মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়া বন্ধ ৯ মাস, বন্ধই থাকবে দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার?
- শিউলি রহমান
- প্রকাশ: ১০ মে ২০১৯, ১২:৩৩ PM , আপডেট: ১০ মে ২০১৯, ০২:২০ PM
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার মালয়েশিয়ায় নতুন কর্মী নিয়োগ হচ্ছে না প্রায় আট মাস। সংঘবদ্ধ চক্রের (সিন্ডিকেট) বাজার নিয়ন্ত্রণের অভিযোগে সেখানে কর্মী নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। এ অচলাবস্থার কারণে এক লাখ মানুষ কর্মসংস্থানের সুযোগ হারালেও ওই চক্রের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। এতে রেমিট্যান্স প্রবাহেও বড় প্রভাব পড়েছে।
জানা গেছে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশের ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে একতরফা ও অনৈতিকভাবে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর অভিযোগ ওঠে। এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে দুই দেশের সরকারি-বেসরকারি অনেকেও জড়িত। তারা সরকারি খরচের অতিরিক্ত চার হাজার ৭০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগে জানা যায়। এ অবস্থায় গত সেপ্টেম্বর থেকে শ্রমবাজার বন্ধ করে দেয় মালয়েশিয়া সরকার।
সূত্র জানিয়েছে, ওই চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বাজার চালু করার ব্যাপারে সরকার বেশি উদ্যোগী। আগামী ১৪ মে কুয়ালালামপুরে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকও হওয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে থাকছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদ।
প্রবাসীকল্যাণ সচিব রৌনক জাহান এ ব্যাপারে বলেছেন, নতুন কোনো চক্র যাতে তৈরি না হয়, এ জন্য কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে। এছাড়া দায়ীরা অবশ্যই শাস্তি পাবে। তবে এখন বাজার চালু করতে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর জন্য অন্তর্র্বতীকালীন প্রক্রিয়া চালু করতে দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ (জেডব্লিউজি) একাধিকবার বৈঠক করলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। এ ব্যাপারে মালয়েশিয়া সরকারের গঠিত স্বাধীন তদন্ত কমিটি একটি খসড়া প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
এদিকে বাংলাদেশে ছয় মাসের মধ্যে অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে উচ্চ আদালত নির্দেশ দিলেও সে সময়সীমা পার হয়ে গেছে। তদন্ত কমিটি করা হলেও থমকে আছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর থেকে নতুন করে কোনো বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়ার ভিসা পাননি। তবে আগে ভিসা পাওয়া কর্মীরা এর পরও গিয়েছেন। ২০১৮ সালে মালয়েশিয়ায় গেছেন এক লাখ ৭৫ হাজার ৯২৭ জন কর্মী গিয়েছেন।
তাদের হিসেব অনুযায়ী, ২০১৩ সালের আগে টানা চার বছর সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি প্রায় বন্ধ ছিল। ফলে ওই বছর আয় কমে যায়। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে প্রবাসী আয় বাড়লেও ২০১৬ ও ২০১৭ সালে কমে যায়। তবে ২০১৭ সালে রেকর্ড ১০ লাখ কর্মী বিদেশে যাওয়ায় ২০১৮ সালে রেকর্ড প্রবাসী আয় হয়।
আর চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে মালয়েশিয়ায় গেছেন মাত্র ৫৫ জন। অথচ গত বছরের প্রথম তিন মাসে কর্মী গেছেন ৩৮ হাজার ৮৬৫ জন। সবমিলিয়ে গত ৮ মাসে এক লাখের বেশি কর্মীর মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সুযোগ হত বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় একজন কর্মী মাসে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা আয় করলেও বাজার বন্ধ থাকায় রেমিট্যান্স আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, একজন কর্মীর দেশে টাকা পাঠাতে আট থেকে ১২ মাস সময় লাগে। এজন্য কর্মী যাওয়ার সংখ্যা বাড়া-কমার সঙ্গে সঙ্গেই প্রবাসী আয়ে প্রবাহে প্রভাব পড়ে না।
এদিকে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম কুলাসেগেরান জানিয়েছেন, নেপাল ও বাংলাদেশের কর্মী নেওয়ার প্রক্রিয়া শিগগিরই শুরু হতে পারে। এছাড়া একজন বিচারপতির নেতৃত্বে বিদেশি কর্মী-বিষয়ক স্বাধীন কমিটি গঠন করেছে মালয়েশিয়ার সরকার। সে কমিটি সমন্বিত কাঠামোর পাশাপাশি অনলাইন জব পোর্টাল খোলার সুপারিশ করা হয়েছে। মালয়েশিয়ান রিক্রুটিং এজেন্সি (এমআরএ) নামে ওই পোর্টালে নিয়োগকর্তারা তাঁদের চাহিদা জানাতে পারবেন এবং কর্মীরা আবেদন করতে পারবেন।
নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে আড়াই লাখ মালয়েশিয়ান মুদ্রা জামানত দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। কর্মীর বেতন-ভাতা বকেয়া হলে কিংবা ক্ষতিপূরণ প্রয়োজন হলে জামানত থেকে অর্থ কেটে কর্মীকে পরিশোধ করা হবে। চাকরির আবেদন জমা দেওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দেবে এমআরএ।
অবশ্য ১০ এজেন্সির চক্র অনেক শক্তিশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। নতুন করে আবারও বাজার দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে চক্রটি। এ ব্যাপারে বায়রার মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী বলেন, কর্মী পাঠাতে সব এজেন্সির সমান সুযোগ রাখা হলে কোনো চক্র বাজার নিয়ন্ত্রণের সুযোগ পাবে না।
সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের সম্ভাবনা কাজে লাগানোর সুযোগ বারবার হোঁচট খাচ্ছে। এ ব্যাপারে বেসরকারি সংস্থা রামরুর পরিচালক সি আর আবরার বলেন, সরকার জড়িতদের শাস্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ দৃশ্যমান হয়নি। এ বাজার অন্যদের দখলে গেলে বিরাট সুযোগ হাতছাড়া হবে বলেও মনে করেন তিনি।