ক্লাসে ফেরা অনিশ্চিত, মানসিক চাপে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা

ক্লাসে ফিরতে চায় শিক্ষার্থীরা
ক্লাসে ফিরতে চায় শিক্ষার্থীরা  © সংগৃহীত

করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এতে শিক্ষার্থীদের বাড়ছে মানসিক চাপ। অনেকেই এটা সহ্য করতে না পেরে করছেন আত্মহত্যা। রেকর্ড সংখ্যক দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনিশ্চয়তায় সময় কাটছে প্রাথমিক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের।

আশঙ্কাজনক যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের পর গত ১৫ মাসে অন্তত ১৫১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এর মধ্যে ৭৩ জন স্কুলশিক্ষার্থী, ৪২ জন বিশ্ববিদ্যালয়-মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী, ২৭ জন কলেজ শিক্ষার্থী ও ২৯ জন মাদরাসা শিক্ষার্থী। এদের বেশির ভাগের বয়স ১২ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। গত বছর ১৮ মার্চ থেকে চলতি বছর ৪ জুন পর্যন্ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

মনোরোগ চিকিৎসক ও গবেষকরা বলছেন, করোনাকালে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত জীবনের ওপর মানসিক চাপ বাড়ছে। পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশা, পরিবারের শাসন, কোনো কিছুর বায়না ধরে না পাওয়া, প্রেমঘটিত টানাপোড়েন, আর্থিক সংকট, বিষন্নতা ও একাকিত্বসহ ছোট ছোট সমস্যায়ও অনেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে তারা তুচ্ছ ঘটনায়ও আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাবোধ করছে না।

শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি উদ্বিগ্ন অভিভাবকরাও। এত দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে না যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের অনেকেই আগের মতো স্বাভাবিকভাবে ক্লাসে যেতে পারবে কি না তা নিয়ে মা-বাবারা দুশ্চিন্তায় আছেন। করোনা সংক্রমণের জন্য কোমলমতি অনেক শিক্ষার্থীকে স্কুলে ভর্তি করানোর বয়স হলেও অভিভাবকরা এখনো তাদের স্কুলে দেননি। আবার ক্লাস না থাকায় সময় কাটাতে শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ অনলাইনে বিভিন্ন অ্যাপস, যেমন ‘টিকটক’, ‘লাইকি’তে অশ্লীল ভিডিও তৈরি করছে। কেউ কেউ মাদকে আবার অনেকে অনলাইন ভিডিও গেমে আসক্ত হয়ে পড়েছে।

কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, ‘দেড় বছর ধরে ছেলে ক্লাসে যায় না। সারা দিন বন্ধুদের সঙ্গে পাড়ায় আড্ডা দেয়। রাত করে বাসায় ফেরে। সারা রাত ফেসবুক আর ভিডিও গেম খেলে ভোরে ঘুমায়। দুপুরে ঘুম থেকে ওঠে। লেখাপড়ার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। স্কুল খুললে ঠিকমতো ছেলে ক্লাসে যাবে তো? এটি ভেবেই এখন ভয় হচ্ছে!’

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার একটি জাতীয় দৈনিককে বলেন, অনলাইনে ক্লাস, সামাজিক যোগাযোগ এবং বিনোদন সবই ইন্টারনেটভিত্তিক হয়ে পড়া শিশুর জন্য নেতিবাচক। কারণ এতে একটি শিশু বেশি সময় অনলাইনেই কাটাচ্ছে। ফলে শিশুর ওপর আলাদাভাবে মানসিক চাপ পড়ার আশঙ্কা আছে। এ জন্য শিশুর সামাজিক যোগাযোগ ও বিনোদন অনলাইনে না করে তা বিকল্প ব্যবস্থায় করা যায় কি না এটি ভাবতে হবে। বিশেষ করে শিশুকে নিয়ে পারিবারিকভাবে গল্প করা এবং পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একত্রে মিলে কোনো কাজ করা যেতে পারে।

প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর প্রায় ১৫ মাস ধরে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের অনেকেই এখন সরকারের কাছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। সর্বশেষ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

রিলেটেড সংবাদ: 

এসএসসি-এইচএসসির জন্য প্রয়োজনে ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার নির্দেশনা পায়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর


সর্বশেষ সংবাদ