শহীদ মুগ্ধর কবর উত্তরার কামারপাড়ায়
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ PM , আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৬ PM
মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ ও মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ আলাদা ব্যক্তি, জমজ ভাই তারা। গত ১৮ জুলাই রাজধানী ঢাকার উত্তরার আজমপুর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছিলেন মুগ্ধ। পরে মুহুর্তের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয় মুগ্ধর হাতে সেই ‘পানি লাগবে পানি’র ভিডিও। এ ঘটনার একদিন পর ১৯ জুলাই উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের কামারপাড়া (বামনারটেক) কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
সম্প্রতি ‘মীর মুগ্ধ নামে কেউ মারা যায়নি’ কিংবা ‘মুগ্ধ ও স্নিগ্ধ একই ব্যক্তি’ দাবি করে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে। পরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পরিচালিত ফ্যাক্ট-চেকিং ফেসবুক পেজ (CA Press Wing Fact-Check) থেকে ছড়িয়ে পড়া এই দাবিটি ভুয়া বলে জানানো হয়। ফ্যাক্ট চেক প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানারও এই দাবিটিকে গুজব বলে নিশ্চিত করেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করতে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস কথা বলে বিগত চার বছর কবরস্থান পরিচালনার দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ জাবেদ আলীর সাথে। তিনি বলেন, ‘আমি অক্টোবরেই দায়িত্ব ছেড়েছি কবরস্থানের। আমি দায়িত্বে থাকাকালীন আন্দোলনে নিহত মুগ্ধকে ১৯ জুলাই (শুক্রবার) জুমার নামাজের পর দাফন করা হয়। সেদিন জয় নামের আরেকজনকেও দাফন করা হয় এখানে।’
CA Press Wing Fact-Check পেজ থেকে নেওয়া © সংগৃহীত
মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ ২০২৩ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তারপর তিনি গত মার্চে এমবিএতে ভর্তি হন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস বা বিইউপিতে। তার জমজ ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করছেন। বর্তমানে তিনি ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনের সময় হতাহতদের সহায়তায় গঠিত ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’- এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের পানি খাওয়াতে গিয়ে শহীদ হওয়া মুগ্ধর মৃত্যু নিয়ে সংশয় জানিয়ে ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্ট করা হয়। তার মধ্যে একটি পোস্টে দাবি করা হয়, ‘মুগ্ধ মারা যায়নি, মুগ্ধ নামে কেউ ছিলই না! মুগ্ধ ও স্নিগ্ধ দুই ভাই নয়, মুগ্ধই স্নিগ্ধ ছিল। মানুষ একজনই!’
সাপোর্টারস অব বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপের পোস্টে মুগ্ধের মৃত্যুর সত্যতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ লেখা হয়েছে, ‘মুগ্ধর ডেডবডির ছবি কেউ দেখে নাই, মুগ্ধর পোস্টমর্টেম রিপোর্ট, জানাজা, কবর কই?’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে নিহত মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধকে নিয়ে সম্প্রতি ছড়ানো এক গুজবের ব্যাপারে আবেগঘন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তার জমজ ভাই স্নিগ্ধ। গুজব ছড়ানোর আগে রটনাকারীদের নিজেদের ভাই-বোন-পরিবারের কথা চিন্তা করতে বলেছেন তিনি।
আরও পড়ুন: ‘মীর মুগ্ধ নামে কেউ মারা যায়নি’ কিংবা ‘মুগ্ধ ও স্নিগ্ধ একই ব্যক্তি’ দাবিটি গুজব
গত শনিবার (২৩ নভেম্বর) বেলা ১১টায় বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ‘শহীদ পরিবারের পাশে বাংলাদেশ’ কর্মসূচির আওতায় ৭৯ জন শহীদ পরিবারের সদস্যদের চেক বিতরণের জন্য আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তিনি।
স্নিগ্ধ বলেন, যারা আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন, তারা তাদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেছেন। কেউ তাদের কবর জিয়ারত করতে গিয়েছে কি না, কিংবা করতে যাচ্ছে কি না, এ কারণে তার আত্মত্যাগ কোনো অংশে কম হতে পারে না। তারা তাদের জীবন দিয়েছেন, এর থেকে বড় আত্মত্যাগ হতে পারে না। তাদের সম্মান সর্বোচ্চ থাকবে। বাংলাদেশের সরকারকেও নিশ্চিত করতে হবে যেন শহীদরা তাদের সম্মান ও তাদের পরিবার প্রাপ্য অধিকারটুকু পায়।
তিনি আরও বলেন, যারা গুজব ছড়াচ্ছেন তাদেরও পরিবার আছে, তাদেরও ভাই-বোন আছে। তাই নিজের ভাই-বোন, পরিবারের কথা চিন্তা করে গুজব ছড়াবেন। তাহলে হয়তো বুঝতে পারবেন, যাদের পরিবার নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছেন, তাদের ওপর দিয়ে কি যাচ্ছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত মুগ্ধের সঙ্গে তার জমজ ভাই স্নিগ্ধ। ছবি ফেসবুক থেকে নেওয়া
গুজব রটনাকারীদের বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারকে আহ্বান জানিয়ে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সিইও আরও বলেন, আমার ভাই শহীদ হয়েছে এটার জন্য যদি তার লাশের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করতে হয়, তাহলে সেটা আমার ভাইয়ের রক্তের সঙ্গে অসম্মান করা ছাড়া কিছুই হবে না। আমি বলব, যে সকল মানুষ আত্মত্যাগ করেছে, তাদের ত্যাগের মূল্য যদি না দিতে পারেন, তাহলে দয়া করে তাদের নিয়ে কথা বলবেন না।
জানা গেছে, মুগ্ধর গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তার জন্ম ১৯৯৮ সালে উত্তরায়। উত্তরার ইসলামিক এডুকেশন সোসাইটিতে প্রাথমিক এবং উত্তরা হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করেন। ২০১৯ সালে ভর্তি হন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে। লেখাপড়ার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং, ফুটবল খেলোয়াড়, গায়ক, গিটারিস্ট ও সংগঠক হিসেবে সুনাম ছিল তার। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান শিক্ষা সমাপনী-২০২৩-এর কনভেনর ছিলেন। ছিলেন স্কাউট গ্রুপের ইউনিট লিডার। শ্রেষ্ঠ সংগঠক হিসেবে বাংলাদেশ স্কাউটস থেকে ‘ন্যাশনাল সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছিলেন।