অপরিকল্পিতভাবে বাড়ছে ছুটি, টিকার উদ্যোগেও নেই গতি

শিক্ষার্থী
শিক্ষার্থী  © সংগৃহীত

করোনা মহামারির শুরুর দিকে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিয়মিত বিরতিতে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের মেয়াদ বাড়ানোর খবর জানাচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাঁরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার অপেক্ষায়, তাঁরা আশাহত হচ্ছেন। জাতিসংঘের সংস্থা ইউনিসেফ সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানায়, বিশ্বে বেশি দিন স্কুল বন্ধ থাকা ১৪টি দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ।

শিক্ষাবিদেরা ধাপে ধাপে খোলার পরামর্শ দিলেও মন্ত্রণালয় চায় একসঙ্গে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে। কিন্তু সেটিও বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। আবার শিক্ষার্থীদের টিকা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজেও খুব একটা গতি নেই। শিক্ষক ও শিক্ষাবিদেরা বলছেন, এটা ঠিক যে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ঝুঁকিপূর্ণ। তবে করোনা দীর্ঘস্থায়ী হলে বিকল্প ব্যবস্থা ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা কী, তা জানিয়ে দেওয়া উচিত।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘ বন্ধের ফলে উচ্চশিক্ষায় সেশনজট বাড়ছে। শিক্ষার্থীদের একাংশ বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দাবিতে আন্দোলনও করেছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষামন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন ২৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে ক্লাস শুরু হবে। তার আগে ১৭ মে আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়া হবে।

পরিকল্পনা ছিল, হল খোলার আগেই আবাসিক শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীকেই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে করোনাভাইরাসের টিকার আওতায় নিয়ে আসা হবে। প্রথমে আবাসিক শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হবে।

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে মোট ২২০টি আবাসিক হল রয়েছে। এগুলোতে আবাসিক শিক্ষার্থী প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষক ১৫ হাজার ৫২৪ জন। টিকার জন্য সম্প্রতি ৩৮টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে থাকাদের মধ্যে ১ লাখ ৩ হাজার শিক্ষার্থীর তথ্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়, যাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ হাজার ১৩০ জন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ হাজার ২৫৪ জন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ হাজার ৬৩০ জন এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ১ হাজার ৯৮৭ জন রয়েছেন। বাকিরা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের। তবে এসব শিক্ষার্থীকে কবে ও কীভাবে টিকা দেওয়া হবে, তা এখনো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানাতে পারেনি বলে ইউজিসির এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

অবশ্য কিছুদিন আগে সচিবালয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এবার টিকার ক্ষেত্রে মেডিকেল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অগ্রাধিকার পাবেন।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ২ হাজার ২৬০টি কলেজে প্রায় ২৯ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। এসব কলেজে, বিশেষ করে সরকারি কলেজগুলোতে আবাসিক ছাত্রাবাস রয়েছে। এ ছাড়া বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ভাড়াবাড়িতে ‘মেস’ করে থাকেন। এঁদের টিকা দেওয়ার বিষয়েও এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য মশিউর রহমান বলেন, কলেজগুলোর শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে কতজন করোনার টিকা নিল, কতজন নেয়নি, সেসব তথ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় চেয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ১ হাজার ৮০০ কলেজের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

রিলেটেড সংবাদ: 

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণের তাগিদ

অপরিকল্পিত ছুটির পদক্ষেপ দেখে হতাশ সাবেক শিক্ষা কর্মকর্তা


সর্বশেষ সংবাদ