ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের ঢল, পথে পথে করোনা ঝুঁকি
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২০, ০৮:২৭ AM , আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২০, ০৯:৪৩ AM
প্রতিবছর মহাসড়ক ও ফেরিঘাটে ঘরমুখো মানুষের স্রোত দেখা গেলেও এবার সেই চাপ নেই। তবে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই বাড়ি ফিরছে মানুষ। ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাস, লঞ্চ ও ট্রেনে যাত্রীসংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণকে উপেক্ষা করেই ঢাকা ছাড়ছে হাজার হাজার মানুষ।
গতকাল বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন টার্মিনালগুলোয় উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। শুধুমাত্র বাস ছাড়াও ট্রেন, লঞ্চ, এছাড়াও ফেরি পারাপারেও বাড়ছে ভিড়। এদিকে বাড়ি ফেরার ভিরে ভুলতে বসেছে করোনা সংক্রমণের কথা। অনেকে আবার ইচ্ছা সত্ত্বেও মানছে না স্বাস্থ্যবিধি।
এদিকে করোনা মহামারির মধ্যেই বাড়িফেরা ঘরমুখো এই যাত্রার মানুষগুলোই মানছে স্বাস্থ্যবিধি। গতকাল উপচে পড়া ভিরে সরেজমিন দেখা গেছে ফেরি যাত্রীদের বেশির ভাগেরই মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব মেনে বসতে অনীহা ছিল। মাস্ক খুলে গল্প করা, খাবার খাওয়া ও ঘোরাঘুরি করেছেন অনেকেই।
একইভাবে সড়কপথে বাসের এক সিট ফাঁকা রেখে আরেক সিটে যাত্রী বসলেও কেউ কেউ মাঝপথে মুখ থেকে মাস্ক খুলে রাখছেন। রাজধানীতে চলাচলকারী অনেক বাস রিজার্ভে দূরপাল্লার রুটে যাওয়ার সময়ে এক সিট ফাঁকা রাখার বিধান মানছে না।
করোনার বিস্তার ঠেকাতে সামাজিক দেখা সাক্ষাত বন্ধ করতে বলছেন বিজ্ঞানীরা। ঘরে বসে থাকাই এই ভাইরাস থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়। কারণ এর কোনো প্রতিষেধক নেই। কিন্তু সরকারের ছুটি উপভোগ করতে গ্রামে যাচ্ছে মানুষ। এর মধ্যে মানুষের অসচেতনটা, স্বাস্থ্যবিধি না মানায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার অফিস-আদালত ছুটির পর যাত্রীচাপ আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আর অফিস-আদালত ছুটির পর ফিরতে শুরু করবে বাড়ি ফেরা মানুষগুলো। সেই সাথে পথে পথে করোনাভাইরাস সংক্রণের ঝুঁকি বাড়ছে বলেও আশঙ্কা তাদের।
ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় যাত্রীদের সতর্কভাবে চলাচলের আহ্বান জানিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। অতি প্রয়োজন না হলে ঈদযাত্রা না করারও অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। গত বুধবার নৌ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ দফতর ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিপত্র (এপিএ) স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, লঞ্চ টার্মিনালে জীবাণুনাশক টানেল স্থাপন করেছি এবং তাপমাত্রা পরিমাপের ব্যবস্থা করা হয়েছে। লঞ্চ মালিকরাও ব্যবস্থা নিয়েছেন। সব থেকে বড় কথা হচ্ছে- লঞ্চের নকশা করোনার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত নয়। আমরা যাত্রীদের বিনীত অনুরোধ করব- ডেকের যাত্রীদের জন্য যে মার্কিং করে দেয়া হয়েছে, সেটা যেন মেনে যাতায়াত করেন।
তিনি জানিয়েছিলেন, আমরা তো কখনও কল্পনা করিনি এ ধরনের ছোঁয়াচে রোগ আসবে। তবে ভবিষ্যতে যখন নতুন লঞ্চের অনুমোদন দেয়া হবে, তখন ছোঁয়াচে রোগ প্রতিরোধের বিষয়গুলো দেখা হবে।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের নৌযাত্রীদের যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম ঢাকা নদীবন্দরে গিয়ে দেখা যায়, এ বন্দরে ৭টি জিবাণুনাশক টানেল থাকলেও গত বুধবার তা সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তবে প্রবেশপথগুলোয় যাত্রীদের মাস্ক আছে কি না, তা মনিটরিং করা হচ্ছে। যাদের মুখে মাস্ক নেই, তাদের বিনামূল্যে মাস্ক সরবরাহ করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
এছাড়া যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রা করতে মাইকিং করা হয়েছে। কিন্তু বুধবার ঢাকা থেকে বরিশালসহ বিভিন্ন রুটে ছেড়ে যাওয়া সুন্দরবন-১২, সুরভী-৯, কর্ণফুলী-১৩, কুয়াকাটা-২, মানিক-২ সহ বেশ কয়েকটি লঞ্চের ডেকে যাত্রীরা সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে যাত্রা করছেন। অনেকেরই মুখে দেখা যায়নি মাস্ক।
জানা গেছে, এসব লঞ্চে যাত্রীদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে লাল রঙের চিহ্ন এঁকে দেয়া হয়েছে। যাত্রী বাড়ার সঙ্গে লঞ্চের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। গত মঙ্গলবার সদরঘাট থেকে ৮২টি লঞ্চ ছেড়ে যায়, বুধবার ওই সংখ্যা আরও বেড়েছে। আর আজ বৃহস্পতিবার লঞ্চের সংখ্যা একশ’র কাছাকাছি হতে পারে বলে জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ।