শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে আরও সময় নেয়ার আহ্বান শিক্ষাবিদদের
- ফরহাদ কাদের
- প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২০, ০৩:০৪ PM , আপডেট: ১৮ আগস্ট ২০২০, ০৭:৫৭ PM
করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে প্রায় পাঁচ মাস ধরে বন্ধ থাকা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখনই খুলে না দেয়ার আহবান জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষাবিদরা। তারা মনে করছেন, দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার মতো অবস্থা এখনো হয়নি। খুললে করোনা সংক্রমণের সামগ্রিক মাত্রা আরও বেড়ে যেতে পারে।
কারণ হিসেবে তারা বলছেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক ক্লাসে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে স্বাস্থবিধি ও অন্যান্য স্বাস্থ্যগত বিষয় মেনে চলা নিশ্চিত করা যাবে না। আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসিক হলগুলোয় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে গণরুম রয়েছে। সেখানে তো কোনোভাবেই স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা যাবে না। সেক্ষেত্রে বিকল্প উপায়ে পরীক্ষা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয়। সংক্রমণ এড়াতে ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ করে দেয়া হয় দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কয়েকবার এই ছুটি বাড়িয়ে এখন ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সাধারণ ছুটি চলছে। ফলে বন্ধ হয়েছে গেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরীক্ষা গ্রহণ। এই পরিস্থিতিতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে পাঠদান চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বেতারের মাধ্যমেও শুরু হয়েছে প্রাথমিকের বিভিন্ন শ্রেণির পাঠদান। আর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনার পর দেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে পাঠদান চালু রয়েছে। আর দেশের বর্তমান করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের পরিসংখ্যানের চিত্র বিবেচনা করে এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলার আহবান জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষাবিদরা।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসিক হলগুলোয় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে গণরুম রয়েছে। সেখানে তো কোনোভাবেই স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা যাবে না। করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাকে কোনোভাবেই কমপ্রোমাইজ করা ঠিক হবে না।’
তিনি বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনেকটিতেই স্বল্পসময়ে শিক্ষকদের অনলাইনে ট্রেনিং দিয়ে অনলাইন ক্লাসে যুক্ত করা হয়েছে। তারা সফলভাবে অনলাইনে পাঠদান করছে। শিক্ষার্থীর উপস্থিতিও সন্তোষজনক। কিন্তু সেভাবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অনলাইন পাঠদান চলছে না।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে হয়তো করোনার সংক্রমণ আরও কমে যাবে। তারপরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমরা পরিস্থিতি আরও পর্যবেক্ষণ করতে চাই। আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের কোনো প্রকার ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে চাই না। ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাই না।
তিনি আরো বলেন, যে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক সুবিধা নেই, সেখানে হয়তো সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ক্লাস কার্যক্রম চালানো যেতে পারে। তবে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী হলে থেকে লেখাপড়া করে। সেক্ষেত্রে হলে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা নিয়ে আমরা সন্দিহান।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হবে বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। তিনি বলেন, সংক্রমণের পরিধি যখন নিম্নমুখী হবে, তখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলার চিন্তা ভাবনা করা যেতে পারে। যতক্ষণ এটি উর্ধ্বমুখী থাকবে অথবা এই সংক্রমণের সংখ্যাটা উপরের দিকে স্থিতিশীল থাকে, এ সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ঝুঁকি নেয়া কতটা সমীচীন হবে- এটা চিন্তার বিষয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার আগে আমাদের অনেক কিছু ভাবতে হবে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমাদের শিক্ষকরা ইতোমধ্যেই এই বিষয় নিয়ে ভাবছেন। তবে আমরা হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নিবো না।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন দেশে করোনার সংক্রমণ কমার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পর আবারো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সে দিকেও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। তবে সব বিষয়ে ইউরোপ-আমেরিকার মতো হবে না। আমাদের নিজস্ব কিছু বিষয় আছে। এই বিষয়গুলো ভেবে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলতে চাই।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ লেলিন চৌধুরী বলছেন, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন করে সংক্রমণ দেখা দেবে। সংক্রমণ সামগ্রিকভাবে বহুগুনে বেড়ে যাবে। করোনাকালে দেশের স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার মতো অবস্থা এখনো তৈরি হয়নি। আমাদেরকে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
এদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা বা বন্ধ রাখার বিষয়ে নতুন করে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, আমরা কাছাকাছি সময়ে যেয়ে তখন আমরা সিদ্ধান্ত ঘোষণা করি। ২৫ তারিখের পরে আমরা এক সময় ঘোষণা করব। পর্যায়ক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল খোলা হবে না কী- প্রশ্নে তিনি বলেন, যখনই আমরা ক্লিয়ারেন্স পাবো তখনই জানাবো।