারও খুব কষ্টে পড়ে যাই। কোনো উপায় না পেয়ে শহরের একটি রেস্টুরেন্টে কাজ নিই। সেখানে সাত মাস কাজ করি। প্রতিমাসে বেতন হিসেবে তিন হাজার টাকা পেতাম। বেতনের টাকা দিয়ে শহরের বিশ্বাসপাড়া এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বসবাস করতাম।
আমার রেস্টুরেন্টে কাজ করার ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এমন দৃশ্য দেখে আমার প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা আমার খবর নেয়। এরপর তারা আমাকে বিভিন্নভাবে উপকার করে। জমি কিনে সেখানে ইটের ঘর নির্মাণ করে দেয়। তাদের এই উপকার আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।
রইচ উদ্দিন স্যারের সহায়তায় গঠিত প্রাক্তন শিক্ষার্থী সমিতির আহ্বায়ক হিরো রহমান বলেন, জমি কেনা থেকে বাড়ি করা পর্যন্ত প্রায় সাত লাখ টাকা লেগেছে। বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, বিদ্যালয় শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি ও দানশীল ব্যক্তিদের কাছ থেকে এই টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ছাত্রলীগের হুমকি, জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে শিক্ষিকার আবেদন
আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম হাবিবুল হাসান বলেন, একজন শিক্ষকের বিপদে যেভাবে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা এগিয়ে এসেছে, তা নতুনদের জন্য একটি ম্যাসেজ দিল যে শিক্ষা গুরুর অবস্থান অনেক ওপরে হওয়া উচিত। এই ঘটনা থেকে শুধু ওই এলাকায় নয়, সারা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের শেখার অনেক কিছু আছে।
শিক্ষক রইস উদ্দিন টিপুকে দেওয়া ‘প্রতিশ্রুতি ভিলার’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুর রহমান, আক্কেলপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ মোকছেদ আলী, সাধারণ সম্পাদক ও রুকিন্দীপুর ইউপি চেয়ারম্যান আহসান কবির এপ্লব, কানুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ কে এম মোস্তাফিজার রানা প্রমুখ।