বখাটে কাটিং: বাধা দেওয়ার ব্যাখ্যা দিল পুলিশ
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০১৯, ০৭:৫৩ PM , আপডেট: ২৪ আগস্ট ২০১৯, ০৭:৫৩ PM
নাগরিকের মানবাধিকার ক্ষুণ্ন বা ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে নয়, বরং কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সবাইকে সচেতন করতে চুলে ‘বখাটে কাটিং’ না দিতে প্রচারণা চালানো হয়েছে। শনিবার সকালে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এ কথা জানান মাগুরা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) খান মুহাম্মদ রেজোয়ান।
সম্প্রতি মাগুরায় সেলুন মালিক ও নরসুন্দরদের ‘বখাটে কাটিংয়ে’ চুল না কাটার নির্দেশনা দিয়েছিল পুলিশ। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত দুই মাসে মাগুরায় হত্যা, চাঁদাবাজিসহ বেশ কিছু অপরাধ কর্মকাণ্ডে কিশোরদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। তাই কিশোর অপরাধ দমনে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় পুলিশ। এর একটি চুলে ‘বখাটে কাটিং’ না দিতে উদ্বুদ্ধ করা।
মাগুরা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই সভায় এসপি খান মুহাম্মদ রেজোয়ান বলেন, কিশোর অপরাধ দমনে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপের একটি হলো চুলে বখাটে কাটিং না দিতে উৎসাহিত করা। তবে সেটি কোনোভাবেই নাগরিকের ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে নয়। এ বিষয়ে কাউকে বাধ্য করাও হচ্ছে না। উঠতি বয়সীরা যাতে উচ্ছৃঙ্খলতা থেকে নিবৃত্ত হয়, সে জন্যই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সুপার বলেন, বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সঙ্গে যেমন মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে, তেমনি সেলুন মালিক ও নরসুন্দরদের সঙ্গেও আলোচনা করা হয়েছে। বিষয়টি জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করতে সেলুন মালিকেরা সদর থানার ওসির নামে একটি নির্দেশনা টানিয়ে দিয়েছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনো প্রচারপত্র সরবরাহ করা হয়নি। তাদের এসব পদক্ষেপের ইতিবাচক ফল পেতে শুরু করেছেন মাগুরা শহরবাসী। গত কয়েক মাসের তুলনায় চলতি মাসে কিশোর অপরাধের প্রবণতা কমেছে বলে তিনি দাবি করেন।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গত ২ জুলাই সদর উপজেলার কুকিলা গ্রামে আল আমিন নামে অটোরিকশাচালককে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত ছিল তিন কিশোর। এর পাঁচ দিন পর ৭ জুলাই শহরতলির শিবরামপুর গ্রামে লিসানুর রহমান নামে এক কলেজছাত্রকে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে তিনজনের বয়স ১৮ বছরের কম।। এ ছাড়া একই মাসে বাগবাড়িয়া একটি মাদ্রাসা ছাত্রকে হত্যাচেষ্টা, পারলায় মোবাইল ছিনতাই, শিমুলিয়ায় ট্রাক থামিয়ে চাঁদাবাজির মতো ঘটনায় জড়িত ছিল অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেরা। এর পাশাপাশি, স্কুল-কলেজগামী মেয়েদের যৌন হয়রানির ঘটনায়ও এই বয়সের ছেলেরা জড়িত।
ব্রিফিংয়ে আরও বলা হয়, এসব অপরাধের ঘটনা বিবেচনায় নিয়ে কিশোর অপরাধ দমনে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে পুলিশ। সেসব পদক্ষেপের মধ্যে আছে—সন্ধ্যার পর শহরে, স্কুল-কলেজ ছুটির সময় বালিকা বিদ্যালয় ও মহিলা কলেজের আশপাশের কিশোরদের অপ্রয়োজনে ঘোরাফেরা করলে আটক করা। তাদের আটক করে অভিভাবকদের খবর দেওয়া হচ্ছে। এর পর সতর্ক করে কিশোরদের অভিভাবকদের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালালেও উঠতি বয়সীদের শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, মসজিদে নিয়মিত সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছে পুলিশ।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলামসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।