শিক্ষক-সহপাঠীদের না চিনেই বছর পার

খালি শ্রেণিকক্ষ
খালি শ্রেণিকক্ষ  © ফাইল ছবি

করোনা মহামারির মধ্যে এসএসসি পাস করে গত আগস্ট-সেপ্টেম্বরে কলেজে ভর্তি হয়েছে শিক্ষার্থীরা। অথচ এখনো পর্যন্ত একটি দিন তারা পা রাখতে পারেনি কলেজ ক্যাম্পাসে। দেখা পায়নি শিক্ষকদের, সহপাঠীদের সঙ্গে আড্ডা দিতে পারেনি। অথচ প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কত স্বপ্নই না থাকে কলেজ জীবন নিয়ে। সারদেশের প্রায় ১৭ লাখ শিক্ষার্থীর এই অবস্থা।

পুরান ঢাকার প্রায় ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী পোগোজ ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজেরও একই অবস্থা। বিদ্যালয়টিতে গত বছর থেকে একাদশ শ্রেণির পাঠ শুরু হয়েছে। প্রথম বছরে ভর্তি হওয়া ২৬ জন শিক্ষার্থী কলেজজীবনের প্রথম বছর প্রায় পার করে ফেলেছে। অথচ এখনো পর্যন্ত তারা ঠিকমতো জানেই না কে তাদের শিক্ষক, সহপাঠীই বা কারা।

দেখা গেছে, অনলাইনে ক্লাস হলেও তা মোটেও পর্যাপ্ত নয় শিক্ষার্থীদের জন্য। শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী সামনের বছরের এপ্রিলে এসব শিক্ষার্থীর এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা রয়েছে। ক্লাস-পরীক্ষা না হওয়ায় উচ্চশিক্ষার ভিত যে কলেজ শিক্ষা, সেখানে থেকে যাচ্ছে ভয়ানক দুর্বলতা।

বেসরকারি সংস্থা গণসাক্ষরতা অভিযানের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, করোনাকালে বিভিন্ন পর্যায়ে অনলাইন, বেতার, টেলিভিশনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে দূরশিক্ষণের যে ব্যবস্থা করা হয়েছে, তার আওতায় এসেছে মাত্র ৩১ শতাংশ শিক্ষার্থী।

পোগোজ স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী বর্ষা নন্দী বলেন, ‘কলেজে ক্লাস করা এবং নতুন বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার যে সুন্দর অনুভূতি, তা থেকে আমরা পুরোপুরি বঞ্চিত হয়েছি। কলেজে যেতে পারলে শিক্ষকদের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের ভাবনা আদান-প্রদানের একটা সুযোগ থাকত এবং সহপাঠীদের সঙ্গে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠত। অথচ এখনো শিক্ষকেরা আমাদের চেনেন না, আমরাও তাদের চিনি না।' ঠিকমতো ক্লাস না করে আগামী বছর এইচএসসি পরীক্ষায় কীভাবে বসবে তা নিয়ে সে উদ্বিগ্ন।

এক কলেজ অধ্যক্ষ বলেন, 'প্রথমবারের মতো কলেজ পর্যায়ে ছেলেমেয়েরা ভর্তি অথচ সামনে হলো, অথচ তাদের সামনে বসিয়ে একটি ক্লাসও নিতে পারলাম না। এর চেয়ে আর বড় দুঃখ আর কী হতে পারে?’

লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির মানবিক শাখার শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসেন হৃদয় বলেন, 'আমাদের চার শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। এত দিন পার হলেও ভালো করে কারও চেহারাও দেখা হয়নি। ফেসবুক লাইভে ক্লাস চলে। চিনি। শিক্ষকদের, না চিনি ক্লাসমেটদের। সবই কৃত্রিম কৃত্রিম লাগে। কোনো পরীক্ষা দেওয়ার অভিজ্ঞতা ছাড়া এইচএসসি পরীক্ষায় ওপরওয়ালাই জানে কী হবে।

এতে করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষণে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তারিক আহসান বলেন, এসব শিক্ষার্থী পরবর্তী সময়ে যখন উচ্চশিক্ষা ও পেশাগত জীবনে যাবে, তখন এই দুর্বলতাটা থেকে যাবে’

শিক্ষক শিক্ষার্থীরা যে অচেনা থেকে যাচ্ছে, সেটাকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে তা মোকাবিলার জন্য বিভিন্ন দেশের মতো এলাকাভিত্তিক শিক্ষণ চক্র গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ