এ মাসেই আসছে আরেক ঘূর্ণিঝড় ‘বায়ু’
এরপর হিক্কা, কায়ার, মাহা, বুলবুল, পবন ও আম্ফান
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৬ মে ২০১৯, ০৩:০১ PM , আপডেট: ০৬ মে ২০১৯, ০৩:০১ PM
ঘূণিঝড় ফণির পর এবার আসছে ‘বায়ু’। এ মাসেই ছোবল দিতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি। ঝড়টির নামও দিয়েছে ভারত। এমনটিই জানালেন আবহাওয়া অধিদপ্তর। চলতি মাসের দীর্ঘমেয়াদি আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দুটি নিম্নচাপের মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড় মাথাচাড়া দিতে পারে। আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঝড়টি কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়।
শুক্রবার ভারতের ওড়িশা, পুরীসহ কয়েকটি জায়গায় আঘাত করার পর থেকে ফণির প্রভাব কমতে শুরু করে। কিন্তু তারপরও বাংলাদেশ প্রস্তুত ছিল ফণি মোকাবিলায়। তবে বৃহস্পতিবার থেকে ভারতের আবহাওয়া অফিস থেকে প্রতি ঘণ্টায় পূর্বাভাস দিয়েছে ফণি বাংলাদেশে আঘাত করবে না এবং তার আগেই দুর্বল হয়ে যাবে।
এদিকে ফণির দুর্বল হওয়ার পাশাপাশি ভারতের পক্ষ থেকে আরেক ঝড় ‘বায়ু’র কথা বলা হয়েছে। দেশটির আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ফণির তান্ডব একসময় ঝিমিয়ে পড়বে। তারপর আবার এক নতুন সামুদ্রিক ঝড় তৈরি হবে। সেই ঝড়ের নাম দেওয়া হয়েছে ‘বায়ু’। এই নামকরণ করেছে ভারত। আরও ছয়টি ঝড় এখনো নামের তালিকায় রয়েছে। সেগুলো হলো হিক্কা, কায়ার, মাহা, বুলবুল, পবন ও আম্ফান। এই নাম ফুরিয়ে গেলে আবার বৈঠকে বসে নতুন নামকরণ শুরু হবে।
সাধারণত বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) আঞ্চলিক কমিটি একেকটি ঝড়ের নামকরণ করে। এর মধ্যে ভারত মহাসাগরের ঝড়গুলোর নামকরণ করে এই সংস্থার অন্তর্ভুক্ত আট দেশ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, মলদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও ওমান। বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগর উপকূলের আটটি দেশের (বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এবং ওমান) প্যানেল ডব্লিউএমও/ইএসসিএপি অনুসারে একটি তালিকা থেকে পরবর্তী ঝড়ের নামকরণ করা হয়। এই আটটি দেশ একেকবারে আটটি করে ঝড়ের নাম প্রস্তাব করেছে। প্রথম দফায় মোট ৬৪টি নাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্যানেলকে বলা হয় ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক (এএসসিএপি)। আর এ সংস্থার সদস্য হিসেবেই ‘ফণি’ নামটি দিয়েছে বাংলাদেশ। আরও সাতটি ঝড়ের পর বাংলাদেশ আবার চারটি ঝড়ের নাম দেবে। ভারতের পক্ষে ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তাবিত নাম হলো অগ্নি, আকাশ, বিজলি, পানি, লহর, মেঘ, সাগর।
একসময় ঝড়গুলোকে নানা নাম্বার দিয়ে শনাক্ত করা হতো। কিন্তু সেসব নাম্বার সাধারণ মানুষের কাছে দুর্বোধ্য হতো। ফলে সেগুলোর পূর্বাভাস দেওয়া, মানুষ বা নৌযানগুলোকে সতর্ক করাও কঠিন মনে হতো। বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরের উপকূলবর্তী দেশগুলোয় ঝড়ের নামকরণ শুরু হয়।
এর আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্র বা অস্ট্রেলিয়া অঞ্চলে ঝড়ের নামকরণ হতো। ভারত মহাসাগরে ঘূর্ণিঝড়কে সাইক্লোন বলা হলেও আটলান্টিক মহাসাগরীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়কে বলা হয় ‘হারিকেন’, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বলা হয় ‘টাইফুন’।
ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ প্রসঙ্গে আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার বৈঠকে বাংলাদেশের এক বা একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা অংশ নিয়ে থাকেন। আগে থেকে তারা আলোচনা করে নেন কী নাম হবে।
তিনি বলেন, ঝড়ের নাম বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা হয়, যাতে সেটি ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক বা সামাজিকভাবে কোনোরকম বিতর্ক বা ক্ষোভ তৈরি না করে। তিনি বলেন, ২০১৩ সালে একটি ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘মহাসেন’। নামটি প্রস্তাব করেছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু সেখানকার সাবেক একজন রাজার নাম ছিল ‘মহাসেন’, যিনি ওই দ্বীপে সমৃদ্ধি নিয়ে এসেছিলেন। ফলে এই নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। এমনকি শ্রীলঙ্কার সংবাদমাধ্যমে সেটিকে ‘নামহীন ঝড়’ বলে বর্ণনা করা হয়। পরবর্তী সময়ে রেকর্ডপত্রে ঝড়টির নতুন নাম নির্ধারণ করা হয় ‘ভিয়ারু’।