বাজেটের ২৫ ভাগ শিক্ষাখাতে বরাদ্দের দাবিতে জয়পুরহাটে ছাত্র ফ্রন্টের সমাবেশ
- জেলা প্রতিনিধি, জয়পুরহাট
- প্রকাশ: ২৫ মে ২০২১, ১২:৪০ PM , আপডেট: ২৫ মে ২০২১, ১২:৪০ PM
শিক্ষা খাতে জাতীয় বাজেটের ২৫ ভাগ এবং সকল শিক্ষার্থীকে ভ্যাকসিন দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতির জন্য বাজেট বরাদ্দসহ চার দফা দাবিতে জয়পুরহাট জেলা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (২৫ মে) বেলা ১ টায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে জেলা ছাত্র ফ্রন্টের উদ্যোগে অর্থমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করেন জয়পুরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। এর আগে জেলা শহরের পাঁচুরমোড়ে একটি সমাবেশ কনে তারা।
জেলা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাশেদুজ্জামান রাশেদ এর সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন জেলা ছাত্র ফ্রন্টের সাবেক সভাপতি উৎপল দেবনাথ, জেলা ছাত্র ফ্রন্টের দপ্তর সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম, জেলা ছাত্র ফ্রন্টের সদস্য, শাহিদুল ইসলাম, জেলা ছাত্র ফ্রন্টের সদস্য সীমা পাহান প্রমূখ।
এরপর একটি প্রতিনিধি দল অর্থমন্ত্রী বরাবর জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, করোনা সংক্রমণের সারাদেশে একটি সংকটময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে কৃষি-স্বাস্থ্য- শিক্ষা সকল খাতেই বিশেষ আর্থিক বরাদ্দ প্রয়োজন। আগামী জুন মাসে ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেট প্রণয়ন করা হবে। বরাবরই অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে শিক্ষাখাতকে অবহেলা করা হয়। একটি দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে ও দেশকে এগিয়ে নিতে শিক্ষাখাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক। ইউনিসেফ এর প্রস্তাবনায় একটি দেশের জাতীয় আয়ের শতকরা ৮ ভাগ অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু প্রতি বছরেই শিক্ষাখাতের পর্যাপ্ত বরাদ্দকে উপেক্ষা করা হয়েছে।
বক্তারা আরও বলেন, গত দশ বছরে শিক্ষার ব্যয় এতো বেড়েছে যে প্রাথমিক স্তর শেষ করে মাধ্যমিক স্তরেই লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। সারাদেশে উচ্চ শিক্ষালাভের সুযোগ সংকুচিত করা হয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে গবেষণায় নামেমাত্র বরাদ্দের কারণে শুধু সার্টিফিকেট সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সংকট ক্রমাগত ঘনীভূত হচ্ছে। গত কয়েক বছরে দফায় দফায় শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে ফেটে পড়লেও সংকট নিরসনে পর্যাপ্ত বরাদ্দের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শর্ত না মেনে চললেও ইউজিসির অনুমোদন নিয়ে বছরের পর বছর ভর্তি ফি, টিউশন ফি নিয়ে উচ্চশিক্ষার নামে সার্টিফিকেট ব্যবসার অবাধ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এ সমস্ত সংকটের মধ্যে দিয়ে চলছিল আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। এর সাথে সংকট সৃষ্টি করছে করোনা।
এ বছরে করোনা সংক্রমণের কারণে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন হুমকীর মুখে পড়েছে। অর্থনৈতিক সংকটের এ সময়ে অসংখ্য পরিবারে যখন বেঁচে থাকাই কঠিন তখন শিক্ষাব্যয় নির্বাহ একটি বাড়তি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুঃস্থ এসকল শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ আর্থিক বরাদ্দ প্রয়োজন।
আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আবাসিক ব্যবস্থার অভাবে সারাদেশব্যাপী লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীকে মেস ভাড়া করে থাকতে হয় বলে উল্লেখ করেন বক্তারা। তারা বলেন, শহরের মেসগুলোতে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীরা বেশিরভাগই টিউশনি করে চলতো অনেকে পরিবারেও কিছুটা সহযোগিতা করতো। লক ডাউনে দুই মাস টিউশনি নেই। শিক্ষার্থীরা মেসে না থাকলেও মেস মালিকরা দু মাসের বকেয়া ভাড়া আদায়ের চেষ্টা করছে। অনেক মেস মালিক আবার এই মেসভাড়ার ওপর নির্ভরশীল। এই সংকট নিরসনে সংকটগ্রস্থ মেসের শিক্ষার্থীদেরকে মেসের ভাড়া পরিশোধের জন্য বিশেষ আর্থিক বরাদ্দ প্রয়োজন।
একই সাথে এ বছরের ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা - কর্মচারীদের জন্য আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা এবং অনলাইন ক্লাসের জন্য বিনামূল্যে ডিভাইস ও ইন্টারনেটের জন্য বাজেট বরাদ্দ করতে হবে।
বক্তারা পরিশেষে, শিক্ষাক্ষেত্রের এ সকল সংকট বিবেচনায় এনে আগামী ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে বাজেটের ২৫ ভাগ শিক্ষাখাতে বরাদ্দের দাবি জানায়।