বাগেরহাটে দেড় বছরে ৩ হাজার বাল্যবিয়ে
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২১, ১২:১৯ PM , আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২১, ১২:১৯ PM
করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দীর্ঘ বন্ধে যেন বাল্যবিয়ের হিড়িক পড়েছে বাগেরহাটে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের এই জেলাতে আশঙ্কাজনক হারে বাল্যবিয়ে বেড়ে যাওয়ার খবর এসেছে সরকারি তথ্যে। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য মতে, গত ১৮ মাসে জেলায় তিন হাজার ১৭৮ জন স্কুল শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। এরকম পরিস্থিতিতে বাল্যবিয়ে বন্ধে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে সচেতন মহল।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনার সংক্রমণ শুরুর পর ২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে চলতি বছরের ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেলার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ৫২২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তিন হাজার ১৭৮ শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়েছে। এদের সবারই বয়স ১৮ বছরের নীচে।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান জানান, আমাদের নির্দেশে জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাজিরা খাতাসহ শিক্ষকরা বিভিন্নভাবে করোনাকালীন সময়ে বাল্যবিয়ের তথ্য সংগ্রহ করেছেন। শিক্ষকদের তথ্য অনুযায়ী, ৫২২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তিন হাজার ১৭৮ শিক্ষার্থীর বিয়ের তথ্য পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে কচুয়া উপজেলায় সর্বোচ্চ ৫১৬ জন স্কুলছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়েছে। ৪৯৭টি বাল্যবিয়ের ঘটনা নিয়ে এরপরে রয়েছে সদর উপজেলার স্থান। পাশাপাশি চিতলমারীতে ৪০৭, ফকিরহাটে ৩৯১, মোল্লাহাটে ৩৪৪, মোরেলগঞ্জে ৩৫৫, রামপালে ২৩৭, মোংলায় ২১৮ এবং শরণখোলায় ২১৩ টি বাল্যবিয়ে হয়েছে।
এর বাইরে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়েও বহু শিক্ষার্থীদের বাল্যবিয়ে হয়েছে। তবে এর সংখ্যা সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিতে পারেনি কোনও দফতর।
জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের কাছে জানতে চাওয়া হয়, করোনার বন্ধের সময়ে তারা কতটি বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে পেরেছেন। কিন্তু ১০ দিন সময় নিয়েও সেই তথ্য দিতে পারেননি সংস্থার উপ-পরিচালক মনোয়ারা খানম।
জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে জেলায় পাঁচ হাজার ৭৩৯ বিয়ে হয়েছে। এই সময়ে দুই হাজার ৭৯৯ তালাক হয়েছে। তবে রেজিস্ট্রারদের মাধ্যমে হওয়া সব বিয়েতে সরকারি বয়সসীমা মানা হয়েছে বলে দাবি করেছেন জেলা রেজিস্ট্রার।
মাত্র দেড় বছরে জেলায় এত সংখ্যক বাল্যবিয়ে হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও অভিভাবকদের অসচেতনতাকে দায়ী করেছে সচেতন মহল।
তারা বলেন, বাল্যবিয়ে বন্ধে জেলায় মহিলা বিষয়ক অধিদফতর ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, নারী সংগঠন, জেলা মহিলা সংস্থা, মহিলা পরিষদসহ নানা সংগঠন কাজ করে। এক জেলায় এতগুলো বাল্যবিয়ে হলো অথচ তারা খবরই রাখলো না।
বাগেরহাট পৌরসভার প্যানেল মেয়র তানিয়া খাতুন বলেন, করোনাকালীন দরিদ্র ও বস্তিবাসীর মধ্যে বাল্যবিয়ে বেড়েছে। বাল্যবিয়ে বন্ধের জন্য সচেতনতামূলক কোনও কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি। নিম্নআয়ের মানুষ ও বস্তিবাসীকে সচেতন করতে পারলে বাল্যবিয়ে কমবে।
জেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান আইনজীবী শরিফা খানম বলেন, করোনাকালীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এ সুযোগে মুঠোফোনে অতিরিক্ত আসক্তি, সচেতনতার অভাব ও দারিদ্র্যের কারণে বাল্যবিয়ে বেড়েছে। এটি নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, বাল্যবিয়ের বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। ইতোমধ্যে সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বাল্যবিয়ে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি। যেখানেই বাল্যবিয়ের খবর পাবেন সেখানে গিয়ে বন্ধ করবেন নির্বাহী কর্মকর্তারা। এ ছাড়া রেজিস্ট্রার ও স্থানীয় ইমামদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। যদি কোনও নিকাহ রেজিস্ট্রার বাল্যবিয়ে পড়ান তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।