বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন
মাদ্রাসায় রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা সম্ভব কতটা?
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ০৮ মে ২০২১, ০৯:৪৩ AM , আপডেট: ০৮ মে ২০২১, ০৯:৪৩ AM
দেশের কওমি মাদ্রাসা নিয়ে আবারও নানা আলোচনার মুখে মাদ্রাসাগুলোতে ছাত্র-শিক্ষকদের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সম্প্রতি কওমি মাদ্রাসার নিজেদের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী বোর্ড আল-হাইআতুল উলয়া লিল জামি’আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ-এর এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু দেশের বেশকিছু দল বা সংগঠন কওমি মাদ্রাসা ভিত্তিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে থাকে।
সেই প্রেক্ষাপটে মাদ্রাসায় ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের গুরুত্ব কতটা এবং তা কার্যকর করা সম্ভব কি-না -এসব প্রশ্নে নানা আলোচনা চলছে।মাদ্রাসা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে ১৪ হাজারের মতো কওমি মাদ্রাসায় ১৪ লাখের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ি এলাকার একটি মহিলা মাদ্রাসার শিক্ষক ফাতেহা ফারজানা। তার মাদ্রাসায় প্রাথমিক থেকে সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিস পর্যন্ত ৭০০ জনের মতো ছাত্রী রয়েছে। কওমি মাদ্রাসায় ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে তার অবস্থান। ফাতেহা ফারজানা বলেন, শিক্ষকদের কেউ কোন দলীয় রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলে মাদ্রাসায় তার প্রভাব যেন না পড়ে, সেটা তিনি চান।
ফারজানা বলেন, ‘ইসলাম রাজনীতি সমর্থন করে। তবে আমরা শিক্ষক-শিক্ষিকা যারা মাদ্রাসায় আছি, তারা এই ছাত্র বা ছাত্রীরা রাজনীতি করবে, সেটা অপছ্ন্দ করি। শিক্ষক যারা আছে, তারা ক্যাম্পাসের বাইরে গিয়ে রাজনীতি করবে। মাদ্রাসায় ছাত্র শিক্ষকের রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হলে তা কার্যকর করা উচিৎ।’
মোহাম্মদপুর এবং যাত্রাবাড়ি এলাকার মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা হয়। তাদের একজন দাওরায়ে হাদিসের ছাত্র সাইফুল হক বলেন, তিনি মাদ্রাসা ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতির বিরুদ্ধে। তবে তিনি মনে করেন, কখনও ইসলাম ধর্মকে অবমাননার অভিযোগ উঠলে তার প্রতিবাদ করার ক্ষেত্রে বাধা থাকা উচিৎ নয়।
তিনি বলেন, ‘যারা আদর্শ ওস্তাদ (শিক্ষক), তারা মাদ্রাসার বাইরে গিয়ে রাজনীতি করতে পারে। কিন্তু ছাত্র যারা আছে, তাদের রাজনীতি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকা উচিৎ মনে করি আমরা। যখন নাস্তিক মুরতাদরা ইসলামকে নিয়ে কটুক্তি করে, ওই প্রতিবাদে আমরা যাই। আর কোনো মাদ্রাসায় বাধ্যবাধকতা নেই যে ছাত্রদের রাজনীতি করতে হবে।’
কওমি মাদ্রাসায় রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত কেন?
কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের রাজনীতির বিষয় নতুন করে আলোচনায় এসেছে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সহিংসতার প্রেক্ষাপটে। গত মার্চের শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের সময় হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিকে করে ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং চট্টগ্রামের হাটহাজারীসহ বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতা হয় এবং কমপক্ষে ১৭ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতার ঘটনা নিয়ে একশো’র বেশি মামলায় সরকার হেফাজতে ইসলামের নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার অভিযান চালাচ্ছে। কওমী মাদ্রাসা ভিত্তিক সংগঠনটির নেতৃত্বের বিরুদ্ধে রাজনীতি করার অভিযোগও আনা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। এমন পরিস্থিতিতে কোনঠাসা এবং বিপর্যস্ত হেফাজতের নেতৃত্ব সরকারের সাথে সমঝোতার চেষ্টায় নিজেদের অরাজনৈতিক সংগঠন হিসাবে দেখাতে চাইছে। এর পক্ষে তারা তথ্য প্রমাণও তুলে ধরার চেষ্টা করছে।
হেফাজতের নেতাদেরই অনেকে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী বোর্ডে রয়েছেন। এখন সেই বোর্ডও বৈঠক করে কওমি মাদ্রাসায় ছাত্র শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে। বোর্ডের সহসভাপতি নুরুল ইসলাম জেহাদী হেফাজতে ইসলামেরও মহাসচিব। তিনি বলেছেন, কওমি মাদ্রাসায় আগে থেকেই রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল।
তবে তিনি উল্লেখ করেছেন, যেহেতু বিভিন্ন অভিযোগ তোলা হয়েছে, সেজন্য তাদের বোর্ড নতুন করে মাদ্রাসায় রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে।কওমি মাদ্রাসায় ভর্তি ফরম এর মধ্যে একটা শপথনামা বা অঙ্গীকারনামা আছে, এই অঙ্গীকারনামায় পরিস্কার লেখা আছে যে, কোন রাজনৈতিক সংগঠন বা দলীয় কোনো রাজনীতি মাদ্রাসার মধ্যে করতে পারবে না ছাত্র জীবনে।
তিনি বলেন, ‘এটাতো কলেজ ইউনিভাসিটির মতো না। কওমি মাদ্রাসা বলতে কওমের মাদ্রাসা বা পাবলিকের মাদ্রাসা। সে হিসাবে সবাই দান করে। ফলে এখানে দলীয় রাজনীতি করার কোন অবকাশ নাই। সাম্প্রতিক ঘটনা প্রেক্ষিতে এটাকে কার্যকর করা জন্য এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে কওমি মাদ্রাসায় শিক্ষক ছাত্ররা কোনো রাজনীতি করতে পারবে না।’
কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, ইসলামপন্থী বিভিন্ন দল কওমি মাদ্রাসা নির্ভর হয়ে উঠেছে। শিক্ষকদের অনেকে সরাসরি রাজনীতি করছেন এবং ছাত্রদের মিছিল সমাবেশে নিয়ে আসছেন- এমন অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে নুরুল ইসলাম জেহাদী বলেছেন, ‘দু’একজন শিক্ষক হয়তো রাজনীতি করে। তারা চিহ্নিত হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়া হয়। সব শিক্ষক করে না।’
অন্যদিকে, হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচি নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে। ২০১৩ সালে ঢাকায় শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের অবরোধ বা অবস্থান কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মাদ্রাসার শিক্ষক ছাত্রদের অংশগ্রহণ বেশি দেখা গেছে। সে ব্যাপারে জানতে চাইলে জেহাদী বলেন, ‘এটাতো ভিন্ন বিষয়। হেফাজতে ইসলাম কোন রাজনৈতিক সংগঠন না। এটা ঈমান আকিদার ব্যাপার। এটার জন্য সব দল মত এবং সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লোক জমায়েত হতে পারে। এটাকে রাজনীতির সাথে মেলানো যাবে না।’
কওমি মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষকদের অনেকে দাবি করেন যে, তাদের মাদ্রাসাগুলোতে আগে থেকেই ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ রয়েছে। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো কওমি মাদ্রাসাগুলোতে ছাত্র সংগঠনের কোনো শাখা বা ইউনিট নেই। তবে ইসলামপন্থী অনেক দলের কর্মসূচিতে মাদ্রাসার ছাত্রদের সক্রিয় অংশ গ্রহণের অভিযোগ অনেক পুরোনো।
ইসলাম বিষয়ক লেখক শরীফ মোহাম্মদ বলেছেন, মাদ্রাসার ছাত্রদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার বিষয়টি আসে তাদের শিক্ষক বা মাদ্রাসার প্রশাসনের ইচ্ছায়। কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক যে দলগুলো আছে, মাদ্রাসার হুজুর বা শিক্ষক, ছাত্র যারা এর সাথে সম্পৃক্ত হন, সেখানে কিন্তু উন্মুক্ত রাজনীতির চর্চা নেই।
শরীফ মোহাম্মদ আরও বলেন, ‘ধরুন আমি যে মাদ্রাসার ছাত্র, ওই মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল যদি খেলাফত মজলিস করেন, তাহলে আমাদের সব ছাত্রদের খেলাফত মজলিস করতে হবে। আমি ইসলামী আন্দোলন বা জমিয়তে উলামায়ে করতে পারবো না। আবার যদি জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতৃত্বে মাদ্রাসাটা চলে, তাদের প্রিন্সিপাল বা বড় বড় শিক্ষক ওই দল করে, তাহলে সব ছাত্রদের ওই দলই করতে হবে। অর্থ্যাৎ মাদ্রাসার ছেলেদের রাজনীতিটা অনেকটা তাদের প্রশাসন এবং শিক্ষকদের ইচ্ছায় প্রবাহিত হয়। এটা মুক্ত রাজনীতির চর্চা নয়।’
তিনি মনে করেন, ‘আলেমদের নেতৃত্বে ইসলামী রাজনীতি যা হয়, তাতে ছাত্রদের পাশাপাশি পাবলিক অংশগ্রহণ দরকার। তা না হলে এটা নৈতিকভাবে অথবা রাজনৈতিকভাবে অথবা মিডিয়াগতভাবে প্রশ্ন উঠবে যে আপনারা ছাত্রদের নিয়ে রাজনীতি করেন ঠিক আছে। কিন্তু ছাত্ররাতো আপনাদের ক্লাস বা শ্রেণিকক্ষের মতো ফলো করে।’
তবে শরীফ মোহাম্মদ কওমি মাদ্রাসায় ছাত্র শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পক্ষে নন। তিনি চান মুক্ত রাজনৈতিক চর্চা। তিনি বলেন, মাদ্রাসায় রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলে সেটা সমাজের একটা অংশের প্রতি বৈষম্য করা হবে।তার মতে, বড় ইসলামপন্থী দল জামায়াতে ইসলামীর মাদ্রাসার বাইরে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে সাংগঠনিক কাঠামো রয়েছে। ইসলামী আন্দোলনসহ আরও দু’একটি দলের মাদ্রাসা ছাড়াও সাধারণ মানুষের মধ্যে সংগঠন আছে। কিন্তু ইসলামপন্থী অন্যদলগুলো মাদ্রাসাকেন্দ্রিক।
ইসলামী আন্দোলনের আমীর সৈয়দ রেজাউল করীম বলেছেন, মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষকরা ইসলামী রাজনীতি করলে তিনি তাতে দোষ দেখেন না। তবে সেই রাজনীতিকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করাকে তিনি সঠিক মনে করেন না। ইসলামী রাজনীতি বা ইসলামী দল যারা করে, তারা যে মাদ্রাসার ওস্তাদ (শিক্ষক) এবং ছাত্রদের ওপর নির্ভর করে, এটাই আসলে বাস্তবতা না।
যেহেতু ছাত্র এবং ওস্তাদ ইসলামী নীতি ও আদর্শ নিয়ে লেখাপড়া করে, সে হিসাবে তারা এরসাথে সম্পৃক্ত থাকে। তবে ছাত্র এবং ওস্তাদদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে কেউ যদি স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা করে, সেটা কিন্তু ইসলাম এবং মানবতা সবদিক থেকে অযৌক্তিক একটা বিষয় বলে মনে করেন সৈয়দ রেজাউল করীম।
ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বা ইসলামপন্থী দলগুলোর উত্থান ও শক্তি সঞ্চয়ের বিষয়টিও সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনায় এসেছে। দেশের গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত মাদ্রাসা শিক্ষার বিস্তারের কারণে এই দলগুলোর একটা অবস্থান তৈরির সুযোগ হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা বলে থাকেন।
ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের নেতা আলতাফ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। তবে স্বাধীন বাংলাদেশে চার দশক আগে কওমি মাদ্রাসা কেন্দ্রিক রাজনীতি শুরু হয়েছে। ১৯৮১ সালে আল্লামা হাফিজ্জী হুজুর রহমতউল্লাহ আলাইহি, উনি নিজে রাজনীতি করেছেন এবং তিনি লালবাগ মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ছিলেন। তারপর শামসুল হক ফরিদপুরী রহমতউল্লাহ আলাইহি, শায়খুল হাদিস আজিজুল হক রহমতউল্লাহ আলাইহি এবং মুফতি ফজলুল হক আমিনী রহমতউল্লাহ আলাইহি - তারাও মাদ্রাসা পরিচালনা করেছেন এবং রাজনীতি করেছেন। তখনতো প্রশ্ন ওঠেনি। এখন একটা চক্র এসব প্রশ্ন তুলছে।’
মাদ্রাসার বাইরে বিভিন্ন মহল থেকেই মাদ্রাসাকেন্দ্রিক রাজনীতি নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করে এমন একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার রাশেদা কে চৌধুরী বলেছেন, মাদ্রাসা শিক্ষাকে রাজনীকিকরণ করে এক ধরনের উগ্রতার সৃষ্টি করা হচ্ছে।
রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘মাদ্রাসা শিক্ষাকে রাজনীকিকরণ করে এক ধরনের উগ্রতার সৃষ্টি করা হচ্ছে। মাদ্রাসা শিক্ষা একটি ধারা, ধর্মীয় ধারার শিক্ষা সব দেশেই আছে। কিন্তু বিপদটা এসেছে তখনই, যখন মাদ্রাসা শিক্ষাকে রাজনীতিকিকরণ করা হয়েছে এবং এক ধরনের উগ্রবাদের সূচনা করা হয়েছে।’
রাশেদা কে চৌধুরী বলেছেন, ‘কওমি মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের নানাভাবে প্ররোচিত করা হয়েছে রাজনীতির মধ্য দিয়ে। কিন্তু বিষয়টা দাঁড়াচ্ছে কোন ধরনের রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে তারা নাই। তারা নিজস্ব পন্থায় পরিচালিত হয়। এখন তারা বিপাকে পড়েছেন বলে হয়তো মাদ্রাসায় রাজনীতি নিষিদ্ধের কথা বলছেন। কিন্তু সরকারের শক্ত হাতে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।’
মাদ্রাসার নীতি নির্ধারণী বোর্ড এখন মাদ্রাসায় রাজনীতি নিষিদ্ধের কথা নতুন করে তুলে ধরছে। কিন্তু তারাই মানতে রাজি নয় যে, মাদ্রাসাকেন্দ্রিক রাজনীতি চলছে ব্যাপকভাবে। মাদ্রাসার সাথে সম্পৃক্ত অনেকে আবার মনে করেন, কওমি মাদ্রাসার ওপর সরকারের সেভাবে নিয়ন্ত্রণ নেই। সাম্প্রতিক পরিস্থিতির সুযোগে সরকার এক ধরনের চাপ তৈরি করতে পেরেছে এবং সেজন্য মাদ্রাসার নেতৃত্ব রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত সামনে এনেছে।
তবে সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার প্রশ্নে বিশ্লেষকদের সন্দেহ রয়েছে। এ ব্যাপারে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান সতর্ক বক্তব্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘সেটা কার্যকরী করতে হবেতো। সেটা মুখে বলেতো লাভ নেই। সে বিষয়ে আমরা আলোচনা করছি, তারা যেন কার্যকর করতে পারে।’
মাদ্রাসার শিক্ষকদের অনেকে মনে করেন, তাদের নীতি নির্ধারণী বোর্ড চাইলে রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা সম্ভব। হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষক আশরাফ আলী নিজামপুরী নিজে চট্টগ্রামের মীরেরসরাই এলাকায় একটি মাদ্রাসা পরিচালনা করেন। তিনি বলেছেন, সর্বোচ্চ বোর্ডের সিদ্ধান্ত কওমি মাদ্রাসাগুলো মানতে বাধ্য। এটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব। কারণ এই বোর্ড হচ্ছে আমাদের কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ অথরিটি। ওখান থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে সেটা সবাই মানতে বাধ্য ‘
নিজামপুরী মনে করেন, ‘কিছু কিছু মাদ্রাসার শিক্ষক রাজনীতির সাথে জড়িত আছেন। তবে অধিকাংশ মাদ্রাসার শিক্ষক রাজনীতির সাথে জড়িত নয়। আমি মনে করি, পাঠ জীবনে কোনো ছাত্রের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া ঠিক নয়।’
মাদ্রাসার নীতি নির্ধারণী বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কওমি মাদ্রাসায় ছাত্র শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর করার জন্য এবার আলেমদের নিয়ে ১৫ সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করেন, এখন সরকারের চাপ এবং পরিস্থিতি সামলানোর জন্য মাদ্রাসার নেতৃত্বের এমন সিদ্ধান্ত নেয়াটা একটা সাময়িক কৌশল হতে পারে।
খবর: বিবিসি বাংলা।