চলমান বন্যায় বাংলাদেশের ২০ লাখ শিশু ঝুঁকিতে: ইউনিসেফ
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২৪, ০৪:০৬ PM , আপডেট: ৩০ আগস্ট ২০২৪, ০৪:০৬ PM
চলমান বন্যায় বাড়িঘর, স্কুল ও গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় দেশের পূর্বাঞ্চলের ২০ লাখেরও বেশি শিশু স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। স্মরণকালের ভয়াবহ এ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৫৬ লাখ মানুষ। শুক্রবার (৩০ আগস্ট) ইউনিসেফ বাংলাদেশ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নজিরবিহীন প্রবল মৌসুমি বৃষ্টিতে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলো উপচে পড়ছে। ফলে এখন পর্যন্ত ৫২ জনের বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের প্রায় পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ মাথা গোঁজার ঠাই খুঁজছেন। প্রবল বন্যার পানিতে বাড়িঘর, রাস্তা-ঘাট, মাঠ গেছে তলিয়ে। পরিবারসহ লাখো শিশু পানিবন্দি হয়ে আছে। তাদের কোনো খাবার নেই কিংবা নেই কোনো জরুরি ত্রাণসামগ্রী। সরকারি টিম ও স্বেচ্ছাসেবকেরা উদ্ধার-অভিযান চালিয়ে গেলেও কিছু কিছু এলাকায় সাহায্য পৌঁছানো বেশ দুরুহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অব্যাহত মৌসুমি বৃষ্টির কারণে আগামী দিনগুলোতে আরও বেশি মানুষের ক্ষতিগ্রস্ত হবার শঙ্কা রয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনিসেফ দুর্যোগ শুরু হওয়ার পর পরই বন্যাদুর্গত এলাকায় কাজ শুরু করে। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হাসান আরিফের সঙ্গেও প্রাথমিক যাচাইপর্ব চালায় ইউনিসেফ। অংশীজনদের সঙ্গে নিয়ে ইউনিসেফ বন্যার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার শিশুসহ তিন লাখ ৩৮ হাজারেরও বেশি মানুষের কাছে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা ৩৬ লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, পানি ধরে রাখতে ২৫ হাজার জেরিক্যান ও দুই লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি মুখে খাবার স্যালাইনের ব্যাগ বিতরণ করেছে। দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য এসব সহায়তা ছাড়াও জরুরিভিত্তিতে নগদ অর্থসহায়তা, নিরাপদ পানীয় জল, স্বাস্থ্যউপকরণ , জরুরি ল্যাট্রিন ও জীবন রক্ষাকারী ওষুধ দরকার।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের ডেপুটি রিপ্রেজেন্টেটিভ এমা ব্রিগহাম বলেছেন, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ভয়াবহ এই বন্যা শিশুদের ওপর চরম আবহাওয়াজনিত ঘটনা ও জলবায়ু সংকটের প্রভাবের ভয়াবহতাকে তুলে ধরেছে। অনেক শিশু তাদের প্রিয়জন, ঘর-বাড়ি ও বিদ্যালয় হারিয়েছে; তারা খুবই অসহায় হয়ে পড়েছে। বন্যার শুরু থেকেই ইউনিসেফ সক্রিয়ভাবে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও মুখে খাওয়ার স্যালাইনসহ জরুরি সেবাসামগ্রী সরবরাহ করে আসছে। কিন্তু সব শিশুর কাছে পৌঁছাতে ও চলমান এই সংকটের ধ্বংস্বাত্মত প্রভাব রোধে আরও তহবিলের দরকার।
সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া বন্যা, উত্তরাঞ্চলের বন্যা ও মে মাসের ঘূর্ণিঝড় রেমালের মতো দুর্যোগ নিকটতম সময়ে সংঘটিত হয়েছে। এসব দুর্যেোগে সব মিলিয়ে ৫০ লাখ শিশুসহ পুরো বাংলাদেশে এক কোটি ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দুর্যেোগে জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় তাৎক্ষণিক সাড়া প্রদান কর্মসূচির অংশ হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত শিশু, গর্ভবতী নারী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য জরুরি, জীবন রক্ষাকারী ও মাল্টিসেক্টরাল কার্যক্রম পরিচালনায় ইউনিসেফের ৩৫ দশমিক ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দরকার।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও অন্যান্য আবহাওয়াজনিত ঘটনাপ্রবাহের তীব্রতা অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি করেছে, যা বাংলাদেশকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ইউনিসেফের শিশুদের জন্য জলবায়ু ঝুঁকি সূচক অনুযায়ী, বাংলাদেশের শিশুরা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি জলবায়ু ও পরিবেশগত ঝুঁকির শিকার।