শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, খেলার মাঠ ছেড়ে মোবাইলে আসক্ত শিক্ষার্থীরা
করোনার শুরু থেকে এ পর্যন্ত প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে দেশের সকল স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ঘরবন্দী হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। এসময়ে তারা খেলার মাঠে যেতে না পারায় ঝুঁকছে মোবাইল, ট্যাব আর কম্পিউটারে ইন্টারনেটের পর্দায়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকলে তারা খেলার মাঠে নানান হৈ হুল্লোড় করতো কিন্তু এখন তারা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে অবাস্তবিক হয়ে পড়ছে। এতে করে প্রভাব পড়ছে তাদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে।
শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলার বিকল্প না থাকলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ঘরবন্দি হয়ে থাকতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী হয়তো এরই মাঝে খোলা মাঠে বিনোদন খুঁজে নিচ্ছে। তবে বেশিরভাগই ইন্টারনেট আর টিভি দুনিয়ায় মত্ত। এতে শিক্ষার্থীরা বাস্তবিক জগৎ থেকে সরে যাচ্ছে অনেক দূরে।
তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হলে ক্রীড়া কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নেবে বলে জানিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। এজন্য একটি রোডম্যাপ করেছে অধিদপ্তর।
ইতোমধ্যে মাধ্যমিক, নিম্ন মাধ্যমিক, দাখিল ও ভোকেশনাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য বার্ষিক ক্রীড়াসূচি ও কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে তা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে পাঠিয়েছে মাউশি।
অধিদপ্তরের উপপরিচালক (শারীরিক শিক্ষা) মো. আক্তারুজ্জামান ভূঞা বলেন, দীর্ঘ দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। এতে শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশেও প্রভাব পড়ছে। পড়াশোনার সাথে সাথে খেলাধুলাকেও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে, এজন্য রোডম্যাপ করা হয়েছে।
রোডম্যাপে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললে ক্রীড়া কার্যক্রম শুরুর করার সার্বিক প্রস্তুতি নিতে হবে। এজন্য প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শারীরিক শিক্ষা বিভাগ, ক্রীড়াকক্ষ, কমনরুম ধুয়ে মুছে জীবাণুনাশক স্প্রে এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে ক্রীড়া কার্যক্রম শুরু করার প্রস্তুতি নিতে হবে। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জিমনেশিয়াম, খেলার মাঠ ক্রীড়া কার্যক্রম চালু করার উপযোগী করে তুলতে হবে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রেণি কার্যক্রম চালু হলে ক্লাস শুরুর আগে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে দৈনিক সমাবেশ এবং জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন বাধ্যতামূলকভাবে করতে হবে।
সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সময়সূচি নির্ধারণ করে শারীরিক শিক্ষা বিভাগকে অবহিত করতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বাধ্যতামূলকভাবে অংশ নিতে হবে। এজন্য শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়ায় অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে।
সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, যুবদিবস, জাতীয় ক্রীড়া দিবস, জাতীয় শিশু দিবসে খেলাধুলার আয়োজন করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিভিন্ন ক্লাসের শিক্ষার্থীদের আলাদা আলাদা ইভেন্ট নিয়ে টিম গঠন করতে হবে। ইভেন্টগুলো হলো—ফুটবল, হ্যান্ডবল, কাবাডি, ক্রিকেট, বাস্কেটবল, ভলিবল, হকি, রাগবি, ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস, আর্চারি, অ্যাথলেটিক (৩৫টি ইভেন্ট), সাঁতার (১১টি ইভেন্ট), তায়কোয়ান্দো, সাইক্লিং এবং দাবা।
প্রতিষ্ঠানের সারা বছরের ক্রীড়া কর্মসূচি প্রণয়ন করে একাডেমিক ক্যালেন্ডারে অন্তুর্ভুক্ত করতে হবে। সারা দেশের শারীরিক শিক্ষার শিক্ষকদের একটা ডাটাবেইজ তৈরি করতে হবে। এজন্য ওয়েবসাইট করতে হবে।
প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্কাউট দল, রোভার স্কাউট, বিএনসিসি এবং গার্লগাইড দল গঠন করে নিয়মিত কার্যক্রম অব্যাহত রাখার নির্দেশনাও দিয়েছে মাউশি।
আর ও দেখুন: ‘শিক্ষার্থীদের মেধা-মননকে নষ্ট করে দিচ্ছে অটো প্রমোশন’