দিন কাটাব রাত কাটাব, তবুও রাজপথ ছাড়ব না
- মোতাহের হোসেন, ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০২:০৭ PM , আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০২:৪৫ PM
সরকারি চাকরিতে বয়সের সময়সীমা যতক্ষণ না পর্যন্ত ৩৫ বাস্তবায়ন হবে, আমাদের দাবি যতক্ষণ পর্যন্ত আদায় না হবে আমরা রাজপথ ছাড়বো না। আমরা রাজপথে দিন কাটাবো, রাত কাটাবো তবুও রাজপথ ছাড়বো না। দেখি সরকারের বোধোদয় হয় কিনা।
সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছরে উন্নীত করার জন্য দশম জাতীয় সংসদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সরকারের স্থায়ী কমিটি পর পর তিনবার চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বাস্তবায়নের সুপারিশ এবং বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের অঙ্গীকার, চাকরিতে আবেদনের বয়স বৃদ্ধি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে মহাসমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচিতে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদের নেতারা এসব কথা বলেন।
শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সমন্বয়ে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এবং বাংলাদেশ ছাত্র পরিষদের উদ্যোগে এ মহা-সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
এসময় বর্তমান সরকারকে উদ্দেশ্য করে এমএ আলী বলেন, সরকার আমাদের সাথে চরম অন্যায় করছে। আমরা চাকরির বয়স ৩০ থেকে ৩৫ করার লক্ষ্যে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে আজ অবধি আন্দোলন করে আসছি। আজ যদি আমাদের জনসমর্থন না থাকতো তাহলে বাংলাদেশের ৬৪ জেলাতে মানববন্ধন হতো না, সমাবেশ হতো না। আপনারা জেনে থাকবেন, বাংলাদেশের দু-একটি রাজনৈতিক দল ছাড়া পুরো বাংলাদেশে মানববন্ধন করা, জনসমাবেশ করার ক্ষমতা রাখে না কিন্তু বাংলার ছাত্র সমাজের এক ক্ষমতা রয়েছে ।
এসময় তিনি সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যদি আমাদের দাবিটি অবিলম্বে বাস্তবায়ন করা না হয় তাহলে বাংলার ৬৪ জেলাতে আমরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবো। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালন করব। যদি বাংলার ছাত্র সমাজ রাস্তায় নেমে যায়, পুরো দেশে যদি ধর্মঘট পালন হয় তাহলে এই রাষ্ট্রের অবস্থা, কি হতে পারে সেটা আপনারা দেখেছেন বারবার।
তিনি আরো বলেন, আমরা বর্তমান সরকারকে বড় আশা নিয়ে ক্ষমতায় এনেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে কথা দিয়েছিলেন বাংলাদেশে চাকরিতে বয়সের সময়সীমার ব্যাপারে যৌক্তিক সমাধান দেয়া হবে। কিন্তু আমরা এখনো এর যৌক্তিক সমাধান পাইনি কেন আমরা ছাত্রসমাজ সরকারকে প্রশ্ন করতে চাই। আমাদের পড়ার টেবিল ছেড়ে কেন রাজপথে থাকতে হয়। তার জবাব এই রাষ্ট্রকে দিতে হবে।
জনসমর্থনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা বারবার সমাবেশ করেছি কিন্তু আজ পর্যন্ত একটি রিকশার চাকা ধাক্কা দেই নি। এর কারণ কি আমাদেরকে শক্তি নেই আমাদেরকে জনপ্রিয়তা নেই। যেখানে বাংলাদেশের হাজার হাজার নেতাকর্মী এ সংগঠনের আওতায় আছে এবং এ দাবিটি নিয়ে তারা স্বপ্ন দেখে কিন্তু সরকারের এখনো বোধোদয় হয়নি। যদি বাংলার ছাত্র সমাজ রাজপথে নামে তাহলে কতটা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে তা সরকারের বোধোদয় হয়নি।
সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে চাকরিতে বয়সের সময়সীমা ব্যাপারে বলেন, সরকার আমাদের সাথে ওয়াদাবদ্ধ। নির্বাচনী ইশতেহারে বয়সসীমা বাড়ানোর কথা বললেও তা বাড়ানো হচ্ছে না। এর মানেটা কি। বিভিন্ন সভা-সমাবেশ মিডিয়ার মাধ্যমে সরকারের উচ্চপর্যায়ের নেতারা ওয়াদাবদ্ধ হয়েছে। আমাদের যৌক্তিক সমাধান দেবে কিন্তু কি করল তারা আজ আমরা লজ্জায় মুখ দেখাতে ইচ্ছা করে না।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ব্যাপারে বলেন, যখন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মন্ত্রী এমপি সংসদে আমাদের ব্যাপারে কথা বলেন সরকারি চাকরিতে বয়সের সময়সীমা ৩৫ করার জন্য। তখন এই আওয়ামী লীগ সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী তিনি আমাদের বিরোধিতা করলেন। এটি অত্যন্ত লজ্জার ব্যাপার। তিনি কি ভুলে গেছেন, তার কাছে যখন আমরা গিয়েছিলাম তখন তিনি বলেছিলেন তোমাদের যদি জনসমর্থন থাকে, তোমরা যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বোঝাতে পারো, তোমাদের যদি যুক্তিকতা থাকে তাহলে অবশ্যই আমরা একটা মেনে নিব।
সমাবেশে সাধারণ ছাত্র পরিষদের মুখপাত্র ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, সংসদে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি পরপর তিনবার সুপারিশের পরও কেন উপেক্ষা করেছেন? সরকার (বর্তমান) ৭০ বছরের প্রধান একটি রাজনৈতিক দলের যারা সবসময় জনগণের পক্ষেই কাজ করেন তাহলে বর্তমানে এই ২৮ লক্ষ তরুণদের দাবি কেন অবহেলা করছেন? আমরা বলতে চাই দ্রুত সময়ে আমাদের এই ৭ বছর ধরে চলা দাবি মেনে নিন এবং ৩৫ বাস্তবায়ন করেন।
এসময় বাংলাদেশ ছাত্র পরিষদের পক্ষে আলামিন রাজু বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ৩৩ পৃষ্ঠায় বয়স বৃদ্ধির ঘোষণা ছিল। কিন্তু জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ফরহাদ হোসেনের কথায় আমরা বেকার যুব ছাত্রসমাজ হতাশাগ্রস্ত।
সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচিতে ঢাকাসহ সারাদেশের প্রতিটি জেলা এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৫ প্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা, চাকরি নয় সুযোগ চাই ৩৫ ছাড়া গতি নাই, ৩০ নিপাত যাক ৩৫ এর জয় হোক, রক্ত লাগলে রক্ত নাও ৩৫ এর মুক্তি দাও, হতাশা মুক্ত বাংলাদেশ গড় ৩৫ বাস্তবায়ন কর, বয়সের ফ্রেমে মেধাকে বন্দী করা চলবে না, প্রভৃতি শ্লোগান যুক্ত প্ল্যাকার্ড হাতে উপস্থিত হন।
এসময় আরো বক্তব্য রাখেন সংগঠনগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধি হারুন-অর-রশিদ, এমএ আলী, ইউসুফ জামিল, রফিকুল ইসলাম কিরন, মহাদেব সরকার, নাছির হোসেন, কামাল হোসেন, জসিম উদ্দিন, নাসরিন সুমি,অরুণিমা, নাহিদা আক্তার সহ প্রমুখ।