একত্রীকরণের দাবি মিথ্যা বলছে গণঅধিকারের একাংশ, ফারুককে অব্যাহতি

গণঅধিকার পরিষদের এক হওয়ার কথা জানিয়েছেন একাংশের সদস্য সচিব ফারুক হাসান
গণঅধিকার পরিষদের এক হওয়ার কথা জানিয়েছেন একাংশের সদস্য সচিব ফারুক হাসান  © সম্পাদিত

নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে দুই ভাগে বিভক্ত হওয়া রাজনৈতিক দল গণঅধিকার পরিষদের এক হওয়ার কথা জানিয়েছেন একাংশের সদস্য সচিব ফারুক হাসান। আজ মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে ঘোষণা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। তবে তাঁর পক্ষের নেতাকর্মীরা সে দাবি অস্বীকার করে জানিয়েছেন, ফারুককে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

গণঅধিকার পরিষদের দপ্তর সহ-সমন্বয়ক আরিফ বিল্লাহ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গণঅধিকার পরিষদ দীর্ঘ সময় যাবত রাজপথে দেশের জনগণের স্বার্থে যৌক্তিক আন্দোলনে প্রথম সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছে। দলটির মধ্যে ফাটল তৈরি করবার ষড়যন্ত্র চলছিল দীর্ঘ সময় যাবত। সাবেক ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব ফারুক হাসান এ কাজে ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে উক্ত কাজে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায়। 

এ ছাড়া দলের স্বার্থ বিরোধী বেশ কিছু কর্মকাণ্ডের সাথে ফারুক হাসানের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। তার ফলশ্রুতিতে কয়েকদিন যাবত দলের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা চলতে থাকে। হঠাৎ করে ফারুক হাসান  ২৮ ডিসেম্বর রাতে নুরুল হক নুরকে সাথে নিয়ে সিনিয়র যুগ্ম সদস্য তারেক রহমানের কাছে আসেন এবং তাকে দল একত্রিতকরণ বিষয়ে আলোচনা করেন। তারেক অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, একক কোন সিদ্ধান্ত দেওয়ার বিষয় নয়।

এতে আরো বলা হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা প্রয়োজন। অতঃপর কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামানের বাসায় গিয়ে একই প্রস্তাব ফারুক হাসান এবং নুরুল হক নূর দেন। পরবর্তীতে আহবায়ক বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত ব্যতীত তিনি কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন না। পরের দিন ২৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ড. রেজা কিবরিয়ার বাসায় গিয়ে প্রস্তাব করেন ফারুক হাসান, তিনিও অস্বীকৃতি জানান। পরে শুক্রবার ৩ তারিখ দলীয় সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার ডাক দেওয়া হয়। 

এজেন্ডা হিসেবে দুটি দল একত্রিতকরণসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার কথা থাকলেও আপাতৎপরতা ও দলীয় স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে সাবেক ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব ফারুক হাসান জড়িয়ে পড়া ও দল ভাঙ্গার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায়। তার ভিত্তিতে একটি অনলাইন মিটিং হয়। উক্ত মিটিংকে ফারুক হাসানকে সদস্য সচিবের পদ ও সাধারণ সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। 

৩০ ডিসেম্বর সকালে আহবায়কের স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়। অব্যাহতির সংবাদ পেয়ে ফারুক হাসান গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি-নুর) ও গণঅধিকার পরিষদ দুটি একত্রিত হয়েছে বলে গুজব রটায় এবং দলীয় নেতাকর্মীদেরকে বিভিন্নভাবে  বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করেন। এখন পর্যন্ত গণঅধিকার পরিষদ একত্রিতকরণের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। গণঅধিকার পরিষদের একত্রিতকরণ বিষয়টি মিথ্যাচার এবং গুজব বলে বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়েছে।

এর আগে সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে দুই ভাগে বিভক্ত হওয়া কোটা আন্দোলন থেকে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দল গণ অধিকার পরিষদ এক হওয়ার কথা জানায়। সময়ের প্রয়োজনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা জানায় তারা। ফারুক হাসানের নেতৃত্বাধীন গণ অধিকার পরিষদ এবং নুরুল-রাশেদ নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদের মিলিত হওয়ার গুঞ্জন। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন দুই গ্রুপের একাধিক নেতা।

গণঅধিকার পরিষদের দপ্তর সহ-সমন্বয়ক আরিফ বিল্লাহ মঙ্গলবার সকালে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এক হওয়ার দাবি সত্য নয়। ফারুক তিন-চারজন নেতাকে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে দলের কার্যক্রমে কোনও প্রভাব পড়বে না। 

আরো পড়ুন: বিভেদ ভুলে এক হচ্ছে গণ অধিকার পরিষদের দুই গ্রুপ

এর আগে সোমবার গণঅধিকার পরিষদের আরেক অংশের সাধারণ সম্পাদক মুঁহাম্মদ রাশেদ খান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘ফারুক হাসান নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ আমাদের সাথে মিলিত হচ্ছেন তার দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে। আমরা আবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে একসঙ্গে কাজ করব।’

বিষয়টি নিশ্চিত করে ফারুক হাসান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘গণঅধিকার পরিষদের দু’গ্রুপ ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। আমরা আবারও পূর্বের মত একসঙ্গে কাজ করব।’

গণঅধিকার পরিষদের আরেক নেতা আবদুজ জাহের দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমরা বিবেদ ভুলে একসাথে কাজ করব সবাই। তাই দু’গ্রুপ আবারও ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। ২০১৮ সাল থেকে আন্দোলন করা সকলে একসাথে আবারও ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগঠনকে আরও সমৃদ্ধ করতে চাই।’

২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে কোটাবিরোধী আন্দোলন করে পরিচিতি পাওয়া নুরুল হক ছাত্র অধিকার পরিষদের ব্যানারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে নুরুল হক ও তার সমমনা ব্যক্তিরা ২০২১ সালের অক্টোবরে গণ অধিকার পরিষদ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন।


সর্বশেষ সংবাদ