১২ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:২৪

রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ-বাসে অগ্নিসংযোগ, নাশকতা দমনে তল্লাশি পুলিশের

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগ  © সংগৃহীত

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণ ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পুরান ঢাকার কাঠেরপুল, মিরপুর বেড়িবাঁধ, গুলিস্তান, হাতিরঝিল, কারওয়ান বাজারসহ একাধিক স্থানে এসব নাশকতা ঘটে।

সূত্রাপুরের ফায়ার সার্ভিসের গেটের সামনে মালঞ্চ পরিবহনের একটি বাসে সন্ধ্যা ৬টার দিকে দুর্বৃত্তরা আগুন ধরিয়ে দেয়। মুহূর্তেই বাসটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সৌভাগ্যবশত বাসে কেউ না থাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। রাতে মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় আশুলিয়া পরিবহনের একটি বাসেও একইভাবে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।

এদিকে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে রাত ৯টার দিকে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। পরে হাতিরঝিলের রেইনবো ক্রসিং এবং কারওয়ান বাজার মাছ আড়তের সামনে আরও দুটি বিস্ফোরণ ঘটে। একের পর এক বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় রাজধানীতে চরম উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাজধানীর গুলিস্তান, কাকরাইল, কারওয়ান বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে চেকপোস্ট বসিয়ে রাতভর তল্লাশি চালায়। হাতিরঝিল থানার উপপরিদর্শক মো. সাইদুর রহমান জানান, মোটরসাইকেল ও সিএনজিতে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া গেলে তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। বিস্ফোরক বা অবৈধ দ্রব্য পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন: মোহাম্মদপুরে প্রিপারেটরি স্কুলে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ

ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে রাজধানীতে ২০টির বেশি ককটেল বিস্ফোরণ এবং ১১টি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার গভীর রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত যাত্রাবাড়ী, ভাটারা ও উত্তরা এলাকায় পার্কিং করা অবস্থায় তিনটি বাস ও একটি প্রাইভেটকারে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।

ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার রাশেদ বিন খালিদ জানান, রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ এলাকায় রাজধানী পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। রাত ২টা ৮ মিনিটে যাত্রাবাড়ীর ইবনে সিনা হাসপাতালের সামনে রাইদা পরিবহনের আরেকটি বাসে আগুন লাগে। রাত ২টা ৩৫ মিনিটে ভাটারা এলাকায় একটি প্রাইভেটকারে অগ্নিসংযোগ করা হয় এবং ভোর ৪টার দিকে উত্তরার খালপাড় এলাকায় রাইদা পরিবহনের আরেকটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। সবগুলো ক্ষেত্রেই ফায়ার সার্ভিস দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

এর আগে সোমবার ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, আগারগাঁও, মিরপুর, বাংলামোটর, মেরুল বাড্ডা, শাহজাদপুর ও সায়েন্সল্যাব এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ ও বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। যদিও এসব ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি, তবে নগরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

রাজধানীর বাইরে একই ধরনের ঘটনার মধ্যে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে বাসচালকের মৃত্যু হয়েছে।

ডিএমপির তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত রাজধানীতে ১৫টি স্থানে ১৭টি ককটেল বিস্ফোরণ ও ৯টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ঘটেছে। এসব ঘটনায় ১৭টি মামলা হয়েছে এবং গত ২৪ ঘণ্টায় ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

মঙ্গলবার মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। তিনি বলেন, কার্যক্রম নিষিদ্ধ একটি রাজনৈতিক দল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে অস্থিরতা সৃষ্টি ও জনমনে ভীতি ছড়ানোর চেষ্টা করছে।

তিনি জানান, গত তিন দিনে ককটেল বিস্ফোরণ, অগ্নিসংযোগ ও ঝটিকা মিছিলের ঘটনায় ৫৫২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই রাজধানীর বাইরের জেলা থেকে এসেছে। হামলাকারীরা হেলমেট ও মাস্ক পরে এসব নাশকতা চালাচ্ছে এবং অনেক ক্ষেত্রে অপ্রাপ্তবয়স্কদেরও ব্যবহার করা হচ্ছে।

রাজধানীবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘অপরিচিত কাউকে আশ্রয় দেবেন না, যানবাহন কাউকে ধার দেবেন না এবং সন্দেহজনক কাউকে দেখলে পুলিশকে জানান।’

তিনি আরও বলেন, অরক্ষিত অবস্থায় থাকা বাসেই মূলত আগুন দেওয়া হচ্ছে। তাই যানবাহন সুরক্ষিত রাখার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘নাশকতাকারীদের দমনে জনগণের সহযোগিতা চাই। ঢাকাবাসীই প্রতিহত করবে এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।’