ভয়ংকর হয়ে উঠছে করোনা, পাঁচতারকা হাসপাতালেও মিলছে না আইসিইউ
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০২১, ১২:১৫ PM , আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২১, ১২:১৫ PM
করোনা ঢেউয়ের দ্বিতীয় দফাতে এসে মার্চের প্রথম দিন থেকে হুহু করে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। হাসপাতালে প্রকট হয়ে উঠছে আইসিইউ ও সাধারণ শয্যা সংকট। সারা দেশে সাধারণ শয্যা ৯ হাজার ৭১১টি এবং আইসিইউ ৫৮৬টি। আইসিইউয়ের অভাবে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন অনেক রোগী। বেসরকারি পাঁচতারকা হাসপাতালেও মিলছে না আইসিইউ।
জানা গেছে, আক্রান্ত বাড়ায় বাড়ছে মৃত্যুও। হাসপাতালগুলোতে সংকট তৈরি হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ এখন সোনার হরিণ। আইসিইউয়ের অভাবে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা দিয়ে রাখা হচ্ছে। অনেক হাসপাতালে সেই ক্যানুলারও বেহাল দশা এবং অক্সিজেন স্বল্পতায় রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটছে। এমনকি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পরিস্থিতিও একই।
গত বুধবার গভীর রাতে বিএসএমএমইউতে রোগী নিয়ে সংকটপূর্ণ পরিস্থিতির মুখে পড়েন সাংবাদিক আতাউর রহমান কাবুল। তার বড় ভাই আহসান হাবীব বাবুল করোনা আক্রান্ত হয়ে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তিনি বলেন, ‘পরপর তিনটি হাই ফ্লো নেজাল ক্যানুলা বদল করা হয়েছে। দীর্ঘক্ষণ ধরে একটি মেশিনেরও ক্যানুলা কাজ করছে না। টেপ দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে ক্যানুলাগুলো। অনেকগুলোতে বাতাস লিক করছে। একটু পরপর এসব ক্যানুলার পাইপ দিয়ে গরম বাতাস এবং গরম পানি বের হচ্ছে। রোগী এটা কোনোভাবেই নাকে রাখতে পারছে না। মেশিনের সমস্যার কারণে আমার ভাইয়ের অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৫০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছিল। চিকিৎসকরা অনেক চেষ্টা করেছেন কিন্তু যন্ত্রপাতির এ পরিস্থিতি।’
এদিকে, কুর্মিটোলা হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য সূত্রে জানা যায়, সারা দেশে করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য সাধারণ শয্যা রয়েছে ৯ হাজার ৭১১টি। এর মধ্যে রোগী ভর্তি রয়েছে ৪ হাজার ১৬৫ জন। সারা দেশে করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউ রয়েছে ৫৮৬টি। এর মধ্যে রোগী ভর্তি রয়েছে ৩৭০টিতে। রাজধানীর সরকারি হাসপাতালে ১০৮টি আইসিইউয়ের মধ্যে গতকাল রোগী ভর্তি ছিল ১০৪টিতে। এর মধ্যে শেখ রাসেল গ্যাসট্রোলিভার হাসপাতালে দুটি এবং রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে দুটি আইসিইউ ছিল। এ ছাড়া বেসরকারি হাসপাতালের ১৮৮টি আইসিইউয়ের মধ্যে ফাঁকা ছিল ৪৭টি। এর মধ্যে ইম্পালস হাসপাতালে ৩০টি আইসিইউ ফাঁকা ছিল।
তবে গত বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০টি আইসিইউ শয্যা চালু করা হয়। আইসিইউয়ের উদ্বোধনী উপলক্ষে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, অন্যান্য সরকারি হাসপাতালেও করোনা রোগীদের জন্য সুবিধাদি বৃদ্ধি করা হচ্ছে। হাসপাতালের এক ইঞ্চি জায়গা খালি থাকলেও কোনো রোগীকে সেবা থেকে বঞ্চিত করা হবে না।
তিনি আরও বলেন, করোনার প্রকোপ দিন দিন যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে করে হাসপাতাল শয্যা দ্রুত বৃদ্ধি করার বিকল্প নেই। এ কারণে সরকার কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল সংখ্যা বৃদ্ধি করাসহ সব হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করছে। যেভাবে প্রতিদিন করোনা বৃদ্ধি পাচ্ছে এভাবে চলতে থাকলে দেশে কোনো হাসপাতালেই রোগী রাখার জায়গা থাকবে না। এজন্য করোনা বৃদ্ধি ঠেকাতে দলমত নির্বিশেষে সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের মার্চ মাসের শুরু থেকে লাফিয়ে বাড়তে থাকে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। শুধু ওই মাসেই আক্রান্ত হয়েছেন ৬৫ হাজার ৭৯ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৬৩৮ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত বছর ৮ মার্চ দেশে প্রথম রোগী শনাক্তের পর ওই মাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৫১ জন, মারা গেছেন পাঁচজন। এরপর এপ্রিলে আক্রান্ত হন ৭ হাজার ৬১৬ জন, মারা গেছেন ১৬৩ জন। মে মাসে আক্রান্ত ৩৯ হাজার ৪৮৬ জন, মারা গেছেন ৪৮২ জন। জুনে আক্রান্ত ৯৮ হাজার ৩৩০, মারা গেছেন ১ হাজার ১৯৭ জন। জুলাইয়ে আক্রান্ত ৯২ হাজার ১৭৮ জন, মারা গেছেন ১ হাজার ২৬৪ জন। আগস্টে আক্রান্ত ৭৫ হাজার ৩৩৫ জন, মারা গেছেন ১ হাজার ১৭০ জন।
সেপ্টেম্বরে আক্রান্ত ৫০ হাজার ৪৮৩ জন, মারা গেছেন ৯৭০ জন। অক্টোবরে আক্রান্ত ৪৪ হাজার ২০৫ জন, মারা গেছেন ৬৭২ জন। নভেম্বরে আক্রান্ত ৫৭ হাজার ২৪৮ জন, মারা গেছেন ৭২১ জন। ডিসেম্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৪৮ হাজার ৫৭৮ জন, মারা গেছেন ৯১৫ জন। এ বছরের জানুয়ারিতে আক্রান্ত হন ২১ হাজার ৬২৯ জন, মারা যান ৫৬৮ জন। ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১১ হাজার ৭৭ জন, মারা গেছেন ২৮১ জন। গত বছর আগস্ট থেকে কমতে শুরু করে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা।