‘পানি-পয়ঃনিষ্কাশন সেবার মান বাড়াতে ওয়াসাকে জনমুখী হতে হবে’
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-৬ অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে নিরাপদ ও স্বল্পমূল্যের খাবার পানিতে সর্বজনীন ও সমতাভিত্তিক প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন খাতে শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সুপেয় পানি ব্যবস্থাপনাকে অন্তর্ভুক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিনিধিত্বমূলক করতে ওয়েভ ফাউন্ডেশন জার্মান ভিত্তিক ওয়াটার ইন্টিগ্রিটি নেটওয়ার্কের (উইন) সহায়তায় জানুয়ারি ২০২৪ থেকে পানি, পয়ঃনিষ্কাশন এবং স্বাস্থ্যবিধির ঝুঁকি মোকাবেলায় পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন খাতে জবাবদিহিতা বৃদ্ধির জন্য সহায়তা শীর্ষক প্রকল্পটি রাজশাহী ও খুলনা সিটি করপোরেশনে বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পের অধীনে খুলনা ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় ওয়াসার গ্রাহকসেবার মানোন্নয়নে একটি গবেষণা এবং সামাজিক নিরীক্ষা পরিচালনা করা হয়।
গবেষণা ও সামাজিক নিরীক্ষার তথ্য, বিশ্লেষণ ও সুপারিশের আলোকে আজ মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) ঢাকার জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে এক লবি সভার আয়োজন করা হয়। ওয়েভ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলীর সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পানি সরবরাহ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. ফজলুর রহমান; বিশেষ অতিথি ছিলেন জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী তুষার মোহন সাধু খাঁ; ড. মুহা. পানি সরবরাহ অধিশাখার যুগ্মসচিব মনিরুজ্জামান; পলিসি সাপোর্ট অধিশাখার যুগ্মসচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম মজুমদার ও পানি সরবরাহ অধিশাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সম্মানীয় অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পানি ও বন্যা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মাসফিকুস সালেহীন; আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ মোহা. আবু আসলাম; কনসালটেন্ট আহমেদ বোরহান ও ওয়াটার এইড বাংলাদেশের পলিসি ও অ্যাডভোকেসি লিড ফায়েজ উদ্দিন আহমেদ। এছাড়া এনজিও ফোরামের কমিউনিকেশন হেড সাইফুল ইসলাম; উইন কনসালটেন্ট কাজী মুনিরসহ গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা লবি সভায় অংশগ্রহণ করেন এবং মুক্ত আলোচনায় ওয়াসার গ্রাহকসেবার কার্যক্রম বিষয়ে তাদের মতামত ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য এবং লবি সভা সঞ্চালনা করেন ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সুশাসন, অধিকার ও ন্যায্যতা কর্মসূচির উপ-পরিচালক কানিজ ফাতেমা। প্রকল্পের পক্ষে আলোচ্য বিষয় উপস্থাপন করেন উইন-ওয়াশ প্রকল্পের সমন্বয়কারী লিপি আমেনা।
আরও পড়ুন: দেশে ন্যায্য কর ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আহবান ওয়েভ ফাউন্ডেশনের
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মো. ফজলুর রহমান বলেন, আমাদের অনেক ভালো ভালো উদ্যোগ রয়েছে। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনার অভাবে আমরা এগুলোকে কার্যকর বাস্তবায়ন পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারছি না। ওয়াসার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরি করা হয়েছে কিন্তু এর পর কী করতে হবে তার কোনো পরিকল্পনা করা হয়নি। প্রয়োজনে কমিউনিটিকে এ দায়িত্ব হস্তান্তর করলে তারাই এগুলো চলমান এবং নিয়মিত মনিটর করতে পারবে। তবে আশার কথা আমাদের উন্নয়নের প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্র অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে আমরা পয়ঃনিস্কাশন খাতে ৭০ শতাংশ উন্নীত হতে পারব।
অধ্যাপক মাসফিকুস সালেহীন বলেন, খুলনা ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনে সুপেয় পানির অভাব প্রকল্পের গবেষণা ও সামাজিক নিরীক্ষার ফলাফলে উঠে এসেছে। আমাদের অনেক অর্জন। এ অর্জনগুলোকে বহুমুখী পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। ব্যক্তিগত পর্যায়েও উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ভৌগোলিক কারণে রাজশাহী ও খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকার অ্যাডভোকেসি ইস্যু আলাদা হবে। এ প্রক্রিয়ায় সমন্বয়হীনতা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে হবে। সেবা প্রদানকে সহজতর করতে হবে। একটি রেগুলেটরি কমিশন গঠনের ওপর জোর দেন তিনি। প্রকল্প বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা থেকে উপস্থাপনায় উল্লেখ করা হয়, ওয়াসার সেবা সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ বা মতামত জানানোর কোনো মাধ্যম রয়েছে কিনা তা অনেক গ্রাহকই জানেন না।
আরও পড়ুন: 'মানসম্মত শিক্ষা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে গণমাধ্যম'
অনুষ্ঠানের সভাপতি মহসিন আলী তার বক্তব্যে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের এতদিন পরেও অনেক সমস্যা নিয়ে আমাদের পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন খাতের চ্যালেঞ্জ ও সুশাসনের ঘাটতি নিয়ে আলোচনা করতে হচ্ছে। এ চ্যালেঞ্জ উত্তরণে প্রয়োজন স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং জনসম্পৃক্ততা।
প্রকল্পের অধীনে পরিচালিত গবেষণা ও সামাজিক নিরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা তাদের অসন্তুষ্টির কারণ হিসেবে বলেছেন, ওয়াসার সংযোগ পেতে দেরি বা হয়রানি, ময়লা পানি-খাবারের অযোগ্য; খাবার পানিতে ব্লিচিং পাউডারের গন্ধ থাকে; পানি লবণাক্ত; পানির বিল নিয়মিত দেয়া হয় না; পানির বিল বেশি বা পানির ভুয়া বিল; পানি সরবরাহ অনিয়মিত এবং নির্দিষ্ট সময় নেই; গ্রাহক সেবার মান উন্নয়নের উদ্যোগের অভাব ইত্যাদি। এছাড়া নাগরিকদের ওয়াসার সেবার মূল্য সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকা; পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সেবা প্রদানকারীদের সম্পর্কে অধিকাংশ নাগরিকদের ধারণার অভাব; নাগরিকদের জন্য ওয়াসার কার্যক্রম সম্পর্কে প্রচার-প্রচারণা কম থাকা এমনটিই উঠে আসে সামাজিক নিরীক্ষার ফলাফলে।
ওয়াসার কার্যক্রমকে জনমুখী করতে বেশ কিছু পরামর্শ পাওয়া গেছে সামাজিক নিরীক্ষায়। সেসবের মধ্যে রয়েছে— প্রচারণা বাড়ানো, জনবল বাড়ানো, ওয়াসার সেবাকে সহজলভ্য করা; পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সেবাগুলো সর্বসাধারণের নিকট পৌঁছে দেয়া; সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা এবং জনগণের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ইত্যাদি।