অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়ন থেকে মহাজনী ব্যবস্থা দুর করতে হবে: ইউনূস

  © টিডিসি ফটো

নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, নীতি-নির্ধারকদের উচিত দরিদ্রদের জন্য প্রণীত আর্থিক পণ্যগুলোর ক্ষেত্রে সুদের হার ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যয়গুলোর একটি সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে দেয়া প্রয়োজন। এ ধরনের কার্যকর নীতিমালা থাকলে কোনো কোনো আর্থিক প্রযুক্তি কোম্পানী ‘অন্তর্ভূক্তিমূলক অর্থায়ন’ হিসেবে বিবেচিত হবে না

তিনি বলেন, দরিদ্রদেরকে দেয়া সকল আর্থিক সেবা অন্তর্ভূক্তিমূলক নয়। এসব আর্থিক সেবার কোনো কোনোটি গরীব মানুষদের জন্য উপকারী হলেও অন্যগুলো তাদের প্রয়োজন ও চাহিদার বিচারে তাদের জন্য যথোপযুক্ত নয়। এসব ক্ষতিকর আর্থিক সেবা থেকে তাদেরকে রক্ষা করা প্রয়োজন।

বুধবার চীন সফরের দ্বিতীয় অংশে কেইক্সিন মিডিয়া গ্রুপ আয়োজিত একটি প্রাতরাশ সভায় এসব কথা বলেন। তিনি ২৭ জুলাই থেকে ১ আগষ্ট পর্যন্ত চীন সফরে রয়েছেন।

এছাড়া অনুষ্ঠানে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও বিভিন্ন অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দসহ প্রায় ৭০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি এই সভায় উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন কেইক্সিন মিডিয়ার প্রকাশক হু শুলি, পিপল্স ব্যাংক অব চায়নার গবেষণা ব্যুরোর পরিচালক ওয়ান শিন, সিনহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পিপল্স ব্যাংক অব চায়না স্কুল অব বিজনেসের অধ্যাপক শী পিং, চাইনিজ পিপল্’স পলিটিক্যাল কনসালটেটিভ কনফারেন্স (সিপিপিসিসি) এর ন্যাশনাল কমিটির সদস্য ও নিউ হোপ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিউ ইয়ংহাও, এক্সডব্লিউ ব্যাংকের পার্টি কমিটির চেয়ারম্যান ঝিয়াং হাই, কেইক্সিন মিডিয়ার প্রধান নির্বাহী ঝ্যাং লিহুই, গ্রামীণ চায়নার প্রেসিডেন্ট গাও শান, শিংমিন ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেম কোং লিমিটেড এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ও পরিচালক হু লু, টিবেট সানলি ইনভেস্টমেন্ট কোং লিমিটেডের পরিচালক পেং শি, তিয়ানঝিন ফাইনান্সিয়াল অ্যাসেট্স এক্সচেঞ্জের পরিচালক ও প্রেডিসেন্ট দিং হুয়ামেই, নাইন-এফ গ্রুপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট চেন লিশিং, নাইন-এফ পুহুইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল স্কুল অব ডেভেলপমেন্ট থেকে অর্থশাস্ত্রে পিএইচডি লি ইয়ুয়ানফাং, ইয়োক্সিন ফাইনান্সিয়াল কোং লিমিটেডের চীফ ফাইনান্সিয়াল অফিসার ওয়াং হাইচেন, বোনুও এআই এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ওয়েই শিনহুয়ান প্রমূখ।

প্রফেসর ইউনূস চায়না কনস্ট্রাকশন ব্যাংকের চেয়ারম্যান তিয়ান গুয়োলি ও তাঁর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে মধ্যাহ্ণভোজে অংশ নেন। ব্যাংকটি তার ১০টি শাখায় গ্রামীণ কর্মসূচি চালু করতে চায়। বর্তমানে ব্যাংকটির ৩টি শাখায় বাংলাদেশী বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় গ্রামীণ মডেলে ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে।

এছাড়াও প্রফেসর ইউনূস অন্তর্ভূক্তিমূলক অর্থায়নের উপর এশিয়ান ফাইনান্সিয়াল কো-অপারেশন অ্যাসোসিয়েশন (এএফসিএ) আয়োজিত ‘এএফসিএ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স’-এ বক্তব্য রাখেন।

উল্লেখ্য যে, এএফসিএ চীন সরকারের সিভিল প্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনকৃত একটি আঞ্চলিক বেসরকারী ও অলাভজনক সংস্থা। এশিয়ার বিভিন্ন দেশের আর্থিক খাতের বিভিন্ন সংস্থা ও বিশেষজ্ঞগণ সহ বিভিন্ন আর্থিক ও শিল্প প্রতিষ্ঠান স্বেচ্ছাভিত্তিতে এর অন্তর্ভুক্ত।

প্রফেসর ইউনূস এএফসিএ’র অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসূচির সহ-সভাপতি। চীন সরকার কর্তৃক চালু এই আন্তর্জাতিক উদ্যোগটির প্রধান কার্যালয় বেইজিংয়ে অবস্থিত। ঢাকায় এই বৈশ্বিক কর্মসূচিটি চালুর সময় প্রফেসর ইউনূসকে তা উদ্বোধন করতে অনুরোধ জানানো হয়।

প্রফেসর ইউনূস শ্রোতাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, কর্মসূচির শুরুতেই তাঁদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাঁরা অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়নের ভেতরে মহাজনী ব্যবস্থাকে স্থান দেবেন কিনা। তিনি বলেন যে, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়নের প্রকৃত সাফল্য তখনই অর্জিত হবে যখন মহাজন ও “পে-ডে” ঋণদাতাদেরকে আর্থিক খাত থেকে চিরতরে দুর করা যাবে।

এছাড়াও প্রফেসর ইউনূস বেইজিং ফাইনান্সিয়াল কোম্পানীর (বিএফএইচজি) সাথে বৈঠক করেন। সংস্থাটির পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান ফ্যান ওয়েনশং এবং স্ট্র্যাটেজিক ইনোভেশন ডিপার্টমেন্টের জেনারেল ম্যানেজার শু হেঝুন অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তারা সহ এই আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে প্রফেসর ইউনূস বলেন, আর্থিক নীতি প্রভাবিত করতে এটি একটি সত্যিকার পাওয়ার হাউস হতে পারে। অর্থের বিভিন্ন প্রবাহ পরীক্ষা করে এটি চলমান নাটকের মতো প্রকৃত সময়ে সম্পদের কেন্দ্রীকরণ পর্যবেক্ষণ করতে পারে এবং প্রকৃত সময়ে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনগুলো ও তাদের গতি-প্রকৃতি উদ্ঘাটন করতে পারে।

প্রফেসর ইউনূস ডাটা কোম্পানীটিকে আর্থিক অন্তর্ভূক্তির নামে কোথাও কোথাও লুণ্ঠনমূলক ঋণের ব্যবসা হচ্ছে বলে সতর্ক করেন এবং বলেন যে, এই প্রতিষ্ঠানগুলো যে সম্পদ ও মর্যাদা পাচ্ছে তারা তার উপযুক্ত নয়। আর্থিক প্রযুক্তি বা ফাইনান্সিয়াল টেকনোলজি পরিস্থিতিকে বরং খারাপ করতে পারে যদি এটা নিপীড়নমূলক অর্থায়নের কাজে ব্যবহৃত হয় এবং এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এ ধরনের ব্যবস্থাকে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়নের বিরুদ্ধ শক্তি হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। “এগুলো এক ধরনের আর্থিক শোষণ,” তিনি বলেন।

এছাড়াও প্রফেসর ইউনূস বাংলাদেশী সহ চীনের বেশ কিছু বৃহৎ ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তার সাথে পৃথক বৈঠক করেন যাঁরা প্রফেসর ইউনূসকে অভ্যর্থনা জানান। এরপর তিনি সাংহাইয়ের ডেপুটি মেয়র এবং সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক চেয়ারম্যান উ কিন-এর সাথে বৈঠক করবেন।


সর্বশেষ সংবাদ