১১ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪:৩২

শৈশব-কৈশোরে কেমন ছিলেন আবরার হত্যা মামলার আসামিরা?

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার হত্যার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা  © সংগৃহীত

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) দেশের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। যেখানে ভর্তি হতে অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে আসতে হয়। কঠিন ভর্তিযুদ্ধ মোকাবিলা করার পরেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ মেলে। তুখোড় মেধাবী না হলে যা একেবারে অসম্ভব।

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার হত্যার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সবাই একই ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী-সহপাঠী। পাশাপাশি অভিযুক্ত অধিকাংশই সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তবে, ছাত্ররাজনীতিতে জড়িয়ে শীর্ষ মেধাবীরা কেন বিপথগামী হয়েছে এমন প্রশ্ন অনেকের।

পড়ুন: আবরার হত্যা মামলায় ২০ আসামির মৃত্যুদণ্ড

গত বুধবার (৮ ডিসেম্বর) আদালত ২৫ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে আবরার হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেছেন। উচ্চশিক্ষায় এসে খুনি হওয়া মেধাবী শিক্ষার্থীরা শৈশব-কৈশোরে কেমন ছিলেন জানতে চান অনেকে। তাদের আচার-আচরণ সম্পর্কেও অনেকের জানার আগ্রহ।

পড়ুন: নিজেদের নির্দোষ দাবি করলেন আবরার হত্যা মামলার ২২ আসামি

আবরার হত্যা মামলার অভিযুক্ত আসামি দিনাজপুর থেকে উঠে আসা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনির বুয়েটে পানি সম্পদ ও প্রকৌশল বিভাগে চান্স পান। এসএসসিতে জিপিএ ৫ পাওয়া মেধাবী মনির নিজ এলাকায় মাঝেমধ্যে গেলেও বাজারের দোকান-পাটে কম যাতায়াত করতেন। বিকেলে ছোটদের সঙ্গে খেলাধুলা করতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পূর্বে তিনি কোন ধরনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না বলেই স্থানী বাসিন্দারা  জানিয়েছেন।

পড়ুন: আবরার হত্যা: শেষ চার ঘণ্টার নৃশংসতার চিত্র

রংপুরের মিঠাপুকুর এলাকার সন্তান মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন  স্কুল- কলেজে বেশ ভদ্র ছেলে ছিলেন। বুয়েটে ভর্তির পর অত্যন্ত মেধাবী জিয়নের আচার-আচরণে আমূল পরিবর্তণ আসে। স্থানীয়রা পরে জানতে পারে সে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক।

শৈশবে বাবা হারানো ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না এসএসসি ও এইচএসসি দুটোতেই জিপিএ-৫ পেয়েছেন। হত্যার দিন সে নিজ এলাকা হবিগঞ্জের স্থানীয় একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে ছিলেন উল্লেখ করে এ ঘটনায় ছেলে নির্দোষ বলে দাবি করেছে তার মা। তিনি বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন।

পড়ুন: আবরার হত্যা নিয়ে বিবৃতি, জাতিসংঘের প্রতিনিধিকে তলব সরকারের

অনিক সরকার রাজশাহীতে থাকাকালীন কখনো রাজনীতি করেননি। শান্ত স্বভাবের ছেলে ছিল অনিক, বলছেন তার পরিচিতজনরা। খেলাধুলা ভীষন পছন্দ করতেন তিনি। পাশাপাশি পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে ছিল খুব ভালো সম্পর্ক। তার বড় ভাই সোহেল সরকার জানিয়েছেন ভার্সিটির বড় ভাইদের চাপে পড়ে সে রাজনীতিতে জড়িয়েছে। ক্যাম্পাসে সংগঠনটির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন অনিক। 

পড়াশোনায় ভীষণ মনযোগী ছিলো রাজশাহী শহরে বেড়ে উঠা মেহেদী হাসান রবিন, যার ডাক নাম শান্ত। ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়া বিনয়ী শান্ত ছিল নামের মতোই খুব শান্ত-শিষ্ট স্বভাবের। টিভিতে খেলাধুলা দেখতে তিনি পছন্দ করতেন।  তিনি ছাত্রসংগঠনটির বুয়েট শাখার সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন।

মামলার প্রধান আসামি বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। ফরিদপুরে জন্ম নেওয়া মেহেদী রাসেল ঢাকায় পড়াশোনা করেছেন। ঘটনার দিন তিনি নেত্রকোনায় ছিলেন বলে ছেলেকে নির্দোষ দাবি করেছেন তার আবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য বাবা।

এছাড়াও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি অমিত সাহার মা ছেলেকে নির্দোষ দাবি করে জানিয়েছেন সে শুধু মেসেঞ্জারে বার্তা পাঠিয়েছিল। এ ঘটনায় সে সম্পৃক্ত না।

দণ্ডপ্রাপ্ত আরেক আসামি মুয়াজের বাবা মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম বলেছেন এটা একটা আকস্মিক ঘটনা। দেখুন, কেউই পেশাদার খুনি না। সবাই মেধাবী ছাত্র।

উল্লেখ্য, ফেসবুকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি নিয়ে নিজের মতামত জানানোর পর কিছু ছাত্রলীগ নেতাকর্মী আবরার ফাহাদকে হলের রুমে ডেকে নিয়ে বেদম পিটিয়ে হত্যা করে। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে বাংলাদেশ প্রকোশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে। তারা সবাই বুয়েট ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী।

এদিকে নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় তাদের সবাইকে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কমিটি থেকে তাৎক্ষণিকভাবে বহিষ্কার করা হয়।  এরপর ক্যাম্পাসটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ করা হয় ছাত্ররাজনীতি।