দৃষ্টিত্রুটিতে দেশের ১৪ শতাংশ স্কুলশিক্ষার্থী

দৃষ্টিত্রুটিতে দেশের ১৪ শতাংশ স্কুলশিক্ষার্থী
দৃষ্টিত্রুটিতে দেশের ১৪ শতাংশ স্কুলশিক্ষার্থী  © সংগৃহীত

দেশের স্কুলশিক্ষার্থীদের প্রতি ১০০ জনের মধ্যে প্রায় ১৪ জনের দৃষ্টিত্রুটি রয়েছে। এই শিশুদের চোখের ত্রুটি সংশোধনের জন্য চশমা ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

ঢাকা, বরিশাল, জামালপুর ও নওগাঁর বিভিন্ন স্কুলের ৩২ হাজার ৭৪৮টি শিশুর চোখ পরীক্ষা করে এই তথ্য জানিয়েছে ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল। তাদের গবেষণা অনুযায়ী, চার জেলার মধ্যে রাজধানী ঢাকার শিশুদের দৃষ্টিত্রুটির হার সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৪০ শতাংশ।

এই গবেষণায় গবেষক দলের নেতা ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালের শিশু চক্ষুরোগ ও স্কুইন্ট (ট্যারা) বিভাগের প্রধান ডা. মো. মোস্তফা হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, স্কুলের শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিত্রুটি শনাক্ত করা ও ত্রুটি সংশোধন করাই গবেষণাটির উদ্দেশ্য। উন্নত দেশে শিশুদের ভর্তির পরপরই স্কুলে স্কুলে গিয়ে চোখ পরীক্ষা করা হয়। বাংলাদেশে সেভাবে বছরজুড়ে শিশুদের চোখ পরীক্ষা হয় না।

গবেষণার অংশ হিসেবে ২০১৯ সালের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালের শিশু চক্ষু চিকিৎসকেরা চার জেলার বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে শিশুদের চোখ পরীক্ষা করেন। নার্সারি থেকে দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশুদের গবেষণার আওতায় আনা হয়।

গবেষকেরা জানান, পরীক্ষার আওতায় আসা শিশুদের প্রায় ১৪ শতাংশকে চশমা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সংখ্যায় তারা ৪ হাজার ৪২৯। এর মধ্যে ১ হাজার ৬৯৬টি শিশুকে তাৎক্ষণিক চশমা দেওয়া হয়। ২ হাজার ৭৩৩টি শিশুকে চশমা ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালের স্থানীয় শাখায় পাঠানো হয়। কারণ, ওই শিশুদের চোখে ওষুধ দিয়ে বাড়তি পরীক্ষার প্রয়োজন ছিল।

চিকিৎসক মোস্তফা হোসেন বলেন, শিশুদের দূরে বা কাছে দুই ধরনের দৃষ্টিশক্তির সমস্যা দেখা দিতে পারে। চশমা দিয়ে সেই ত্রুটি দূর করা সম্ভব। এ ছাড়া কিছু শিশুর ‘লেজি আই’ বা দুর্বল চোখ হয়ে থাকে। ওই শিশুদের কম বয়সে দৃষ্টি কম থাকে। ১০ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের দৃষ্টিশক্তির উন্নয়ন হয়। তিনি বলেন, কম বয়সে শিশুদের চিকিৎসা করালে পরিপূর্ণ দৃষ্টি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শিশুদের চোখের সুরক্ষায় ভিটামিন এ-যুক্ত খাবার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

মোস্তফা হোসেন আরও বলেন, একনাগাড়ে দীর্ঘ সময় মুঠোফোনের মতো ডিভাইসের দিকের তাকিয়ে থাকলে শিশুদের চোখে চাপ পড়ে। মাথাব্যথা হয়। এ থেকে দৃষ্টিত্রুটি দেখা দিতে পারে।

গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে, সবচেয়ে বেশি ত্রুটি দেখা গেছে রাজধানী ঢাকার শিশুদের মধ্যে। ঢাকার ১৯টি স্কুলের ৬ হাজার ৪০১ জন শিশুশিক্ষার্থীর চোখ পরীক্ষা করে মোট ২ হাজার ৫৫১ জনকে চশমা ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। হার প্রায় ৪০ শতাংশ। বরিশালে পরীক্ষার আওতায় আসা প্রায় ১২ শতাংশ এবং নওগাঁ ও জামালপুরে প্রায় ৫ শতাংশ করে শিশুকে চশমা ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম এনায়েত হোসেন বলেন, জিনগত কারণ, স্বল্প ওজন নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশু ও সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই শিশুদের চোখের সমস্যা দেখা দিতে পারে। লক্ষ করা গেছে, গ্রামের শিশুদের তুলনায় শহরের শিশুদের চশমা ব্যবহারের হার বেশি। এর পেছনের কারণ কী, তা নিয়ে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন।


সর্বশেষ সংবাদ