৪৮ ঘন্টার মধ্যে কমিটি বাতিল না হলে অনশন করবেন পদ বঞ্চিতরা
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৪ মে ২০১৯, ০১:৩৩ PM , আপডেট: ০৫ মে ২০২৪, ০৭:০০ AM
৪৮ ঘন্টার মধ্যে ছাত্রলীগের ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি বাতিল করা না হলে অনশনে বসার হুমকি দিয়েছেন পদ বঞ্চিতরা। এছাড়া ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশেই মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগ নেত্রীদের উপর হামলা হয়েছে বলেও তারা অভিযোগ করেছেন। মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তারা।
এর আগে পদ বঞ্চিত ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের হাকিম চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মধুর ক্যান্টিনে গিয়ে শেষ। এ সময় কমিটি মানেন না বলে স্লোগান দেন ছাত্রলীগের পদ বঞ্চিতরা।
সাংবাদিক সম্মেলনে রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি বিএম লিপি আক্তার বলেন, ‘আমি রোকেয়া হলের সভাপতি ও ডাকসুর কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদের দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় আমাকে ছাত্রলীগের উপ সম্পাদক পদ দেওয়া হয়েছে। আমি ছাত্রলীগের সেক্রেটারিকে জিজ্ঞেস করেছি যে, কোন ক্রাইটেরিয়ার ভিত্তিতে আপনি আমাকে ছাত্রলীগের উপ সম্পাদক পদ দিয়েছেন। তিনি উত্তর দিয়েছেন, ডাকসুর গুরুত্বপূর্ণ পদে আছি বলে আমাকে এই পদ দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ব্যাপারটা এমন আপনি এবার এমপি নির্বাচন করেছেন, এবার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচন করেন। আমার প্রশ্ন হলো- আপনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে থেকেও কেন ডাকসু নির্বাচন করলেন।’
এসময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘কমিটিতে যারা স্থান পেয়েছে তারা শোভন-রাব্বানী কমিটির ৮-১০ মাস রাজনীতি করেছে, তাদের পেছনে-পেছনে ঘুরেছে। তাদের মেকানিজমে যারা তাদেরকেই কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে। আগের দুই কমিটির ত্যাগী কাউকে রাখা হয়নি।’
লিপি আক্তার বলেন, ‘যারা মধুর ক্যান্টিনে মারধর করেছে তাদেরকেই তদন্ত কমিটির সদস্য করা হয়েছে। এই তদন্ত কমিটি আমরা মানি না। ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সরাসরি নির্দেশেই হামলা চালানো হয়েছে।’
এসময় তিনি ৪৮ ঘন্টার মধ্যে কমিটি বাতিল করা না হলে সবাই মিলে অনশন করার হুশিয়ারি দেন তিনি। এছাড়া একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিলে তদন্ত কমিটি মানবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সিনিয়র কোন নেতা বললে তা তারা মানবেন না।
সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ছাত্রলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক সাইফ বাবু বলেন, ছাত্রলীগ এ দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামের সারথী। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে এই সংগঠনটির নাম। কখনো রাজপথে, কখনো পড়ার টেবিলে, কখনো মিছিলে কখনো স্লোগানে রাজপথ থেকে শুরু করে স্বৈরশাসকে বদ্ধ গেইট রক্ত দিয়ে, জীবন দিয়ে প্রকম্পিত করেছে ছাত্রলীগ।’
তিনি বলেন, ‘২৯তম জাতীয় সম্মেলনের দীর্ঘ এক বছর পর বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়েছে, যাতে পদ দেওয়া হয়েছে ৩০১ জনকে। নিবেদিত প্রত্যেকটি ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর আজ আনন্দিত হওয়ার কথা ছিল, উল্লাস করার কথা ছিল। সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে বুকে জড়িয়ে নিয়ে আনন্দ করার কথা ছিল। কিন্তু তা না করে উল্টো ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে সংবাদ সম্মেলন করতে হচ্ছে।’
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘ আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি বিগত সময়গুলোতে যারা সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের একটি বৃহৎ অংশকে বাদ কিংবা সঠিক পদে মূল্যায়ন না করে ছাত্রলীগে নিষ্ক্রিয়, সাবেক চাকরীজীবী, বিবাহিত, অছাত্র, গঠনতন্ত্রের অধিক বয়স্ক, বিভিন্ন মামলার আসামি, মাদকসেবী, মাদক ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন অপকর্মের দায়ে ছাত্রলীগ থেকে বহিস্কৃতসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পদায়ন করা হয়েছে। এমন ব্যক্তিদের পদায়ন দেখে ছাত্রলীগের একজন নিবেদিত প্রাণকর্মী হিসেবে আমাদের বঞ্চিত করেছে।’
সাইফ বাবু বলেন, ‘কমিটি প্রকাশ হওয়ার পরপরই ছাত্রলীগের পদ বঞ্চিত বিক্ষুব্ধ কর্মীরা কমিটির প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক একটি বিক্ষোভ মিছিল করেছিল। কিন্তু সেই বিক্ষোভ মিছিলে হামলা করে নারী নেতৃবৃন্দসহ বেশ কয়েকজনকে আহত করা হয়েছে। হামলার প্রতিবাদে যখন মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল সেখানেও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে মারাত্মকভাবে জখম করা হয়েছে। আর এই হামলাটি চালিয়েছে কমিটিতে জায়গা করে নেওয়া কিছু গর্বিত ভাই-বন্ধুরা।’
এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন জানিয়ে বলেন, ‘অধিকাংশ ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীকে বাদ দিয়ে যে কমিটি করা হয়েছে তা ভেঙে দিতে হবে।’ এছাড়া অধিক তদন্তের মাধ্যমে একটি সুন্দর, সুষ্ঠু ও অর্থবহ কমিটি করার দাবি জানান তিনি।
পাশাপাশি যারা বিক্ষোভ মিছিল ও সংবাদ সম্মেলনে হামলা চালিয়ে নেতাকর্মীদের রক্তাক্ত করেছে তাদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানান সাইফ বাবু। তিনি বলেন, ‘বিচারের আশ্বাস নয় আমরা চাই প্রকৃত অপরাধীরা দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের কৃতকর্মের সাজা পাক।’