বন্ধ হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি, অব্যাহত রাখার দাবিতে গণঅনশন
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৬ PM , আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০৬ PM
প্রকল্পের মেয়াদ না বাড়ায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে আগামী ৩১ ডিসেম্বর থেকে। শনিবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেয়া একি বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। এতে বলা হয়, ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির কার্যক্রম পরিচালনা হলেও আগামী ৩১ ডিসেম্বর প্রকল্পের বর্তমান মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তাই আগামী ১ জানুয়ারি থেকে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে।
তবে নতুন বছরের ১ জানুয়ারি থেকে প্রকল্পের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার দাবিতে গণঅনশন করছেন বিশ্বসাহিত্য সাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কার্যক্রমের বিভিন্ন ইউনিটের কর্মী ও পাঠকরা। শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা থেকে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মূল ভবনের সামনে এই গণঅনশন কর্মসূচি পালন করা হয়।
গণঅনশন কর্মসূচি পালন করা কর্মীরা জানান, ‘বিগত ২৫ বছর ধরে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কার্যক্রম অব্যাহতভাবে পাঠক সেবা প্রদান করে এলেও হঠাৎ করে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির কর্তৃপক্ষ পাঠক এবং কর্মীদের স্বার্থ বিবেচনা না করে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করায় পাঠক ও কর্মীদের মধ্যে উৎকণ্ঠা তৈরি হয়। অনশনরত কর্মীদের দাবি, ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কার্যক্রমের আর্থিক সক্ষমতা থাকার পরও লাইব্রেরি কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা পাঠক ও কর্মীদের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা।
গণঅনশন কর্মসূচি
অনশনরতরা আরও দাবি করেন, দেশব্যাপী ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কার্যক্রমের জন্য সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১০৭ কোটি টাকা লাইব্রেরি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রকে প্রদান করে। বরাদ্দকৃত অর্থের পঞ্চাশ শতাংশ টাকা ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষ লাইব্রেরির উন্নয়নে খরচ না করে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের নিজস্ব অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করে। ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির কর্মীদের দাবি বরাদ্দকৃত টাকা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র নিজেদের অ্যাকাউন্টে নিয়ে লাইব্রেরির কর্মী ও পাঠকদের অধিকারগুলো ক্ষুণ্ন করেছে। কর্মীদের দাবি, পঞ্চাশ শতাংশ উদ্বৃত্ত টাকা লাইব্রেরির উন্নয়নে ব্যবহার করে পহেলা জানুয়ারি থেকে বর্তমানে নিয়োজিত কর্মীদের মাধ্যমে পাঠক সেবা অব্যাহত রাখতে হবে।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া কর্মীরা বেশকিছু অভিযোগ তুলে ধরেন। তারা জানান, জানুয়ারি ২০২৩ সাল থেকে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কার্যক্রম চালু থাকলেও গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের দেশব্যাপী ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি প্রকল্প (২য় সংশোধিত) পাস হতে কিছু সময় দেরি হওয়ায় জুন ২০২৩ পর্যন্ত কর্মীদের দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে বেতন প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে প্রকল্প পাস হলেও কর্মীদের জানুয়ারি থেকে নিয়োগ না দেখিয়ে ২০২৩ সালের ১৪ জুন থেকে নিয়োগ কার্যকর দেখায়। গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর এ সময় কর্মীদের বিগত ৬ মাসের বকেয়া ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করলেও ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষ বকেয়া বেতন কর্মীদের দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
ওই বকেয়া বেতনের দাবিতে ২০২৪ সালের ১০ নভেম্বর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রধান নির্বাহী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের সঙ্গে কর্মীরা দেখা করলে বকেয়া বেতন কর্মীদের নভেম্বর মাসেই পরিশোধের আশ্বাস প্রদান করেন। প্রধান নির্বাহীর এমন আশ্বাসের পর কর্মীরা নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরে গেলেও ডিসেম্বর পর্যন্ত টাকাগুলো পরিশোধ করেনি ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষ।
বকেয়া বেতনসহ ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরিকে জুলাই বিপ্লবের আদলে সাজাতে এবং ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির কতিপয় কর্তৃপক্ষের অনিয়মের বিষয়ে তদন্তের দাবি নিয়ে চলতি বছরের ৭ ডিসেম্বর পুনরায় ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির কর্মীরা প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে আলোচনা করলে প্রধান নির্বাহী দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন। কিন্তু ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির কর্মীদের দাবি মেনে না নিয়ে বিপুল সংখ্যক কর্মীকে চাকরিচ্যুত করার লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষ ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি বন্ধ ঘোষণা করায় কর্মীরা অনশনের ডাক দেন।
তবে বিষয়গুলো নিয়ে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কার্যক্রমের পরিচালক কামাল হোসাইন বলেন, ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কার্যক্রম পুনরায় চালুর জন্য আমরা সরকারের সাথে অনেকদিন থেকে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে ৩১ ডিসেম্বর বর্তমান প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। সরকার প্রকল্প পুনরায় চালুর বিষয়ে সম্মত হয়েছে। আর যাদের পাওনা আছে, তাদের প্রত্যেকের নামে চেক রেডি করা আছে, ইতোমধ্যে অনেকে নিয়েছেন। বাকিরা আসলেই পাওনা বুঝে পাবেন।
পরিচালক আরও বলেন, এই কার্যক্রমের সাথে জড়িত কর্মীদের আমরা প্রতিবছর ২ মাসের অতিরিক্ত বেতন হিসেবে প্রজেক্ট বেনিফিট প্রদান করেছি। যাতে প্রকল্প বন্ধ থাকলে সেই টাকায় তারা কিছুদিন চলতে পারেন। কিন্তু যেহেতু এখানে অনেকত মানুষ জড়িত আছেন, আমরা বিষয়টি পুনরায় চালুর বিষয়ে কাজ করছি। প্রকল্প আসলে যারা এতদিন কাজ করছেন তারাই প্রাধান্য পাবেন।