বাজেটে শিক্ষা খাত গুরুত্ব পায়নি, মত বিশেষজ্ঞদের

আজ জাতীয় সংসদে বাজেট প্রস্তাব উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল
আজ জাতীয় সংসদে বাজেট প্রস্তাব উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল  © সংগৃহীত

সদ্য ঘোষিত প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা খাতে ৭১ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আগের বছরের তুলনায় বরাদ্দ বাড়ছে ৫ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা। আজ বৃহস্পতিবার (৩ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে এ বাজেটে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা খাতা গুরুত্ব পায়নি বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞরা।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তব্যে বলেছেন, ২০২০-২১ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৬৬ হাজার ২০৭ কোটি টাকা। এ হিসেবে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বেড়েছে পাঁচ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা। আর শতাংশের হিসাবে শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে আট দশমিক ৬৭ শতাংশ। এবার ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল।

শিক্ষাবিদ ও গবেষকরা বলছেন, করোনায় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষা খাত। তারা আশা করেছিলেন, এ খাতের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রাখবে সরকার। তবে তার ধারেকাছেও যায়নি। বরং বাজেটে শিক্ষা খাতের বরাদ্দ দেখে মনে হয়েছে, করোনায় এ খাতের কোনো ক্ষতিই হয়নি।

শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, বাজেটে শিক্ষায় যেটি বাড়ানো হয়েছে তা অত্যন্ত সামান্য। আমরা আশা করেছিলাম শিক্ষা খাতে বরাদ্দের উল্লম্ফন ঘটবে, কিন্তু সেটি হচ্ছে না।

এটি দুর্ভাগ্যজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেছিলেন, শিক্ষা খাতে জিডিপির চার শতাংশ বরাদ্দ চান তিনি। কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন বলেছে, বাজেটের পাঁচ থেকে সাত শতাংশ বরাদ্দ দরকার শিক্ষা খাতে। বঙ্গবন্ধুর দল ক্ষমতায় থাকলেও তারা শিক্ষা খাতে বাজেটের দুই শতাংশের বেশি বরাদ্দ দিচ্ছে না।’ এ মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা খাতে কয়েক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, বাজেট দেখে মনেই হয়নি, করোনায় শিক্ষার ক্ষতি হয়েছে। অন্য খাতের মতো শিক্ষার ক্ষতি দেখা যাচ্ছে না। নীতিনির্ধারকরা বাজেটে শিক্ষা খাতকে গুরুত্ব দেয়নি। বেসরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে মধ্যবিত্তের সন্তানরা পড়ালেখা করলেও সেখানে ১৫ শতাংশ করারোপ করা হয়েছে। বেসরকারি ব্যবসায়ীরা প্রণোদনা পাচ্ছে, আর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে করা রোপ করা হচ্ছে।

এটিকে অন্যায় হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন,  শিক্ষার ক্ষতি পোষাতে না পারলে ভবিষ্যতে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। এ খাতে গুরুত্ব দেওয়া না হলে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ডুববে।

আইটিতে এ বছর আরো ১০ লাখ কর্মসংস্থান হবে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দ  অপর্যাপ্ত। শিক্ষায় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। কারখানা বন্ধ হলে, শ্রমিকরা বিদেশে যেতে না পারলে সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি আমরা। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হচ্ছে না। মনে হয় এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন নন কেউ। এর মাধ্যমে আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয় না, শিক্ষায় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না।’

আজ অর্থমন্ত্রীর ঘোষিত বাজেটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ২৬ হাজার ৩১১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। গত অর্থবছরে ছিল ২৪ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ব্যয়ের জন্য ৩৬ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব আনা হয়েছে। গত অর্থবছরে ছিল ৩৩ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। এ বিভাগে তিন হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এদিকে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগে ৮০৯ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভাগটির জন্য এবার নয় হাজার ১৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করেছে। গত অর্থবছরে ছিল আট হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা।


সর্বশেষ সংবাদ