তদন্ত ছাড়াই জনপ্রতিনিধিদের চোর বানানো কি ঠিক— দীপু মনির স্ট্যাটাস

  © ফাইল ফটো

করোনাভাইরাসের ফলে দেশের সর্বত্রই লকডাউন চলছে। আর এত বিপাকে পড়েছেন সমাজের খেটে খাওয়া মানুষগুলো। নিম্ন আয়ের এসব মানুষদের কথা চিন্তা করে সব এলাকার জনপ্রতিনিধিদের অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে অনুযায়ী বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করছেন জনপ্রতিনিধিরা। সমাজের পিছিয়ে পড়া এসব মানুষদের কথা চিন্তা করে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

তবে কতিপয় অসাধু ব্যক্তির কারণে সরকারের নেয়া এসব পদক্ষেপ ভেস্তে যেতে চলেছে। প্রায় প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও থেকে চাল চুরির অভিযোগ উঠছে। যা নিয়ে সরকারি দলের জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যগুলোতে সমালোচনায় মেতেছেন নেটিজেনরা। তবে যাচাই-বাছাই না করে জনপ্রতিনিধিদের চোর বানানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) এ নিয়ে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। সেখানে তদন্ত ছাড়াই জনপ্রতিনিধিদের চোর বানানো কি ঠিক এমন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন নেটিজেনদের। নিচে দীপু মনির স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

‘‘সকল জনপ্রতিনিধিদেরই যার যার এলাকায় বিরোধী দলের তো বটেই, এমনকি নিজ দলের ভেতরেও প্রতিপক্ষ থাকে। আর এই প্রতিপক্ষরা এরকম সময় আর সুযোগেরই বোধহয় প্রতীক্ষায় থাকে জনপ্রতিনিধিদের ঘায়েল করার জন্য। এ করোনা সংকটে যত ত্রাণকাজ চলছে তার সিংহভাগই করছেন জনপ্রতিনিধিরা। এটাই তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। সরকারের দেয়া চালের সাথে এরা নিজেদের অর্থ, আত্মীয়-স্বজনের, দানশীলদের দানের অর্থ দিয়ে ডাল, তেল, আলু, লবন, পেঁয়াজ, সাবান ইত্যাদি প্যাকেট করে দিবারাত্র নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সহযোদ্ধা রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের নিয়ে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন। এরা এদেশের, এ সমাজেরই মানুষ। এদের মধ্যেও ভালো মন্দ আছে।

প্রায় ৬১৫৭৯ জন বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধির মধ্যে কিছু সংখ্যক বিপথগামী দুর্নীতিগ্রস্ত থাকতে পারে, আছেও নিশ্চয়ই। সবকালে, সবদেশেই থাকে। তাদের অবশ্যই চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তি দেয়া প্রয়োজন। কিন্তু যে কোন প্রতিপক্ষের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে দেয়া কিংবা কারও ভুলক্রমে দেয়া অসত্য তথ্যের ভিত্তিতে যদি জনপ্রতিনিধিদের ত্রাণকাজ নিয়ে তাদের অন্যায়ভাবে অভিযুক্ত করা হয়, হেনস্থা করা হয়, তার সকল ভালো কাজের সাথে তার মান সম্মানকেও ভূলুণ্ঠিত করা হয় তা কি সঠিক? কোন তদন্ত ছাড়াই মিথ্যা অভিযোগ তুলে সংবাদ মাধ্যমে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদেরকে চোর বানানো কি সঠিক?

এরা যদি এরপর নিজের ও পরিবারের সম্মান রক্ষার তাগিদে ত্রাণকাজের দায়িত্ব পালন থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেন তা কি পুরো সংকটকে আরও ভয়াবহ করে তুলবে না? জনপ্রতিনিধিরা কি অন্যায় অসত্য চরিত্রহনন থেকে মুক্ত থাকার অধিকার রাখেন না? এ সর্বনাশা খেলা যারা খেলছেন, ব্যক্তিগত বা স্থানীয় বা জাতীয় পর্যায়ে, তাদের অসৎ উদ্দেশ্য সফল হতে দিলে পরাজিত হবে জনকল্যাণ, জনসেবা, দেশের বৃহত্তর স্বার্থ। করোনা সংকট থেকে উত্তরণে জনপ্রতিনিধিরা একটি বড় সহায়ক শক্তি। গণতন্ত্রকে ভালোবাসবো, জান প্রাণ দিয়ে চাই বলে দাবী করবো, অথচ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদেরকে সত্য মিথ্যা যাচাই না করেই চোর সাব্যস্ত করে তার ও তার পরিবারের জীবন ধ্বংস করে দেবো, এরকম আত্মঘাতী ও পরস্পরবিরোধী কাজ থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন। না হলে শুধু জনপ্রতিনিধি বা সরকার নয়, পরাজিত হবে দেশ আর সকল জনগণ। যে কোন তথ্য সম্প্রচার কিংবা ছড়িয়ে দেবার আগে তাই সতর্কতা অতীব জরুরী।’’


সর্বশেষ সংবাদ