আবরার হত্যা : ৩২ মাসেও নিষ্পত্তি হয়নি আপিল
৩২ মাসেও নিষ্পত্তি হয়নি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে আবরারকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। আলোচিত এ হত্যা মামলায় ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। রায়ের পরপরই সাজার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন আসামিরা। রাষ্ট্রপক্ষেও আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স আবেদন করা হয়। ২০২২ সালের ২৬ জানুয়ারি আপিল শুনানির জন্য হাইকোর্টে নথিভুক্ত হয়েছিল।
রাষ্ট্রপক্ষ বলেছে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রুত নিষ্পত্তির বিষয়ে শিগগিরই উদ্যোগ নেওয়া হবে। এদিকে দীর্ঘদিনেও আপিল নিষ্পত্তি না হওয়ায় আবরারের পরিবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
আবরার হত্যাকাণ্ডের পরদিন রাজধানীর চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন তার বাবা বরকত উল্লাহ। একই বছরের ১৩ নভেম্বর ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করা হয়। এই হত্যা মামলায় ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর রায় দেন ঢাকার বিচারিক আদালত। রায়ে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আসামিদের মধ্যে তিনজন মামলার শুরু থেকেই পলাতক।
আরও পড়ুন : আওয়ামী লীগের শাসনামলে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী নির্যাতন ঢাবিতে : গবেষণা
হাইকোর্টে বর্তমানে ২০১৮ সালে নথিভুক্ত হয়েছে এমন ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আসামিপক্ষে করা আপিলের শুনানি চলছে। আবরার হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স এবং বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল ২০২২ সালের জানুয়ারিতে হাইকোর্টে নথিভুক্ত হয়। মামলার পেপারবুক তৈরি হলে আপিল শুনানির জন্য প্রস্তুত হবে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হাইকোর্টে আপিল শুনানির জন্য আরও আড়াই থেকে তিন বছর লাগতে পারে। তবে রাষ্ট্রপক্ষ চাইলে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে পেপারবুক তৈরির জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে ফাইল উপস্থাপন করতে পারবে।
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর অল্প কিছু দিন উচ্চ আদালতে স্বাভাবিক বিচারকাজ চলেছে। এখন হাইকোর্টে অবকাশকালীন ছুটি চলছে। ছুটির পর মামলার নথি পর্যালোচনা করে আপিল নিষ্পত্তির বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন : আবরার ফাহাদের স্মরণে পুনর্নির্মাণ হবে আগ্রাসন বিরোধী আট স্তম্ভ
বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ছিলেন আবরার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন। রুম থেকে ডেকে নিয়ে ওই রাতে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে বুয়েট ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপর রাত ৩টার দিকে হলের সিঁড়ির করিডোর থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। এ নিয়ে দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের তালিকায় আছেন বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার, সাহিত্য সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির, ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, উপসমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশারফ সকাল, সদস্য মুনতাসির আল জেমি, সদস্য মুজাহিদুর রহমান, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, এহতেশামুল রাব্বি তানিম, শামীম বিল্লাহ, মাজেদুল ইসলাম, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মাহমুদুল জিসান, এ এস এম নাজমুস সাদাত, মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম, মিজানুর রহমান, শামসুল আরেফিন রাফাত, উপদপ্তর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ এবং মাহামুদ সেতু।
যাবজ্জীবনের ৫ আসামি হলেন, বুয়েট ছাত্রলীগের সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না, আইনবিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা, সদস্য আকাশ হোসেন ও মোয়াজ আবু হোরায়রা। পলাতক তিন আসামি হলেন, এহতেশামুল রাব্বি তানিম, মাহমুদুল জিসান ও মুজতবা রাফিদ।
এদিকে হত্যা মামলার আপিল দ্রুত নিষ্পত্তির দাবি জানিয়েছেন রায় কার্যকরের অপেক্ষায় থাকা আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ। সরকার পরিবর্তন হওয়ায় আপিলটি দ্রুত নিষ্পত্তির বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে দেখা করবেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন তিনি।