যে কারণে কুমিল্লায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাধিস্থল নির্মিত হয়েছিল
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৩ AM , আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৩ AM
কুমিল্লার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন ও ঐতিহাসিক স্থান ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি (যুদ্ধসমাধি)। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এই স্মৃতিস্মারক দেখতে প্রায় প্রতিদিন দেশ-বিদেশের নানা শ্রেণির মানুষ আসেন। কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের পশ্চিম পাশে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় অবস্থিত এটি। এখানে ১৯৪১ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ১৩টি দেশের ৭৩৮ জন সেনাকে সমাহিত করা হয়েছে।
কুমিল্লায় সরাসরি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয়নি। তাহলে সমাধিস্থল এখানে নির্মিত হয়েছিল কেন, এই প্রশ্ন অনেকের মনে ঘুরপাক খায়। ময়নামতিতে যুদ্ধসমাধি তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে আসছে কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভস কমিশন। প্রতিষ্ঠানটির কান্ট্রি ম্যানেজার মুফতাহুস সাত্তার জানান, 'দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ময়নামতিতে বড় একটি হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছিল। বার্মায় (বর্তমান মিয়ানমার) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আহত সৈনিকদের চিকিৎসার জন্য এ হাসপাতালে আনা হতো। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া সৈনিকদের সমাহিত করতে সমাধিস্থলের প্রয়োজন হয়। কাছেই সেনানিবাস, হাসপাতাল ও সৌন্দর্যের কারণেই ময়নামতির এই স্থানকে সমাধিস্থল হিসেবে বাছাই করা হয়।'
কুমিল্লার ইতিহাস–গবেষক আহসানুল কবীর বলেন, 'বিশ্বযুদ্ধের সময় কৌশলগত কারণে কুমিল্লা সেনানিবাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে ছিল। যুদ্ধসরঞ্জাম সরবরাহ, বিমানঘাঁটি ও ১৯৪৪ সালে ইম্ফলে স্থানান্তরিত হওয়ার আগে ফোরটিনথ আর্মির (চতুর্দশ সেনাবাহিনী) সদর দপ্তর ছিল কুমিল্লায়। জেনারেলদের গুরুত্বপূর্ণ সভাগুলো এখানে হতো। এ জন্য যুদ্ধাহত সৈনিকদের চিকিৎসার জন্য ময়নামতিতে নির্মিত হাসপাতালে আনা হতো। সেখানে মারা যাওয়া সৈনিকদের সমাহিত করতে ১৯৪৩-৪৪ সালে ময়নামতিতে যুদ্ধ সমাধিক্ষেত্র তৈরি করা হয়।'
উল্লেখ্য, ১৯৪১ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ১৩টি দেশের ৭৩৮ জন সেনাকে সমাহিত করা হয়। এর আগে ১৯৬২ সালে একজন সৈনিকের দেহাবশেষ তার স্বজনরা যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে গিয়েছিলেন। ফলে এখানে ৭৩৭ জন সৈনিকের দেহাবশেষ থেকে যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ২৪ জন জাপানি সৈনিকের দেহাবশেষ এখানে সমাহিত করা আছে। ৮১ বছর পর কুমিল্লার এই যুদ্ধসমাধি থেকে ২৪ জন সেনার দেহাবশেষ জাপানে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। ২৪ নভেম্বরের মধ্যে এই কার্যক্রম শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।