এনসিপির কর্মীদের ঢাকায় আনতে সরকারের বাস রিকুইজিশন, সমালোচনার ঝড়
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২৫, ০৮:০৬ PM , আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৫, ০৮:১১ PM

রাজধানী মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বিশাল অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ হয়েছে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি)। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া সমন্বয়ক ও শিক্ষার্থীদের দল এটি। অভিযোগ উঠেছে, আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকায় আসা-যাওয়ার জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে সরকারিভাবে বাসা আনা হয়েছে। এর মধ্যে পিরোজপুরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বাস রিকুইজিশনের একটি চিঠি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এছাড়াও সরকারি নানা সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার উঠেছে নতুন দলটির বিরুদ্ধে। এজন্য নতুন দলকে ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে বিবেচনা করছেন অনেকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও রাজনৈতিক মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
কিংস পার্টি হিসেবে সমালোচনা করে নেটিজনেরা বলছেন, রাজধানীতে এনসিপি যে অনুষ্ঠান করেছে, সে অনুষ্ঠানে দেশের প্রায় সব জেলা থেকে বাসভর্তি করে শিক্ষার্থীদের আনা হয়েছে। অধিকাংশ জেলা থেকে সরকারি বাস দিয়েই শিক্ষার্থীদের আনা-নেওয়া করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের খাওয়া ও হাতখরচ বাবদ টাকাও দেওয়া হয়েছে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের রাস্তা বন্ধ করে অনুষ্ঠান করা হয়েছে। এনসিপিকে নানাভাবে সরকার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে।
অবশ্য, সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই বলে দাবি করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। আজ শনিবার (১ মার্চ) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এই দাবি করেন প্রেস সচিব।
প্রেস সচিব বলেন, ‘পিরোজপুরের ডিসি এ বিষয়ে জানিয়েছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটি কয়েকটি বাস রিকুজেশনের জন্য ডিসিকে চিঠি দিয়েছে। সেখানে তারা জুলাই বিপ্লবে যারা আহত ও নিহত হয়েছেন— এমন দুটি পরিবারকে আনতে সহযোগিতা চান। সেই রিকোয়েস্ট এবং একধরণের প্রেশারে প্রেক্ষিতে ৫টি বাস রিকুইজিশন করাতে হেল্প করে। এ ব্যাপারে ডিসি অফিস থেকে কোনো জ্বালানি তেল বা অন্যান্য কোন খরচ দেওয়া হয়নি বলেও ডিসি জানিয়েছেন। এধরণের ঘটনা আরও কোথাও ঘটেছে কিনা তা দেখছি।’
শফিকুল আলম বলেন, ছাত্রদের রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে লোক আনতে সরকারিভাবে বাস রিকুইজিশনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেটি ঘটেছে তা অতিরঞ্জিত। পিরোজপুর বাসের সমাবেশে যোগ দেওয়ার ঘটনায় সরকারের কোনো রোল নাই। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে কথা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার সব রাজনৈতিক দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করছে, যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশ নিতে পারে— এটা আমাদের মূল দায়িত্ব। সব পার্টির জন্য আমাদের অবস্থান সমান। এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বেশিরভাগ তথ্য অতিরঞ্জিত।’
জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের নতুন স্বপ্নের জন্ম দিয়েছে। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন তরুণেরা। এ এ জন্য দরকার সুসংগঠিত রাজনীতির। জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে এত দিন সে প্রস্তুতিই চলছিল। অবশেষে গতকাল শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) আত্মপ্রকাশ করল জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
এনসিপির আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর সংসদের পাশে পূর্বমুখী করে মঞ্চ নির্মাণ করা হয়। মঞ্চের সামনে দুই হাজার চেয়ার রাখা হয় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের পরিবার, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত কূটনৈতিক প্রতিনিধিদলের জন্য। গতকাল সকাল থেকেই জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যরা অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হন।
জুমার নামাজের পর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মিছিল সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করে। বেলা ৩টা পর্যন্ত মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অবস্থান নেয় তারা। তবে এরপরই নেতা-কর্মীদের চাপ বাড়ে, তাঁদের অবস্থান খেজুরবাগান মোড় পর্যন্ত চলে আসে।
সমাবেশে আগতদের অধিকাংশই ছিলেন তরুণ-তরুণী। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। তবে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষকেও দেখা যায়। কয়েকটি মিছিলে ঘোড়ার গাড়ি, বাদ্যযন্ত্রের দলও দেখা যায়। জনসভায় আসা নারী ও পুরুষদের জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের দুটি মোবাইল টয়লেট ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়।
বিকেলে নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আনুষ্ঠানিক দলটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। তরুণদের নতুন এই রাজনৈতিক দলের আহ্বায়ক হিসেবে নাহিদ ইসলামের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। সদস্যসচিব পদে রয়েছেন আখতার হোসেন। এরই মধ্যে দলটির আহ্বায়ক, সদস্যসচিবসহ ১৫১ জন নেতার নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
অনেকে বলেন, ঢাকা বিশাল অনুষ্ঠান করতে বিপুল অংকের টাকা খরচ হয়েছে। টাকা তাদের কে দিয়েছেন? কীভাবে অনুষ্ঠান আয়োজনের খরচের টাকা পেয়েছেন? তাদের অনুমান, সরকার বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছে নতুন দলটিকে।