১১১ তলা ভবন নির্মাণ হচ্ছে ঢাকায়

নির্মাণাধীন সুউচ্চ ভবনের নকশা
নির্মাণাধীন সুউচ্চ ভবনের নকশা  © সংগৃহীত

সুউচ্চ অট্টালিকার নান্দনিকতায় কারোও ভালো লাগা কাজ করে না এমন মানুষ খুবই কম পাওয়া যাবে পৃথিবীতে। এই যেমন দুবাইয়ের কথা বললে আমাদের মনে আসে বুর্জ খলিফা, চীনের সাংহাই টাওয়ার, সৌদি আরবের মক্কা ক্লক টাওয়ার, আমেরিকার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ইত্যাদি। এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় টাওয়ার হলো দুবাইয়ের নান্দনিক বুর্জ খলিফা। তো এমন কোনো জিনিসের মালিক হতে চাওয়া বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য কি বিলাসিতা? না, অবশ্যই না।

একটি দেশের আধুনিকায়ন করতে যেমন সুষম উন্নয়ন করতে হয় ঠিক তেমনি একটি মেজর সিটি থাকা লাগে যেটি দিন শেষে ওই নির্দিষ্ট শহরকে রিপ্রেজেন্ট করে দেশে এবং দেশের বাইরে। আমাদের রাজধানী ঢাকার কথা যদি চিন্তা করি বর্তমানে এটি বিশ্বে বসবাসের অযোগ্য নগরীর একটি এবং এর আধুনিকায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

মেট্রোরেল, বিআরটি, বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের উন্নয়ন, ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রভৃতি অবকাঠামো উন্নয়নে যখন বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধান হবে, তখন এই আধুনিকায়নকে একটি নির্দিষ্ট সিটি ফুটিয়ে তুলবে যা দিনশেষে আধুনিক ঢাকাকে বিশ্বে তুলে ধরবে।

একটি দেশের অর্থনীতি টেকসই নাকি ভঙ্গুর তাও নির্ভর করে এ সকল মহা প্রকল্পের ওপর। দুবাই বা চীন কিংবা আমেরিকার অর্থনীতির উন্নতির পেছনে এসকল প্রকল্পের অবদান কম কিসে। নতুন কোনো বিনিয়োগকারী বা পর্যটক যখন বাংলাদেশ নিয়ে জানতে চাইবে দিনশেষে এসকল অবকাঠামো তাদেরকে আকৃষ্ট করবে বাংলাদেশ নিয়ে।

বহির্বিশ্বে বর্তমানে হাজারো পর্যটক দুবাই কিংবা মালয়েশিয়া যায় শুধুমাত্র বুর্জ খলিফা কিংবা পেটরনাস টুইন টাওয়ারের সাথে একটি ছবি তুলতে! যুগের পরে যুগ এ সকল অবকাঠামোই একটি শহরের পরিচয় বহন করে এবং হয়ে ওঠে নান্দনিকতা ও আভিজাত্যের প্রতীক।

এবার আলোচনা করি বাংলাদেশের স্বপ্নের ‘বঙ্গবন্ধু ট্রাই টাওয়ার’ প্রকল্প নিয়ে। প্রকল্পটি গড়ে উঠছে ঢাকার অদূরে পূর্বাচলে, যেখানে এই প্রকল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে একটি স্মার্ট সিটি। তিনটি সুউচ্চ টাওয়ারকে কেন্দ্র করে থাকছে নান্দনিক স্টেডিয়াম, হাসপাতাল, বিজনেস সেন্টার, আধুনিক ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ইত্যাদি।

প্রকল্পের মূল আকর্ষণ ‘বঙ্গবন্ধু ট্রাই টাওয়ার’-এ থাকছে যথাক্রমে ভাষা আন্দোলনের স্মরণে ৫২ তলা, মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে ৭১ তলা এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লিগ্যাসি স্মরণে ১১১ তলা বিল্ডিং। এই তিন টাওয়ারের চারিদিকে ৪৯ তলার আরো ৪০টি ভবন নির্মিত হবে। যদিও পূর্বের নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান কেপিসি গ্রুপের পরিবর্তন হলে তাদের ডিজাইন করা ১৪২ তলার টাওয়ার ‘৭১’ এ পরিবর্তন আনা হয়। এছাড়াও প্রশাসনিক কারণ এবং বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অসম্মতিও ডিজাইন পরিবর্তনে দায়ী ছিলো।

বর্তমানে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে যথাক্রমে শিকদার গ্রুপের সিস্টার কোম্পানি পাওয়ার প্যাক হোল্ডিংস লিমিটেড এবং জাপানের কাজিমা কর্পোরেশনের মাধ্যমে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৪ সালে প্রকল্পটি দৃশ্যমান হওয়া শুরু করবে। বর্তমানে প্রকল্পের পাইলিংয়ের কাজ চলছে পুরোদমে।প্রকল্পটির তদারকির দায়িত্বে আছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ(রাজউক)।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৬ হাজার কোটি টাকা। এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী দেশগুলো হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ফিলিপাইন। ইতোমধ্যেই প্রকল্পের মোট প্রস্তাবিত ব্যয়ের ৬০ হাজার কোটি টাকা যোগাড় করা হয়েছে।

এই প্রকল্প নিয়ে অনেকেরই ভিন্নমত থাকতে পারে। তবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক দৃঢ়তা প্রকাশ পাবে তদুপরি বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে বহির্বিশ্বে। সূত্র: ডিফেন্স রিসার্চ ফোরাম।


সর্বশেষ সংবাদ