০৩ মার্চ ২০২৫, ১৩:১০

ঐতিহ্যের সাক্ষী শেরপুরের মাইসাহেবা মসজিদ

ঐতিহ্যের সাক্ষী শেরপুরের মাইসাহেবা মসজিদ
মাইসাহেবা জামে মসজিদ  © সংগৃহীত

ভারতের মেঘালয় ঘেঁষা গারো পাহারের পাদদেশে অবস্থিত শেরপুর জেলা। জেলায় রয়েছে নানান নিদর্শন। এর মধ্যে ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আড়াই শ বছরের পুরোনো মাইসাহেবা জামে মসজিদ। বর্তমানে মূল মসজিদে ছয় হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। রমজানে প্রতিদিন মসজিদটিতে ৪০০ থেকে ৫০০ মুসল্লি ইফতার করেন।

শেরপুর জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে শেরপুর সরকারি কলেজ। এর দক্ষিণ পাশে রয়েছে নান্দনিক স্থাপনা মাইসাহেবা জামে মসজিদ। ঐতিহাসিক মসজিদটির নামকরণ নিয়ে স্থানীয়ভাবে একটা গল্প প্রচলিত। বলা হয়, একদিন শেরপুরের তিনআনি জমিদার মুক্তাগাছার জমিদারকে দাওয়াত করেন। দাওয়াতের উত্তরে মুক্তাগাছার জমিদার শেরপুরে একটি জায়গা চান, যেখানে তিনি বিশ্রাম করবেন। সে সময় এ স্থানে তিনআনা জমিদারের খাজনা আদায়ের ঘরের পাশে একটা আলাদা ঘর ছিল, জমিদার ঘরের জায়গাটা মুক্তাগাছার জমিদারকে দেবেন বলে মনস্থির করেন এবং এ জন্য হাতি দিয়ে ঘরটি ভেঙে দেওয়ার আদেশ দেন। কিন্তু হাতি যখনই ঘরটির কাছে আসে তখনই হাতিটি মাথা নুইয়ে বসে পড়ে। খবর পেয়ে তিনআনি জমিদার এসে দেখেন, ঘরের ভেতর একজন নারী আল্লাহর ইবাদতে মশগুল।

আরও পড়ুন: যন্ত্রের দাপটে হারিয়ে যেতে বসেছে হাতে ভাজা মুড়ির শত বছরের ঐতিহ্য

জমিদার ব্যাপারটিকে অলৌকিক মনে করেন এবং ক্ষমা চেয়ে ঘর ভাঙা থেকে বিরত থাকেন। এই ধর্মপ্রাণ নারীর নাম ছিল মাইসাহেবা। তার মৃত্যুর পর জমিদার এখানে এ মসজিদ নির্মাণ করেন এবং এর নাম দেন মাইসাহেবা জামে মসজিদ। বর্তমানে মসজিদের ব্যাপক সংস্কার ও আধুনিকায়নের কাজ করা হলেও তাতে ঐতিহ্যের ছাপ রক্ষা করা হয়েছে।

আনুমানিক আড়াইশ বছর আগে নির্মিত এই মসজিদ শেরপুর জেলার অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন। মসজিদটি তিনতলাবিশিষ্ট। নিচতলায় রয়েছে নামাজ ও অজুর ব্যবস্থা। দোতলায় নামাজের ব্যবস্থা ও ধর্মীয় পাঠাগার রয়েছে। ভেতরে রয়েছে মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা মাইসাহেবার কবর। বর্তমানে মূল মসজিদে ছয় হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের প্রবেশ পথে দুটি বড় গেট এবং মসজিদের দুটি সুউচ্চ মিনার রয়েছে। বর্তমানে ১০ হাজার মুসল্লির ধারণক্ষমতা, নারীদের নামাজের স্থান ও সমগ্র মসজিদ শীততাপনিয়ন্ত্রিত করার কাজ চলছে। নিরাপত্তা জন্য রয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। রমজানের সময় প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ মুসল্লি ইফতার করেন এই মসজিদে।