জানা গেল সলিমুল্লাহ মেডিকেলে লাঠি হাতে ঢুকে পড়া তরুণের পরিচয়
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:২৫ AM , আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৩৪ AM
গত রোববার সকালে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ক্লাস চলাকালে লেকচার গ্যালারিতে লাঠি হাতে ঢুকে পড়েন এক তরুণ। তাঁর মাথায় কালো কাপড় বাঁধা ছিল। তিনি চিৎকার করে কিছু বলছিলেন আর লাঠি দিয়ে মেঝেতে আঘাত করছিলেন। এতে ক্লাসের শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানালে পুলিশ আসার আগেই তিনি চলে যান। পরে এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
লাঠি হাতে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর কিশোরগঞ্জ থেকে তাঁকে আটক করে পুলিশ। পরে তাঁকে ঢাকায় নিয়ে যায় ঢাকার কোতোয়ালি থানা-পুলিশের একটি দল। তবে এই তরুণের পরিবার জানিয়েছে, শ্রেণিকক্ষে লাঠি হাতে ঢুকে পড়া তরুণের নাম জুবায়ের আলী (২০)। প্রায় ১০ বছর ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে জানিয়েছেন স্বজনেরা। পরিবারের দাবি, মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় তাঁকে ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখা হতো। ছেড়ে দিলেই তিনি দূরদূরান্তে চলে যেতেন। চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে তাঁর চিকিৎসা চলছিল।
জুবায়ের আলী কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার গাইটাল পাক্কার মাথা এলাকার সুলতান মিয়ার ছেলে। তবে পুলিশ এ বিষয়ে জানিয়েছে, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া পুলিশ কিছুই বলতে পারছে না।
জুবায়েরের স্বজনেরা জানান, ২০০৪ সালে জুবায়েরের জন্ম। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। জুবায়ের প্রথমে কিশোরগঞ্জ শহরের বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলের ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করেছেন। এরপর শহরের আইডিয়াল স্কুল থেকে এসএসসি ও ওয়ালী নেওয়াজ খান কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে এখন গুরুদয়াল সরকারি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষে পড়ছেন। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় তাঁর মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। চিকিৎসায় সুস্থ হলেও মাঝেমধ্যেই সমস্যা দেখা দিত। এ জন্য কলেজে ভর্তি হলেও ক্লাস করতে পারেননি। শুধু পরীক্ষা দিয়েছেন।
জুবায়েরের মা সুফিয়া আক্তার বলেন, নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় হঠাৎ একদিন তাঁর ছেলে ঘুম থেকে এক মেয়ের নাম বলে চিৎকার করে ওঠে। এর পর থেকেই সমস্যা। তবে ওই মেয়েকে তাঁরা কখনো দেখেননি। প্রায় ১০ বছর ধরে ছেলেকে নিয়ে ভুগছে পরিবার। জুবায়ের যখন পাগলামি করেন, তখন তাঁকে ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। রাজধানীর এক মানসিক চিকিৎসকের পরামর্শে ছেলেকে ঘর ছেড়ে দিয়েছিলেন। ওই চিকিৎসক বলেছিলেন, ছেড়ে দিয়ে রাখলে জুবায়ের একদিন সুস্থ হয়ে যাবেন।
সুফিয়া আক্তার বলেন, ঢাকায় সলিমুল্লাহ মেডিকেলের ঘটনার আগের দিন দুপুরের খাবার খেয়ে জুবায়ের বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। রাতে আর ফেরেননি। পরদিন তাঁর বড় ছেলে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি দেখান। ওই দিন রাতে ছেলে বাড়িতে ফিরে এলে ওই ঘটনা জিজ্ঞাসা করলে জানান, তিনি ওই মেয়েকে খুঁজতে গিয়েছিলেন। তাঁর দাবি, ‘আমার ছেলে পাগলামি রলেও কারও কোনো ক্ষতি করে না। গতকাল সোমবার বিকেলে পুলিশ ছেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ায় সে যে মানসিক রোগী, তার সব চিকিৎসাপত্র দেখিয়েছি।’
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, জুবায়েরের মানসিক সমস্যার বিষয়টি তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছেন। স্থানীয় খোকন মিয়া বলেন, জুবায়ের প্রায়ই বাসার গলিতে হাঁটাচলার সময় চিৎকার-চেঁচামেচি করেন। মসজিদে নামাজ পড়ার সময়ও মাঝেমধ্যে চিৎকার করে ওঠেন। জুবায়েরের মানসিক সমস্যার বিষয়টি এলাকার সবাই জানেন। একই মহল্লার মো. ইমনও একই ধরনের মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, মানসিক সমস্যার কারণেই হয়তো তিনি সলিমুল্লাহ মেডিকেলের শ্রেণিকক্ষে ঢুকেছেন।
গতকাল সন্ধ্যার আগে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার গাইটাল পাক্কার মাথা এলাকা থেকে জুবায়েরকে আটক করে পুলিশ। পরে রাতে কে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মামুন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ওসি আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, সলিমুল্লাহ মেডিকেলের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর ঢাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তারের নির্দেশনা আসে। ফুটেজ দেখে তাঁকে আটক করা হয়। পরে ঢাকার কোতোয়ালি থানা-পুলিশের একটি দল তাঁকে ঢাকায় নিয়ে যায়। পরিবারের বরাত দিয়ে ওসি বলেন, ‘আটক ব্যক্তির পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, তাঁর কিছুটা মানসিক সমস্যা আছে। তবে আমরা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কিছুই বলতে পারছি না।’