বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস আজ
দেশে চিকিৎসা ব্যয় ও দুর্নীতি বেড়েছে
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০১৯, ০১:৩৬ PM , আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৯, ০১:৫৮ PM
আজ রবিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘সমতা ও সংহতি নির্ভর সার্বজনীন প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা’। দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ উপলক্ষে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং স্বাস্থ্য বিষয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থা নানা কর্মসূচি পালন করছে।
মাতৃস্বাস্থ্য, শিশুস্বাস্থ্যসহ নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রশংসা ও স্বীকৃতি পেয়েছে। দেশে পুষ্টি-পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে ক্রমেই। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার মডেল হিসেবে কমিউনিটি ক্লিনিককে ‘বৈপ্লবিক’ বলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তবে চিকিৎসা খাতের ব্যয় ও দুর্নীতি ক্রমেই বাড়ছে। যেটিকে বড় চ্যালেঞ্জ বলছেন অনেকেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ জানিয়েছেন, দেশে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে প্রতিবছর ৫০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে। এতে যে ব্যয় হয়, এর ৬৭ শতাংশ রোগীর পরিবার বহন করে। বাকি ৩৩ শতাংশ সরকার ও দাতা সংস্থা দেয়। এই ব্যয় কমানো স্বাস্থ্য খাতের বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়া স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধি, অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করাও গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি জানান।
সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে রোগীর নিজস্ব ব্যয় সবচেয়ে বেশি। ২০১৭ সালের বাংলাদেশ জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যয় হিসাবের তথ্য অনুযায়ী, এদেশে স্বাস্থ্য ব্যয়ের ৬৭ শতাংশ রোগী বহন করে। আর আফগানিস্তানে বহন করে ৬৪ শতাংশ। এ অঞ্চলে মালদ্বীপে সবচেয়ে কম ১৮ শতাংশ খরচ রোগী বহন করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ওষুধের বাড়তি মূল্য, অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বেসরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে সেবা নেওয়ায় ব্যয় বাড়ছে। এরমধ্যে নিজস্ব খরচের ৬৪ দশমিক পাঁচ শতাংশ ওষুধ কিনতে, আট দশমিক দুই শতাংশ পরীক্ষা-নিরীক্ষায়, ১৩ দশমিক সাত শতাংশ হাসপাতালে এবং চিকিৎসকদের পেছনে আট দশমিক চার শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়।
বিকল্প চিকিৎসা খাতে খরচ হয় পাঁচ দশমিক দুই শতাংশ। দেশে এখন সরকারি হাসপাতালে ৪৯ হাজার ৪১৪টি শয্যা এবং বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ৮৭ হাজার ৬১০টি শয্যা রয়েছে।
বিভিন্ন নথির তথ্যানুযায়ী, অবকাঠামো, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও জনবলে বিনিয়োগ করার পরও মানসম্পন্ন সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। এটা বড় একটি চ্যালেঞ্জ। সরকারি কিছু হাসপাতাল ছাড়া মানুষ জরুরি চিকিৎসাসেবা পায় না এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিকিৎসক রোগীর জন্য বেশি সময় দেন না।
এছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর সরকারের তেমন নিয়ন্ত্রণও নেই। উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে যাচ্ছেন অনেকে। এরমধ্যে অধিকাংশই প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক।
সরকারি প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসকের অনুপস্থিতি মানসম্পন্ন সেবার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে দুর্নীতির নজির পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিকিৎসা শিক্ষা শাখার একজন কর্মচারীর দেশে ও বিদেশে শত শত কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন বলেও জানা যাচ্ছে। অথচ এ খাতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজির নেই বলে জানা যায়।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সেবার মূল্য কমানো ও মান বৃদ্ধির পাশাপাশি দুর্নীতির রাশ টেনে ধরা সম্ভব হলে স্বাস্থ্য খাত আরও অনেক এগিয়ে যাবে। এজন্য নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে। নজরদারি সেল পূর্ণমাত্রায় কাজ শুরু করলে সেবার মান বাড়বে, দুর্নীতিও কমবে বলেও তারা মনে করেন।