অন্তর্বর্তী সরকারকে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির ১৩ প্রস্তাবনা
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:১০ PM , আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:১৪ PM
দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এবং সংকট নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকারের করণীয় নিয়ে ১৩টি প্রস্তাব দিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। শনিবার (৫ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটমণ্ডল মিলনায়তনে সংগঠনটির আয়োজনে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাস: পর্যালোচনা, প্রস্তাব ও মতবিনিময়’ শীর্ষক সভায় এসব প্রস্তাব জানায় তারা।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় সভায় সভাপ্রধান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন গবেষক মাহা মির্জা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা নিত্রা, সুফি দার্শনিক কাজী জাবের আহমেদ, চলচ্চিত্রকর্মী আকরাম খানসহ আরও অনেকেই।
সংগঠনটির পক্ষে প্রস্তাবগুলো পেশ করেন গবেষক মাহা মির্জা। এসময় তিনি জুলাই অভ্যুত্থানে আহত-নিহতদের তালিকা প্রকাশ করে তাদের পরিবারের দায়িত্ব নেওয়া, হত্যাকারীদের বিচার, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
অন্য দাবিগুলো হল- সংবিধান কমিশনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সংবিধানের রূপরেখা প্রকাশ করা এবং জনমতের ভিত্তিতে তা চূড়ান্ত করা; অবিলম্বে মব ভায়োলেন্স বা দলগত সহিংসতা, খুন, ভাঙচুর, ব্রাসসৃষ্টি; মন্দির, মাজার, মসজিদ, কবরস্থান, শিল্পকর্ম, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এবং বিভিন্নজনের বাড়ীঘরে হামলারোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং জড়িতদের বিচার করা; সাইবার সিকিউরিটি এ্যাক্ট, ৭৪ এর বিশেষ ক্ষমতা আইন ও শ্রমিক পরিষেবা বিলসহ মত প্রকাশের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী নিবর্তনমূলক সকল আইন বাতিল করা ও খাদ্যদ্রব্য, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও খাদ্যপণ্যের দাম কমাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
এছাড়াও শিল্প শ্রমিকদের ন্যূনতম জাতীয় মজুরী ঘোষণা, শ্রমিক হত্যার বিচার করা এবং শ্রমিকদের বকেয়া মজুরিসহ সকল ন্যায্য দাবি পূরণে মালিকদের বাধ্য করা; প্রকৃতি ও কৃষকবান্ধব কৃষি ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কমিশন গঠন করা; রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল চুক্তি নবায়ন না করার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন; শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি নয়, সন্ত্রাসী দখলদারী তৎপরতা বন্ধ করা,ছাত্র সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করা; স্বাস্থ্যরক্ষা ও চিকিৎসাকে সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা এবং পাবলিক হাসপাতালে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের কাজ শুরু করা; পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে সেনাশাসন প্রত্যাহারের রোডম্যাপ ঘোষণা; উত্তরাধিকার সূত্রে জমি-সম্পত্তিতে নারীদের সমানাধিকার নিশ্চিত করা; মানব পাচার ও প্রবাসে বাংলাদেশি নারী পুরুষের নিপীড়ন প্রতিরোধে বিশেষায়িত সেল গঠন করা; যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ইইউ, ভারতের সাথে স্বাক্ষরিত সকল চুক্তি প্রকাশ এবং জনস্বার্থবিরোধী চুক্তিগুলো বাতিলের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা।
সভায় আনু মোহাম্মদ বলেন, আমাদের ১৩টি দাবি অনেক দাবি মনে হতে পারে কিন্তু এগুলো আসলে অনেক বেশি কিছু নয়। সরকার যদি জনগণের দিকে ঘাড় ফেরান তাহলেই এই দাবি গুলোর বাস্তবায়ন সহজ। এসব বিষয়ের জন্য সরকারের অনেকগুলো মন্ত্রণালয় রয়েছে।
নিহত আহতের তালিকা তৈরীতে কালক্ষেপণের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারের এত সোর্স থাকার পরও আহত ও নিহতদের তালিকা বের করতে এত সময় কেন লাগছে! এটা এত কঠিক কিছু নয়। নিহতদের পরিবারকে কেবল এক লক্ষ টাকা ধরিয়ে না দিয়ে তাদের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।
দেশে বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘু ও ভিন্ন মতাদর্শের উপর হামলা লুটপাটের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার পতনের পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু ও ভিন্ন মতাদর্শের উপর যে হামলা হচ্ছে সেটা দমন করার বিষয়ে সরকারের কণ্ঠে জোর নেই। এই যে সময়গুলো চলে যাচ্ছে এটা দেশের জন্য বিপজ্জনক। এর ফলে সুবিধা হচ্ছে স্বৈরশাসকদের,ভারতের হিন্দুত্ববাদীদের। অনতিবিলম্বে এসব বন্ধে সরকারকে জোড়ালো পদক্ষেপ নিতে হবে।
ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতির নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। তবে ছাত্র সংসদ থাকতে হবে। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সংগঠন থাকবে সেটা রাজনৈতিক হতে হবে তেমন কথা নয়, সাংস্কৃতিক সংগঠন হিসেবেও থাকতে পারে তবে সংগঠন থাকতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ছয় মাস পূর্ণ হলে আবারও পর্যালোচনা, প্রস্তাব ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হবে বলে জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ২ মাস সময় ধরে আসলেও আন্দোলনে আহতদের সঠিক ও সুষ্ঠু চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেনি। এখনও প্রতিনিয়ত গণমাধ্যম আমরা আহতদের সুষ্ঠু চিকিৎসা না হওয়ার সংবাদ পাচ্ছি। এটি আন্দোলনের মূল যে কারিগর ছাত্র-জনতা তাদের প্রতি চরম অবহেলা। এসময় তিনি আহত, নিহতের পরিবার ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সঠিক পুনর্বাসন দাবি করেন।